রুম নম্বর ২০৯ | সিজনঃ ১ | পর্বঃ ১০
চিরকুট হাতে নিয়ে শেফা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।শুধু মাত্র লিরার জন্য কথা’কে মরতে হলো।লিরাকে কিছুতেই ক্ষমা করব না।ওর পাপের শাস্তি আমি ওকে দেবোই।চোখের জলে শেফার গাল ভিজে গেছে।একটি ঠান্ডা ধমকা হাওয়া জানালার পর্দা ভেদ করে শেফার চুল ছুয়ে দিলো।শেফা চোখ তুলে তাকালো জানালার দিকে।শুভ্র সাদা পবিত্র কিছু ধোয়া একত্র হয়ে শূন্যে ভাসমান অবস্থায় কথা’র প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো।কথার হাসোজ্জ্বল মুখটা দেখে শেফা দৌড়ে গেলো কথা’র কাছে।কথা’র ধোয়াটে শরীরের মুখে হাত বুলালো।কিন্তু স্পর্শ করতে পারল না, স্বচ্ছ কাচেঁর মতো শরীর।কথা সমুধুর কন্ঠে বলল,
“তুই কোন চিন্তা করিস না।অশুভের বিনাশ যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে, এবারো হবে।আমি সব সময় তোর পাশে থাকব।”
শেফা কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,
“কিন্তু তোকে ছাড়া আমি থাকব কি করে?”
কথা মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“সবাই কে একদিন মরতে হবে এটাই চির সত্যি।”
রুম নম্বর ২০৯ | সিজনঃ ১ | পর্বঃ ১০
শেফা বলল,
“তাই বলে আমার আগে চলে যাবি?”
কথা বড় একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমারো খুব কষ্ট হয়।ইচ্ছে করে তোর কাছে চলে যাই, আবার আমার দুই চোখে এ সুন্দর জগৎ টাকে দেখি।”
শেফা ফুপিয়ে ফুপয়ে কান্না করে দিলো।
কথা শেফার মাথায় হাত বুলালো মায়া মমতা বুকে ধারন করে।তারপর বলল,
“আমাকে কথা দে তুই লিরার আত্মাকে দূর করবি এই হোস্টেল থেকে।
শেফা বলল,
“আমি তো নিজেই মানুষ কে হত্যা করছি আমি কিভাবে সরাবো লিরা’কে।”
ক’থা বলল,
“তুই কোন চিন্তা করিস না, আমি সব সময় তোর সাথেই আছি।”
রুম নম্বর ২০৯ | সিজনঃ ১ | পর্বঃ ১০
শেফা কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,
“সব সময় পাশে থাকিস! আমার যে একা একা খুব খারাপ লাগবে নাহলে।”
ক’থা শেফাকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে শূন্যে মিলিয়ে গেলো।
আবার শেফা সেই একা হয়ে গেলো।
কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান করার পদক্ষেপ নিয়েছে কলেজ কতৃপক্ষ।এই অনুষ্ঠানে সব বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং আমন্ত্রিত অতিথীরাও আসবে। রুম নম্বর ২০৯
এই অনুষ্ঠান অনেক বড় করে করা হবে এবং অনেক বড় বাজেট ধরে।পুরো কলেজ সাজানো হবে উচ্চমানের ডেকারেশন দিয়ে।তিন দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের জন্য দুইজন বড় সেলিব্রেটি কে আমন্ত্রন করা হয়েছে। রুম নম্বর ২০৯
শেফা কে রুমে পাঠানো হয়েছে।শেফার শাররীক অবস্থা খুবই খারাপ, শুকিয়ে গেছে অনেক।আর চিন্তায় চিন্তায় মানসিক অবস্থাও শোচনীয়। রুম নম্বর ২০৯
শেফা আগের মত আর নেই।চুপচাপ থাকে সব সময়।শেফা কারো সাথে মিশে না।হোস্টেলে কথা’র মার্ডার নিয়ে বেশ চাপা গুঞ্জন চলছে।মেয়েরা ভয় ও পাচ্ছে।একা একা কেউ কোথাও যাচ্ছে না, গেলে দল বেধে যায়।আর হোস্টেলে মেয়েরা এমনি একটু বেশীই ভয় পায়।কোন এক অজানা কারণে হোস্টেল কে মেয়েরা আজীবন ভূতের আড্ডা খানাই মনে করে। রুম নম্বর ২০৯
শেফা ভর দুপুর বেলা জানালা খোলে বসে আছে।দৃষ্টি তার দূর দিগন্তে।চিন্তার অতল গহ্বরে ডুবে আছে।শেফার কাধে কেউ যেনো হাত রাখল।আকস্মিক এমন স্পর্শে চমকালো কিঞ্চিত।ঝট করে পেছনে তাকালো।নুরজাহান দাঁড়িয়ে আছে শেফার পেছনে।নুরজাহান কে দেখে শেফা একটু অবাকই হলো। রুম নম্বর ২০৯
যদিও নুরজাহান এই রুমের ই একজন।তবুও শেফার সাথে নুরজাহানের তেমন একটা কথা হয় না।তাই অবাক হয়েছে।
নুরজাহান শেফার পাশে বসল।শেফা পূনরায় জানালার অদূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
নুরজাহান বলল,
“হাই শেফা আমি নুরজাহান কিন্তু সবাই আমাকে সংক্ষেপ্তে নুরি বলেই ডাকে।”
শেফা দৃষ্টি না সরিয়েই বলল,
“আমি চিনি তোমাকে।”
নুরি হেসে বলল,
“তবে তো ভালোই।আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি না? রুম নম্বর ২০৯
নুরির কথাতে শেফা দ্রুত নুরির দিকে তাকালো।নুরি আবার বলল,
“আমি সব সময় তোমাকে একা এবং বেশ চুপচাপ থাকতে দেখি আমার খুব খারাপ লাগে।আর থাকবেই বা না কেনো!আমিও তো বোঝতে পারি তোমার মনের অবস্থা।সব থেকে ভালো বন্ধু কে তুমি হাড়িয়ে ফেলেছো। রুম নম্বর ২০৯
তোমার এই বিপদের সময় আমি তোমার একজন ভালো বন্ধু হয়ে তোমাকে সঙ্গ দিতে চাই।”
শেফা কিছু একটা ভাবল তারপর জবাব দিলো,
“আমি একাই বেশ ভালো আছি আমার আর কোন বন্ধু লাগবে না।”
নুরি বলল,
“একা একা কেউ থাকতে পারে না।একা থাকা খুব কষ্টের, জীবনের এই সময়টাতে তোমার একজন ভালো বন্ধু প্রয়োজন।তাই আমি তোমার মন খারাপের সঙ্গি হতে চাই।” রুম নম্বর ২০৯
শেফা বিরক্ত হয়ে বলল,
“মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করো না তো আমার বিরক্ত লাগছে।আমি বলছি তো আমার কোন বন্ধুর দরকার নেই।”
নুরি শেফার দিকে তাকালো, অতি বিরক্তিবোধের কারণে শেফার ভ্রু কুচকে আছে।নুরি আর কিছু না বলে শুধু বলল,
“আচ্ছা।যদি কখনো তোমার কোন কারণে আমাকে প্রয়োজন পড়ে তবে আমায় ডেকো।” রুম নম্বর ২০৯
কথাটি বলেই খুব দ্রুত প্রস্থান করল নুরি।নুরির চলে যাওয়ার পর শেফার একটু খারাপ লাগল, কিন্তু উপায় ছিলো না।শেফা আর কাউকেই জড়াতে চায় না এই অভিশপ্ত অধ্যয়ের সাথে। রুম নম্বর ২০৯
কলেজের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু টাকা চাঁদা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।আর যারা রেজিস্ট্রেশন করবে শুধু তারাই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
অনেকেই রেজিস্ট্রেশন করলো আবার অনেকেই করলো না।যার যার ইচ্ছে, শেফাও ইচ্ছে করেই রেজিস্ট্রেশন করলো।
শেফা জানালা খোলে শোয়ে আছে।ভয় ডর আপাতত চলে গেছে ওর মন থেকে।শেফা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে দুরের আকাশটাতে, আকাশ টা আজ ভীষন মেঘলা, মনে হচ্ছে আকাশের খুব মন খারাপ ঠিক শেফার মতোই।
আকাশের ঠিক মাঝ খানে থালার মত রুপালী চাঁদ উঠেছে।চাঁদ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে।একবার মেঘের আড়ালে লোকাচ্ছে আবার দৃশ্যমান হচ্ছে।শেফা চুপচাপ মেঘ আর চাঁদের এই লুকোচুরি খেলা দেখছে।একটি শীতল বাতাস শেফার শরীরে এসে লাগল।শেফার ধ্যান ভেঙ্গে গেলো। রুম নম্বর ২০৯
শশানটা কুৎসিত কালো দেখাচ্ছে।যেন সকল ঝড় বৃষ্টি ওখানে আধার ঘনিয়ে এনেছে।শেফা এমন অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করে তাড়াতাড়ি করে স্বশব্দে জানালার কপাট বন্ধ করে দিলো।কেমন যেনো শীত শীত অনুভূত হচ্ছে শেফার।কাথাঁটা শরীরে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করলো।ঘুমিয়ে গেছে প্রায়, তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ দুটো কাউকে দেখতে পেলো শেফার পাশে।চোখ দুটোকে টেনে খোলল।শেফার পাশে কেউ একজন শোয়ে আছে। রুম নম্বর ২০৯
শেফা তারপাশে কাউকে শোয়া অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলো।কে থাকতে পারে।শেফা মানুষটির কাধে হাত রাখল তারপর ডাক দিয়ে বলল,
“কে তুমি?
মানুষটি শেফার কথায় ঘুরে তাকালো।শেফার তন্দ্রাছন্ন চোখ জোড়ায় যত ঘুম ছিলো সব কেটে গেলো এক নিমিষে।ভয় আর আতংকে উঠে বসলো শেফা। রুম নম্বর ২০৯
শেফার পাশে একটি মেয়ে শোয়ে আছে।মেয়েটির চোখ উপড়ে ফেলেছে যেনো কেউ।সেই উপড়ে ফেলা চোখের মনি দিয়ে কালচে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।মুখের এক পাশ থেতলে গেছে।শেফা সরে গিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।
মেয়েটি ধীরে ধীরে উঠে বসল।তারপর অদ্ভুত মোটা গলায় বলল,
“আমি কি করে মারা গেছি জানিস?
কথাটি বলে মেয়েটি শেফার টেবিল থেকে একটি কলম এনে নিজের চোখ বরাবর সর্বশক্তি দিয়ে বিদ্ধ করল।কলমের মুখ মেয়েটির চোখের মনি ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করল।চোখটা ছিটকে এসে গড়িয়ে পড়ল শেফার পায়ের কাছে।
চোখের সামনে এমন বিভৎস ঘটনা দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল শেফা। রুম নম্বর ২০৯
শেফার ভীতিপূর্ণ চেহেরা দেখে মেয়েটি হা হা করে হেসে উঠলো।শেফা চোখ বন্ধ করেই আছে।
কতক্ষন বন্ধ করে আছে বলতে পারবে না।বুকের ভেতর হৃদপিন্ডটা বাজছে ঢিব ঢিব ঢিব….
সবকিছু নিরব, শেফা চোখ খোলল ধীরে ধীরে।সামনে কেউ নেই।সব কিছু শান্ত হয়ে আছে।শেফা কিছুক্ষন আগে যে মেয়েটিকে দেখেছিলো তাকে না পেয়ে ভীতিপূর্ণ মনে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল টেবিলের পানে।টেবিলে রাখা কলমটা ঠিক জায়গাতেই আছে।দেখে মনে হচ্ছে না কেউ এই কলম দিয়ে চোখের মনি উপড়ে ফেলেছে একটু আগে।শেফা ভয়ে ভয়ে কলমটি হাতে নিলো।কলমটা রাখবে এমন সময় কলম টা কিছুতেই রাখতে পারছে না।শেফার হাতের কলমটির মুখ খোলা, কলমটি শেফার চোখের দিকে এগোচ্ছে।শেফা শত চেষ্টা করেও নিজের হাতের উপর কোন নিয়ন্ত্রন আনতে পারছে না।মনে হচ্ছে কেউ শেফার হাত কে চালাচ্ছে শেফার চোখ উপড়ে ফেলার জন্য।শেফা প্রানপনে চেষ্টা করছে নিজের হাতের উপর নিয়ন্ত্রন আনতে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।খোলা কলমের মুখ শেফার চোখ এর খুব কাছে এসে গেছে।কে বাঁচাবে এখন শেফাকে। রুম নম্বর ২০৯
এমন সময় কথা’র আত্মা এখানে এলো, শেফার এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে শেফার হাতে স্পর্শ করল।
শুভ শক্তির স্পর্শে অশুভ শক্তির পরাজয় হলো।কেউ একজন তার এই প্ল্যান ভেঙ্গে যাওয়াতে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে লাগলো।
শেফা একটুর জন্য বেচে গেলো।কথা শেফা কে একটু সুস্থির হওয়ার সুযোগ দিলো।তারপর বলল,
“তুই এটা কি করতে যাচ্ছিলি?
শেফা বলল,
“আমি জানি না আমার কি হয়েছিলো আমি আমার নিজের হাতের উপর কোন নিয়ন্ত্রন ই আনতে পারছিলাম না।মনে হচ্ছিলো আমার হয়ে কেউ আমার হাতটি কে চালাচ্ছিলো।”
কথা বলল,
“হুম বোঝেছি।তুই যাদের মেরেছিলি তাদের মাঝে কেউ একজন হবে।”
শেফা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।চোখের জল টুপটাপ করে পড়ছে।শেফা বলল,
“আমি আর কত এভাবে বাচঁব?আমি যে আর পারছি না।আর কত?
আর কতদিন এভাবে বাচঁব?”
কথা শেফা কে শান্তনা দিয়ে বলল,
“খুব তাড়াতাড়ি এই রহস্যের সমাধান করব আমরা।আসছে অনুষ্ঠানে মিসেস সোনাল অবশ্যই আসবে কলেজে।তখন আমরা তার কাছ থেকে সব কিছুর রহস্য উদঘাটন করব।”
কথাগুলো একটি কালো ছায়া শোনল খুব মনোযোগ সহকারে।তারপর ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
.
.
চলবে….
রুম নম্বর ২০৯ | সিজনঃ ১ | পর্বঃ ৯
লিখেছেনঃ রাহিমা নিশাত নিঝুম