ভর দুপুর বেলা শুয়ে আছি গালিবের রুমে। তরীর চিন্তায় মাথা নষ্ট হবার জোগাড়। কিভাবে বিয়েটা আটকানো যায় সেটাই ভাবছি। এখন সব প্লেন বাধ দিয়ে হলেও তরীর বিয়েটা আটকানোর চিন্তা করতে হবে।
তরীর প্রতি এমন ভিন্ন আচরনের জন্য বাড়ির প্রতিটা সদস্যকে কঠিন জবাব দিতে হবে। চিন্তা করতে করতে এক সময় চোখ দুটি লেগে আসলো। হাড়িয়ে গেলাম গভির ঘুমে।
**
শ্রাবনের মেঘাচ্ছন্ন বিকেল, মেঘা ছাঁদে বসে বৃষ্টির অপেক্ষা করছে,আমি গেইটের দরজার পাশে দেয়ালটার সাথে হেলান দিয়ে ওর রূপের মাধুর্যে হাড়িয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ শুরু হলো মুসলধারে বৃষ্টি। মেঘার মুখে অট্ট হাসি। চোখ বুঝে দু হাত প্রসারিত করে বৃষ্টির পানির স্পর্শ অনুভব করছে। ওর লম্বা চুল গুলো ভিজে একদম একাকার।নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি৷ হাঁটি হাঁটি পা পা করে গিয়ে মেঘাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম। আমার স্পর্শ পেয়ে মেঘা আমাকে ছাড়িয়ে লজ্জায় দৌড় দিলো। বাড়ির ছাঁদ ছিলো পুরনো, দেয়াল ছিলো ভাঙা।এক পাশের অংশ বিলীন হয়েছে বহু আগে। মেঘা নিজেকে সামালাতে পারেনি। শ্যাওলাতে পিচ্ছিল খেয়ে একদম ছাঁদ থেকে পড়ে গেলো।
আমি মেঘা বলে একটা চিৎকার মেরে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। পুরো শরীর এখনো কাঁপছে। মনে হচ্ছে এটা বুঝি বাস্তবে এখনি ঘটলো আমার সাথে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। যাক কেউ টের পায়নি। কিন্তু স্বপ্নের ব্যাখ্যাটা বুঝতে পারছি না। মেঘার সাথে তো তেমন কিছু হয়নি আমার,তাহলে এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম?অবশ্য বিজ্ঞান বলে এগুলো সব মস্তিষ্কের কাজ।তবে এই স্বপ্নটা মস্তিষ্কের কাজ ভাবাটা আমার হবে সব থেকে বোকামি। নিশ্চিয়ই এর দ্বারা আমাকে কোনো ইঙ্গিত প্রধান করা হয়েছে। এর উত্তর শুধু আনাস দিতে পারবে।
ফ্রেস হয়ে এসে আনাসকে ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন উঠাচ্ছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আসরের নামাজের সময় এখন। নিশ্চয়ই আনাস মসজিদে আছে। পড়ে দেখি ট্রাই করে।
রুম থেকে বের হয়ে বাহিরে চলে আসলাম। স্বপ্নটা দেখার পর থেকে নিজের মনের মাঝে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে।। হঠাৎ মোবাইলের নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব দেওয়া শুরু করলো,3g নেটও সঠিক ভাবে পাচ্ছে না। এদিকে আনাসের থেকে স্বপ্নটার ব্যাখ্যা জানার জন্য মনটা কেমন বেকুল হয়ে আছে। মোবাইলের নেটওয়ার্ক খুঁজতে খুঁজতে এসে পড়লাম বাড়ির দক্ষিণ দিকের দেয়ালের কাছে। অনেক সুন্দর সুন্দর বৃক্ষ রোপন করা। গাছ গুলোর দূরত্ব বেশি না হওয়ায় যায়গাটা একটু ঝোপঝাড়ের মতো লাগছে। একটু দূরে দেখলাম।মারজানা বেগম ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। কথা গুলো শুনা আমার জরুরি। প্রতিটা জিনিস আমাকে খুঁটিয়ে দেখতে হবে।হাল ছাড়লে চলবে না।
জবা ফুলগাছটার আড়ালে যাওয়া যাক । অনেকটা যায়গা আচ্ছন্ন।সাইজে বেশ বড়। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম ঝোপের আড়ালে। শুধু মাত্র এইটুকু কথা শুনলাম,
–আমার ছেলেকে পেয়েছি এটাই আমার কাছে যথেষ্ট। সে যা বলবে তাই হবে। নেক্সট টাইম আর এই বিষয়টা নিয়ে কোনো প্রকার কন্ট্রাক করবেন না আমার সাথে।
মারজান বেগম চলে গেলো।আমি ঝোপ থেকে বের হয়ে আসলাম।এখানেও রহস্য। কি হতে পারে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করছি। মোবাইল বেজে উঠলো।
আনাস ফোন দিচ্ছে। ফোনটা রিসিভ করলাম,
–হ্যালো?
–হুমম, কেমন আছিস?
–ভালো।কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?
–আরে বলিস না,একজন প্রেসেন্ট এসেছিলো।কি সব উদ্ভট কথা বলে।তার মাঝে নাকি মমির আত্মা প্রবেশ করেছে।আবার সে প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় কথা বলছে মাঝে মাঝে।
–সত্যি তো হতে পারে। প্রাচীন মিশরীয় ভাষা সহজ নয়।
–তুই একজন আর্কিটেক্চার তুই কি বুঝবি সাইকোলজিক্যাল প্রভলেম।
–আচ্ছা এর ব্যাখ্যাটা কি বলতো?
–শুন, মানুষ যখন কোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে, তখন সেটা তার মস্তিস্কে বেঁধে যায়। সে এটা নিয়ে ভিবিন্ন উদ্ভট চিন্তাভাবনা করে। এক সময় যখন তার লিমিট ক্রশ করে ফেলে তখন সে মানুষীক রুগী হয়ে যায়। তার মস্তিষ্কে শুধু সেই চিন্তা গুলো সেইভ হয়ে যায়।এই জন্য বার বার সে শুধু এই কথা গুলো বলে। রাস্তাঘাটে যে পাগল গুলো আছে দেখবি এক জনের পাগলামির স্টাইল অন্য জনের সাথে মিলে না। তার আচরণ যেরকম লক্ষ করবি মনে করবি সে এক সময় এই বিষয়টা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতো। তবে বংশগত হলে ভিন্ন কথা।
–তাহলে সে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা কিভাবে বলছে?
–ঐ যে সে প্রাচিন মিশর নিয়ে সম্ভবত কৌতূহলী ছিলো। সে জন্য সে মিশরের ইতিহাস বেশি পড়েছে।এবং সখের বসে ভাষাগুলোও রপ্ত করতে চেয়েছিলো। এক সময় বিষয়টা অতিরিক্ত হয়ে যায়,বেস এই টুকুই।
–তাহলে এর চিকিৎসা কি?
–মানুষিক হসপিটাল। কিছুদিন থাকলেই এর প্রভাব কেটে যাবে।
–ভাবছিলাম তোকে সদ্য দেখা একটা স্বপ্নের কথা বলবো।তোর চিকিৎসা পদ্ধতি পছন্দ হচ্ছে না।
–আচ্ছা তোর জন্য ভিন্ন চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
–শুন আমি একটু আগে ঘুমিয়ে ছিলাম স্বপ্নে দেখলাম-( মেঘার পরিচয়টা সংক্ষেপে বলে স্বপ্নটা বললাম)
–তোর কাছে কি এই স্বপ্নের কোনো ব্যাখ্যা আছে?
— বেশি নেই কয়েক’শ ব্যাখ্যা হবে মাত্র।
— আমি সিরিয়াস ম্যান।
–তুই মেঘাকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করছিস এই জন্য। সমস্যা নেই আমি একটু ব্যস্ত আছি সময় মতো পৌঁছে যাবো। তোর যত সমস্যা আছে দেখবো।
–আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা কোনো প্যারানোরমাল ঘটনা।
–আচ্ছা আমাকে দুইদিন সময় দে। আমি ভালো ভাবে খতিয়ে দেখছি এর কোনো বিশেষ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কি না।
–ওকে।
গালিবের সাথে উঠুনে একটা সাইডে বসে আছি। একটা উপায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
–গালিব?
–হুমম।
–তোর ফুপির পার্সোনাল কোনো এসিস্ট্যান্ট নেই?
–আছে তো? দেখিস না ফুপির পিছনে প্রায় সময় দুজন ঘুরে।
–দু বছর আগে কি তারাই ছিলো?
–না। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা ছিলো।আর একজন পুরুষ ছিলো। আচমকা একদিনেই দুজনকে ফুপি চাকরি থেকে বহিষ্কার করে দেয়।।
–কত বছর আগে?
–দু বছর।
— মানে আব্বুর মৃত্যুও দু বছর আগেই হয়েছিলো। মনে করে দেখতো আব্বুর মৃত্যুর পর চাকরি থেকে তাদের বহিষ্কার করেছে নাকি মৃত্যুর আগে?
–সম্ভবত ফুফার মৃত্যুর পর।
–আচ্ছা তাদের কাজটা কি ছিলো?
–মহিলাটা সব সময় ফুপির সব কর্মকান্ডের নোট করতো।মনে কর আজকে কোথায় যাবে,তিনদিন পর এই সময়ে তার কাজ কি? কোথায় কোনোদিন কোন সময় ফুপির কি কাজ সেগুলো লিপিবদ্ধ করতো।
–পেয়েছি।
— কি পেয়েছিস?
–সময় হলে বুঝবি, আচ্ছা তুই কি সেই মহিলা বা পুরুষটার বাড়ির ঠিকানা জানিস?
–সঠিক মনে আসছে না।ও হ্যা, একদিন মহিলাটার বাড়িতে কি জরুরি কাজ পড়ে, ফুপি আমাকে বলে তাকে তার বাসায় পৌঁছে দিতে।
–ঠিকানা মনে আছে?
–হুমম। একটু একটু।
–আনাস আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
–আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।
–কিসের?
–চাকরি থেকে বহিষ্কারের পর সেই লোকটাকেও আর কোনোদিন দেখিনি,আর মহিলাটাকেও না।
–এটাতো বিরাট সমস্যা। আচ্ছা আনাসকে বললে কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয়ই করবে।
–কিসের উপায়?
–তোকে জানিয়ে কাজ নেই। তোর উপরও আমার বিশ্বাস নেই।।
–এতোক্ষণে মনে হলো আমার উপর বিশ্বাস নেই তোর?
–হুমম। তুই শুধু আমাদের সাথে থাকবি। তোর এতোকিছু জেনে কাজ নেই।
–ওকে।
একটুপর
–মেঘ,,,,
–আবার কি?
–দেখ প্রমার সাথে কে এটা?
মেঘাকে দেখে অনেকটা থমকে গেলাম।এদিকেই আসছে।
–গালিব চল,
–মনে হচ্ছে ওরা এদিকে আসছে, বিশেষ কিছু বলবে হয়তো।
–আরে প্রমার সাথে মেয়েটাই আমাকে ২ ঘন্টা বসিয়ে রেখেছিলো।
–এটাই কি সেই মেয়েটা?
–হুম।।
–তুই বেশ অদ্ভুত রে।
–কেন?
–ভার্সিটিতে যখন এলিসা তোর পিছনে পিছনে ঘুরতো তুই পাত্তাই দিতি না।পুরো কেম্পাস জুড়ে সে ছিলো ক্রাশ আইকন।আর তুই এখানে এসে একটা শ্যামলা মেয়েকে পছন্দ করে বসলি।
–শুন, এলিসা ছিলো ইন্ডিয়ান গার্ল। ধর্ম ছিলো শিখ।মনে ছিলো হিংসা। আর আমার মন মেজাজ কেমন তুই ভালোই বুঝিস।
–তাহলে এই মেয়ের বেলায় তোর আগের আচরণ কোথায় হাড়ায়?
–এতো প্রশ্ন করিস না।তুই কি এলিসার এজেন্ট নাকি?
–তোর কাছে তো এটাই মনে হবে।
আমাদের কথার মধ্যদিয়েই দুজন এসে উপস্থিত হলো। আমি মেঘাকে দেখে উঠে দাড়ালাম।প্রচন্ড রাগ ওর প্রতি।
গালিব হালকা কাশি দিয়ে বললো,
–এ্যাহেম,এ্যাহেম, এই প্রমা তোর সাথে কিছু কথা আছে একটু অন্যদিকে চল।
আমি হাত গুটিয়ে মেঘার বিপরীত মুখী হয়ে দাড়িয়ে আছি। মেঘা বললো,
–হিসেবে টাকা আপনার কাছ থেকে পাই।
–কিভাবে?
–এই যে পাঁচ হাজার টাকা,,,
–ওয়েট,পাঁচ হাজার না। সাত হাজার।
–আবার বেড়েছে! আচ্ছা যাই হোক,
৫০০ টাকার আপনি টিকিক কেটেছেন, টাকাটা”তো আমার দেওয়ার কথা ছিলো,তাই না?
–হুমম।
–টাকাটা আপনি দিয়েছেন,সো এখন আপানাকে ঐ টাকাটা আমি দিতে হবে। ধরতে গেলে ঐ ৫০০ টাকাতো আমার তাই না যেহেতু আপনাকে আমি এখন পরিশোধ করবো
–হুমম।।
–এখন একটা ছোট্ট হিসাব আমাকে দিন।ঐ পাঁচশ টাকা কতদিন আপনার পকেটে ছিলো। যতদিন ছিলো প্রতি ছয়ঘন্টায় ১০০ টাকা সুদ ধরে এবং এর চক্রবৃদ্ধিসহ কত হয়েছে হিসেব করে দেখেন আপনি আমার থেকে টাকা পান?নাকি আমি আমি পাই।
ধপাস করে চেয়ারে বসে পরলাম। হিটলার আবি জিন্দাহে।
–এই হিসাব কে শিখিয়েছে?
–বিজনেস স্টাডি শাখার স্টুডেন্ট।
–কর্মাসের স্টুডেন্টদের এটাই কাজ,মানুষের পকেটের টাকা সারাজীবন হিসাব করা।আমার টাকা আমার কাছ থেকে সুদ ? ভাবা যায় এগুলা?
–হুমম। হিসেব আরো বাকি আছে, মেঘ থেকে যে মিরাজ হয়েছেন আকিকা দিয়ে নাম পরিবর্তন করেছেন।
–প্রমা তোমাকেও বলে ফেলছে?
–বান্ধবী বলে কথা।
–সেদিন মিথ্যা বললেন কেন?
–কিসের?
–আচ্ছা এই হিসাব পরে করবো৷ সকাল বেলা এতোবড় ধোকাটা দিলে কেন?
প্রমার মুখে বিষন্ন ছাপ তৈরি হলো। নরম সুরে বললো,
–হবু শশুর বাড়ি থেকে লোক এসেছিলো।ব্যস্ত ছিলাম।
কথাটা বড্ড যাতনা দিলো আমাকে। কেন যেন এই কথাটা মেনে নিতে পারছি না। মেঘার মুখের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে সে বোধহয় এক্ষুনি কেঁদে দিবে। কিন্তু কেন? মেঘাও কি তার বিয়েতে রাজী না?
হতাশ মনে বললাম,
–আগে বললেই পারতে।
–আমি কি জানি নাকি? হুট করে চলে এসেছে।
–একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করেছো?
–কি?
–কখন যে আপনি থেকে তুমি বলে ফেলেছি তোমায় খেয়ালই করিনি।
–তুমি করেই বলেন। আচ্ছা চলেন আমার সাথে।
–কোথায়?
–যেদিকে দু চোখ যায়।
–মানে?
–যাস্ট ফান। আপনার টাকা পরিশোধ করবো। হাতে এতো টাকা নেই। কারো কাছ থেকে ধার নিয়ে দিতে হবে।
–জমা থাকুক।যখন প্রয়োজন হবে চেয়ে নিবো।
–আমি বলেছিনা আমি কারো পাওয়না অপূর্ণ রাখি না।
–তাহলে সেদিন বাসে দেওনি কেন? আবার চোরের মতোই বা পালিয়ে গেল কেন?
–সেদিন সেখানে আমার হবুবর ছিলো।গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে সে আমাকে রিসিভ করে। আপনার সাথে যদি দেখতো তাহলে,,,
–তাহলে কি?
–কিছু না।
— তুমি বোধহয় তোমার বিয়েতে রাজি না তাই না?
মেঘা ঘাড় নেড়ে হ্যা সম্মতি জানালো।।
–কোনো পছন্দের মানুষ আছে?
–আকাশের চাঁদ ছোঁয়া যায় না। তার উপস্থিতি অনুভব করা যায়।
–মানে?
–কিছু না। চলেন আমার সাথে একটু।
–কোথায়?
–ডিঙিতে করে শাপলা তুলবো।
–এখানে শাপলা পাওয়া যায় নাকি?
–পাওয়া যায়।
–আমার সাথেই বা কেন?হবু বরকে ফোন দাও?
–না মানে,আপনি শহুরে ছেলে কখনো ডিঙ্গিতে করে শাপলা তুলেছেন কি না।চলুন অনুভূতিটা মন্দ না।
–না,যাবো না।সাপ বিচ্ছুঁ থাকবে।পরে আরেক সমস্যা।আমার যখন ইচ্ছে হবে গালিবকে সাথে করে নিয়ে যাবো।
–ওহ্। ঠিক আছে।
একটু নিরব থাকার পর,
–নৌকাতে চড়ারা বেশি সখ নাকি?
–হুমম। কিন্তু কেউ নিয়ে যায় না। ভাইয়ারা শুনলে বকা দেয়।
–এখন কেউ দেখবে না?
–না।এপারে কেউ পরিচিত নেই। তরীর বিয়ের নাম করে এসেছি। বিয়ে পর্যন্ত আছি।
–সাথে গালিবকে নিয়ে নেই?
–না।
–কেন?
–আপনার সাথে ঘুরবো।
–দেখা যাবে মেজাজ গরম হলে তোমাকে ডিঙি থেকে ফেলে দিলাম। গালিব থাকলে তো আটকাতে পারবে।
–আপনি যদি ফেলেও দেন আবার আপনিই তুলবেন।রাগী মানুষের মনে মায়া বেশি।
–হুম মায়া বেশি তবে সবার জন্য নয়,পরিচিতদের জন্য।
–সেদিন বাসেও কি আমি আপনার পূর্ব পরিচিত ছিলাম?
— বাদ দেও। চলোতো।।
–ওয়েট,আমি বোরকা চেইঞ্জ করে আসি।
–কেন?
–ঘুরতে যাব, একটু প্রকৃতির নিভির স্পর্শ অনুভব করবো না?
–বোরকাই বেটার। পর্দা হচ্ছে। না হয় গোনাহ হবে।
–আপনি কি জানেন মানুষ জেনে শুনে গুনাহ করে বেশি?
–হুমম।তবে নিজেকে সর্বদা সর্তক রাখলে ক্ষতি কি?একটু হলেও তো পাপ কমবে?
–আচ্ছা সিগারেটের পেকেটে যখন লিখা থাকে ধুমধাপান ক্যান্সারের কারন সেটা দেখেও কেন মানুষ সিগারেট খায়?
–পর্দা আর সিগারেট এক নয়।
— আপনার সাথে থেকে করিনা একটু গোনাহ্, পরে তওবা পড়ে নিবো?
–তওবা পড়ার আগেই যদি ওপারের ডাক চলে আসে?
–আপনার মতো ভাবলে পৃথিবীতে একটাও খারাপ কাজ হতো না।
–পৃথিবীতে খারাপ কাজ হতেই হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি?
–পৃথিবীতে খারাপ কাজ না থাকলে ভালো কাজের মূল্য বোঝা যায় না।
–সেটা অবশ্য ঠিক।তবে ইচ্ছে করে না করাই বেটার।
–সেটা বুঝে কয়েকজন?
–হুম।সবাই বুঝে,কিন্তু তোমার মতো আরকি,পরে তওবা করবে এটা ভেবে বসে থাকে।
ভেবেছিলাম অভিমান করবো মেয়েটার উপর৷। কিন্তু ওর মায়াবতী মুখের পানে চেয়ে আমার সব অভিমান ভেঙ্গে চির্ণবিচুর্ণ।মেঘাও বোধহয় আমাকে পছন্দ করে। ওর অনেক আচরণ অবশ্য এটাই প্রমান করছে। কিন্তু কোথায় যেন আটকে পরে আছে সে। হয়তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এই জন্য বলতে পারছে না। কি করা যায় সেটাই ভাবছি। মেঘাকে প্রপোস করবো? না, না আবার যদি রিজেক্ট করে দেয়? লজ্জা পাবো। মেয়েদের মতিগতি বুঝা বড় দায়। হয়তো মেঘার আচরণই সবার সাথে এমন।
সেদিন বাসেই তো বলেছিলো সে মিশুক স্বভাবের। সবার সাথে খুব সহজে মিশে।আমি অযথা শুধু শুধু ভাবছি মেঘাকে নিয়ে।
মেঘা রেডি হয়ে আসার আগেই গালিব কোথা থেকে যেন হন্তদন্ত করে ছুটে এসে বললো,
–একটা সু খবর আছে?
–কি?
–সেই মহিলাটার বাড়ির ঠিকানা পাওয়া গেছে।
— কোন মহিলার?
–ঐ যে ফুপির পি,এ ছিলো না?
–ওহ্। সে থাকে সেই ঠিকানায়?
–কি বলবো, ঘটনা একদম নাজেহাল।
–মানে?
–সেই মহিলাটি নাকি চাকরি থেকে রিটায়ার্ড হওয়ার ২ দিন পর খুন হয়।
–ও মাই গড।
–আরেকটু বাকি আছে,
–আবার কি?
–তার ঠিক ১ দিন পর পুরুষ যে পিএস ছিলো সেও আত্মহত্যা করে।
–তুই এসব জানলি কি করে?
–আমার সাথে চল,
–এখনি?
–হুমম।
–মেঘাকে নিয়ে এক যায়গায় যাবো।
–যাস্ট ১ মিনিট।
–আমি গালিবের সাথে চললাম।কে জানে আবার কি দেখাবে?
·
·
·
চলবে……………………
লিখেছেনঃ নিহান আহমেদ আনিছ