দেয়াল – হুমায়ূন আহমেদের শেষ উপন্যাসের বিশ্লেষণ
ভাদ্র মাসের সন্ধ্যায়, আকাশে লালচে রঙের মেঘ, যা কখনও বৃষ্টি নিয়ে আসে না তবে দেখায় অপূর্ব। এভাবেই সূচনা হয় হুমায়ূন আহমেদের চমকপ্রদ উপন্যাস “দেয়াল”। লেখক, যার প্রতিটি সৃষ্টি পাঠকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে, এই উপন্যাসে স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছেন।
২০১১ সালের মাঝামাঝিতে উপন্যাসটি রচনা শুরু করেন। উপন্যাসটি প্রথমে পাঁচটি পর্বে “অন্যদিন” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর লেখকের ক্যান্সার চিকিৎসা চলাকালে উপন্যাসটির চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
এক সদ্যস্বাধীন জাতির টানাপোড়েনের গল্প
উপন্যাসের সূচনা-অনুচ্ছেদে আকাশের রঙ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তহীনতা যেন দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে প্রতিফলিত করে। কিছু চরিত্র বাস্তব থেকে নেওয়া, আবার কিছু কাল্পনিক। লেখক, একদিকে ইতিহাসের সত্যকে তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে চরিত্রগুলির জীবন-সৌন্দর্য ও জীবনের সত্যের সন্ধান করেছেন।
উপন্যাসে দুটি প্রধান আখ্যান রয়েছে। প্রথমটি অবন্তি নামে এক চপলমতি মেয়ের কাহিনি, যাকে ঘিরে পরিবার ও সমাজের নানা দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে। আর দ্বিতীয় আখ্যানটি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ অধ্যায় – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং এর পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলী।
চরিত্র বিশ্লেষণ এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর চরিত্রায়ণ। অবন্তি চরিত্রটি যেন একটি স্বাধীনচেতা নারীপ্রতিমূর্তি, যা তার সময়ের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। অন্যদিকে, মেজর ফারুক এবং কর্নেল তাহেরের মতো চরিত্রগুলি ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির সাথে গভীরভাবে যুক্ত।
লেখক তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে পাঠকদের নিয়ে গেছেন এক অজানা, অথচ কৌতূহলোদ্দীপক যাত্রায়। উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায় যেন একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
অনন্য এক উপন্যাস
“দেয়াল” কেবল একটি উপন্যাস নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী। ইতিহাসের সত্য এবং লেখকের সৃজনী ভাবনার মিশ্রণে এই উপন্যাসটি পরিণত হয়েছে একটি হৃদয়গ্রাহী উপাখ্যানে।
তাঁর জীবনের শেষ উপন্যাসে, পাঠকদের এমন এক গল্প উপহার দিয়েছেন যা তাদের মনে চিরকাল থেকে যাবে। উপন্যাসটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এটি নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন।
এক কিংবদন্তির গল্প
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তি। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি পাঠকের মনে গভীর দাগ কেটেছে। তাঁর সাহিত্যিক জীবনে তিনি একাধিক সফল উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছেন, যা বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপসংহার
দেয়াল – হুমায়ূন আহমেদের একটি অমর সৃষ্টি, যা পাঠকদের মন জয় করে নিয়েছে।