সন্ধ্যে বেলার তুমি | পর্বঃ ১০
পুরনো মুহূর্তের কথা ভাবতে ভাবতে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ঝিনুকের কিন্তু বেশিক্ষন আর এই হাসি মুখে থাকলো না মিলিয়ে গেল দূরে দারিয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে..
” পূর্ণ! পূর্ণ এখানে? তাহলে ওই ভিডিও টা?” গেটে পূর্ণকে দেখে ঝিনুকের সব তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে ৷ পূর্ণ এখানে থাকে তাহলে সমুদ্র যে ভিডিওতে দেখালো পূর্ণ তার কাছে বন্দি তাহলে কি সব মিথ্যে ছিলো? ঝিনুক কিছু ভাবতে পারছে না ৷ ঝিনুক পূর্ণকে হাতের ইশারা করতে লাগলো৷ পূর্ণতা এতোক্ষন অপেক্ষা করছিলো ঝিনুক কখন ওকে দেখবে ৷ আর দেখা মাত্র পূর্ণতা তার ফোন দেখিয়ে ইশারা করলো৷ ঝিনুক বুজতে পারলো পূর্ণ তাকে ফোনে কথা বলার কথা বলছে ৷ ঝিনুক রুমে গিয়ে ঝিনুকের ছোট্ট বাটন ফোনটা নিয়ে আবার বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো৷ পূর্ণ ওড়না দিয়ে নিজের মুখটা আড়াল করে গাছের আড়ালে দারিয়ে ঝিনুকের নাম্বারে ফোন করে ৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
ছোট্ট ফোনটা আগেই ঝিনুক সাইলেন্ট করে ফেলে বিধায় ফোনের আর আওয়াজ হয় না ৷ ঝিনুক কল রিসিব করে কানে ধরে ফিস ফিস গলায় পূর্নতাকে বলতে লাগলো.” পূর্ণ তুই ঠিক আছিস তো? সাইকো টা তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
” আপু ওই পাগল সমুদ্র আমাকে কি করে পাবে আমি তো মিসাম ভাইয়ার সাথে ছিলাম ৷ “
” তাহলে সমুদ্র যে আমাকে একটা ভিডিও দেখালো ৷ সেখানে তোর হাত পা বেধে ফেলে রেখেছে?”
” হ্যাঁ আপু রেখেছিলো তবে সেটা তোদের বিয়ের রাতে ৷ যে রাতে তোকে আমি পালাতে সাহায্য করেছিলাম””
” তার মানে আমাকে মিথ্যে বলেছে সমুদ্র”
” হ্যাঁ , তোকে মিথ্যা বলেছে ওই পাগল টা””
” তুই এখানে কেন এসেছিস পূর্ণ? সাইকোর কোন গার্ড তোকে দেখে ফেলে তাহলে কি হবে বুজতে পারছিস?””
” কিচ্ছু হবে না ৷ শোন আমি এই গাছের গোড়ায় একটা ছোট্ট পোটলা রেখে যাচ্ছি ৷ তুই যে করে হোক এটা নিয়ে যাবি ৷”
” কি আছে এতে?”
” এটাতে ড্রাগ আছে ৷ ভয় পাস না এই জাহান্নাম থেকে বের হতে হলে একটু রিক্স নিতে হবে তোকে”
” ড্রাগ! ড্রাগ কেন পূর্ণ?”
” শোন এখন এতো প্রশ্নের উওর দেওয়ার সময় নেই ৷ এই ড্রাগ ওই সমুদ্র মির্জা কে খাইয়ে দিবি তারপর আর তোকে কিছু করতে হবে না ৷ ” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
” পূর্ণ এই ড্রাগ খেলে ওনার কোন ক্ষতি হবে না তো?”
” আপু এটা তুই কি বলছিস? তুই ওই পাগল জানোয়ারটার কোন ক্ষতি হবে কিনা চিন্তা করছিস যে কিনা আমাদের এতিম করে দিয়েছে””
” নাহ! কিছু ভুলিনি আমি সবটা মনে আছে তবে কুকুর কামড়ালে যে আমাকেও কুকুরকে কামড়াতে হবে পূর্ণ?তাহলে তার আর আমার ভিতর পার্থক্য কোথায়?”
” এতো কথা আমি জানতেও চাই না আর না চাই বুজতে তোকে যেটা বললাম তুই তাই করবি না হলে আমিও মা বাবার কাছে চলে যাবো চিরদিনের জন্য মনে রাখিস” রেগে কথা গুলো বলে কল কেটে চলে যায় ৷ ঝিনুক স্তব্ধ হয়ে দারিয়ে আছে ৷ এই পূর্ণকে ঝিনুক চিনতে পারছে না ৷ আগের পূর্ণ কখনো কারোর ক্ষতি চাইতো না সে হোক তার শত্রু তবুও ক্ষতি চাইতো না ৷
কিন্তু এই পূর্ণ কে ঝিনুক না চিনে না জানে ৷ এ এক অন্য রুপ পূর্ণের৷ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে ৷ বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোটা ভিজিয়ে দিচ্ছে ঝিনুককে ৷ হঠাৎ জোড়ে বাজ পড়ায় ঝিনুক ভয় পেয়ে যায়৷ পিছুনে ফিরে দৌড়ে রুমে যাবে এমন সময় কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে ঝিনুককের কোমড় জরিয়ে ধরে৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
ঝিনুক ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ঝিনুক তখন সমুদ্রের চোখে তার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখতে পেলো ৷ ঝিনুককে দার করিয়ে সমুদ্র কিছু কড়া কথা বলতে যাবে তখনি ঝিনুক মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে যায়৷ সমুদ্র ঝিনুকের এমন ব্যবহার দেখে বেশ অবাক হয়৷ সমুদ্র রুমে এসে দেখে ঝিনুক রুমে নেই ৷ পাচঁ মিনিট পর ঝিনুক ভিজে কাপড় বদলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের দিকে না তাকিয়ে বিছানার এক কোনে শুয়ে পড়ে৷ সমুদ্র ঝিনুকের ব্যবহার দেখে অবাকের পর অবাক হচ্ছে ৷
এই কয়েক মিনিটে সমুদ্র ঝিনুকের চোখে না কোন ভয় দেখতে পেলো না বরং চিন্তিত মনে হলো৷ এমন কি হলো এই কয়েক মিনিটে যে ঝিনুকের ব্যবহার বদলে গেল? এটাই বার বার সমুদ্রকে ভাবাচ্ছে৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
সমুদ্র চেন্জ করে টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে এসে ঝিনুককে পিছুন থেকে জরিয়ে ধরে ৷ ঝিনুককে আজ কোন রিয়েক্ট করতে না দেখে আবারো অবাক হয় সমুদ্র…. সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
” কাজটা কম্পিলিট পূর্ণতা?”
” একদম মিসাম ভাইয়া৷ আমার মনে হয় আপু আজ আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া৷”
” আমার কথা মন দিয়ে শোন পূর্ণতা৷ ঝিনুককে ওই খুনি সাইকোর হাত থেকে বাচাঁতে হলে তোমাকে কঠিন হতে হবে নাহলে আমার মনে হয়না তুমি ঝিনুককে বাচাঁতে পারবে৷” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
” নাহ মিসাম ভাইয়া আমাকে আপুকে বাঁচাতে হবে নাহলে ওই খুনি সাইকো টা যে কোন সময় আমার আপুকে খুন করতে পারে৷ আর আমার আপুকে বাঁচাতে আমাকে যদি খারাপ হতে হয় খুনি হতে হয় আমি হবো তবুও আমি আমার আপুর কোন ক্ষতি হতে দিবো না” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
“””এটাই তো চেয়েছি পূর্ণতা ৷ তুমি হবে আমার দাবার গুটি ৷ তোমাকে সামনে রেখে আমি সবটা হাসিল করবো ৷ ঝিনুকে পাওয়ার সাথে সাথে মির্জা বাড়ি আমি কবরে পরিনত করবো৷”(মনে মনে) সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
হঠাৎ পূর্ণতার হাত ধরে মিসাম বলতে লাগলো ” তুমি যাই করো না পূর্ণতা মনে রেখো আমি তোমার সাথে আছি”
মিসামের কথা শুনে পূর্ণতার ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ৷
” মিসাম ভাইয়া তুমি সাথে থাকলে আমি যে কোন বিপদ অতিক্রম করতে পারি”
“( বাহ! ফাঁদে পা দিয়েছে পাখি) আমি তোমার পাশে সব সময় আছি পূর্ণতা..””
এদিকে সাফাদ চারিদিকে লোক লাগিয়েও কিছু জানতে পারলো না পূর্ণতা কোথায় আছে ৷ হঠাৎ করে সাফাদের চোখ বড় গাছে লুকিয়ে রাখা ক্যামেরার দিকে চোখ পড়ে ৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
” ইউরেকা মির্জা বাড়ির চারিদিকে সি সি ক্যামেরা লাগিয়েছে ভাই ৷ তার মানে বড় রাস্তা পর্যন্ত সি সি ক্যামেরা নিশ্চয়ই লাগানো থাকবে৷ আমাকে এখুনি ফুটেজ চেক করতে হবে৷ “
সাফাদ দৌড়ে সিকিউরিটির রুমে গিয়ে সেদিনের ফুটেজ খোজার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সাফাদ ওই দিনের কোন রেকর্ড পেল না৷
” এটা কি করে সম্ভব? এখানে তো সব ফুটেজ থাকার কথা তাহলে নেই কেন?” সাফাদ বেশ রেগে সিকিউরিটি গার্ডদের জ্বিগাসা করলো” এই সব কি হচ্ছে ওই দিনের রেকর্ড কেন নেই এখানে? আন্সার মি ড্যাম ইট ” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
সিকিউরিটি গার্ড ভয়ে ভয়ে সাফাদ কে বলল” স্যার আমি এই কয়দিন ছুটিতে ছিলাম ৷ মনিটরিং এর দ্বায়িত্ব সালাম এর ছিলো “”
” তাকে এখুনি আমার সামনে দেখতে চাই ” রেগে বললো সাফাদ
” ওকে স্যার”
সিকিউরিটি গার্ড দৌড়ে বাইরে চলে গেল৷ সাফাদ রাগে ফোস ফোস করতে লাগলো ৷ কারন এই একটাই ক্লু আছে যেটা ব্যবহার করে সাফাদ পূর্ণতার কাছে পৌছাতে পারে৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
দশ মিনিট পর সেই গার্ড ফিরে এসে সাফাদকে জানায় সালাম কে কোথাও খুজে পাচ্ছে না৷ কথাটা শোনা মাত্র চেয়ারে লাথি মেরে সিকিউরিটি রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাফাদ…. সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
রাতে সমুদ্র নিজ হাতে ঝিনুককে খাইয়ে দিয়ে সেই প্লেটে খাবার নিয়ে ঝিনুকের দিকে এগিয়ে দেয় ৷ ঝিনুক বুজতে পারে এখন তাকে কি করতে হবে৷ ঝিনুক হাত ধুয়ে সমুদ্রকে খাইয়ে দিলো৷ সমুদ্র তৃপ্তি সহকারে ঝিনুকের হাতে খেয়ে তার ওড়না দিয়ে মুখ মুছে ৷
” প্লেট গুলো আমাকে দেও আমি রেখে দিচ্ছি”
” নাহ আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আমি নিচে রেখে আসছি”
” প্রিন্সেস আমি এক কথা দ্বিতীয় বার বলা পছন্দ করি না তুমি এটা ভালো করে জানো” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
ঝিনুক কথা বাড়ালো না কারন কথা বাড়ানো মানে সাইকো কে রাগিয়ে তোলা যেটা এই মুহূর্তে ঝিনুক চাইছে না ৷ আজ যে করে হোক বাইরে যাওয়ার পারমিশন তাকে নিতে হবে নাহলে পূর্ণের রাখা ড্রাগ টা নিতে পারবে না৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
সমুদ্র ট্রেতে প্লেট গুলো তুলে নিয়ে রুমের বাইরে রেখে ভিতরে এসে দেখে ঝিনুক আয়নার সামনে দারিয়ে চুল বেনি করছে ৷ সমুদ্রের বেশ রাগ হলো চুল বাধতে দেখে হুট করে ঝিনুকের পিছুনে দারিয়ে চুল টা খুলে দিয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে বলল” তোমাকে খোলা চুলে সুন্দর লাগে প্রিন্সেস ৷ আমার সামনে কখনো চুল বাধবে না ৷ কারন তোমার চুল গুলো আমাকে টানে ৷ তোমার এই ঢেউ খেলানো চুলের ঘ্রান নিতে ভালোবাসি” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
সমুদ্র আচরনে ঝিনুক ফ্রিজড হয়ে দারিয়ে আছে ৷ যেন চলা ফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে৷ সমুদ্র ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে ঝিনুক কে কোলে তুলে নিলো ৷ সমুদ্র যখনি ঝিনুককে কোলে তুলে নেয় ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে আসে ঝিনুকের ৷ কারন সমুদ্রের চোখে আজ অন্য রকম নেশা দেখতে পেল ঝিনুক৷ আজ কিভাবে সমুদ্রকে আটকাবে এটাই বুজতে পারছে না ঝিনুক৷ কিন্তু সমুদ্র কে যে আটকাতে হবে৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
সমুদ্র ঝিনুককে বিছানায় শুইয়ে দিতে আচমকা কেঁদে ওঠে ঝিনুক ৷ ঝিনুককে কাঁদতে দেখে সমুদ্র হচকিয়ে ওঠে সরে বসে জ্বিগাসা করলো..
” প্রিন্সেস কি হয়েছে কাঁদছো কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে ? আমাকে বলো ? “
সমুদ্রের কোন কথাই ঝিনুকের কানে পৌছায় না ঝিনুক পেটে হাত দিয়ে কেদেঁ যাচ্ছে৷ হঠাৎ সমুদ্র খেয়াল করলো ঝিনুক পেট চেপে ধরে কাঁদছে ৷ সমুদ্রের বুজতে বাকি নেই এটা তার জন্য-ই হচ্ছে ৷ তার প্রিন্সেস যে ঝাল খেতে পারে না ৷ ঝাল খেলে পেটে ব্যাথা করে ৷এটা সে আগে থেকে জানতো ৷ কিন্তু না চাইতে তার ভালোবাসাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো ৷ এটা ভেবে সমুদ্র তার নিজের উপর রাগ হলো৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
কিছুক্ষন আগে ডক্টর এসে পেইন কিলার দিয়ে গেছে৷ আর হালকা লাইট খাবার খেতে বলেছে বলে সমুদ্র ভেজিটেবল সুপ বানিয়ে নিয়ে আসে ৷ ঝিনুক সুপ খেতে একদমি পছন্দ করতো না ৷ কিন্তু বাধ্য হয়ে খেতে হলো সমুদ্রের ভয়ে৷
দুপুর থেকে পেটে হালকা ব্যাথা করছিলো কিন্তু রাতে হঠাৎ করে ব্যাথাটা বেড়ে যায়৷ সে সুযোগ টা কাজে লাগায় ঝিনুক যাতে সমুদ্র ঝিনুকের কাছে আসতে না পারে ৷
ঝিনুক চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে৷ সমুদ্র ঝিনুকের চুলে বিলি কেটে দিয়ে বলতে লাগলো” প্রিন্সেস চিন্তা করো না তুমি খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবে৷ আমি আছি তোমার কাছে তোমার কিচ্ছু হতে দেব না ৷ ভালোবেসে ভরিয়ে দিবো তোমায়৷ “
ঝিনুক অনুভব করলো তার মুখে কয়েক ফোটা পানি পড়লো ৷ ঝিনুক চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলতে লাগলো.
” আল্লাহ এই সাইকো আমার সামান্য অসুস্থতায় কাদঁছে বাচ্চাদের মতো? এতো ভালোবাসে আমায়? তাহলে আমার মা বাবা কে পুড়িয়ে মেরে কেন আমাকে এতিম বানালো? কেন আমাকে কষ্ট দিলো? এই সাইকো সত্যি আমাকে ভালোবাসে নাকি সবটাই অভিনয়? আমাকে ভোগ করার ? ছিঃ আমি কি ভাবছি যদি ভোগ করাই ওর উদ্দ্যেশ্য হতো তাহলে এতোদিন কেন আমাকে টাচ করলো না? শুধু মাত্র বুকে জরিয়ে ধরে ঘুমাতো ৷ চাইলে তো আমার ঘুমের সুযোগ নিতে পারতো ?
কারোর সাহস ছিলো না তাকে আটকানো ৷ আচ্ছা আমি কি এই সাইকো টাকে বুজতে ভুল করছি? আমার কি তাকে বোঝায় কোন ভুল হয়েছে? নাকি আমার ভাবনা গুলোই ভুল?” কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ঝিনুক ঘুমিয়ে পড়ে ৷ পরের দিন সকালে মিষ্টি সিগ্ধ রোদ মুখে পড়তে ঘুম ভেঙে যায় ঝিনুকের ৷ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র এখনো তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে ৷ চোখ দুটো লাল আর ফুলে আছে ৷ মনে হচ্ছে রাতে না ঘুমিয়ে কান্না করেছে৷ ঝিনুকের কেন যেন ভিষন মায়া হচ্ছে সমুদ্রের উপর ৷ সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
ঝিনুক উঠে বসতে সমুদ্র উত্তিজিত হয়ে বলতে লাগলো” প্রিন্সেস ত এখনো কি পেটে ব্যাথা করছে? ডক্টর ডাকবো?”
” হুস , শান্ত হোন আমি একদম ঠিক আছি ৷ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি পুরো রাত ঘুমাননি কেন?”
” তোমার যদি পেটে ব্যাথায় কষ্ট হয় ৷ কিছু প্রয়োজন হয় “
” ব্যাস শুধু এতোটুকুর জন্য পুরো রাত না ঘুমিয়ে এভাবে বসে কাটিয়ে দিলেন?””
” আমার প্রিন্সেস কে ভালো রাখার জন্য সারা জীবন যদি এভাবে বসে না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয় তাহলে আমি তাই কাটাবো”
ঝিনুক মুগ্ধ হয়ে সমুদ্রের কথা গুলো শুনলো ৷ এখন ঝিনুকের ভিষন খারাপ লাগছে তার জন্য সমুদ্র এতো কষ্ট করলো৷ ঝিনুক মন বিষন্ন মুখে সমুদ্রকে বলল” আপনি এখন একটু ঘুমিয়ে নিন ৷ “”
“” নাহ এখন আর আমার ঘুম আসবে না চলো তোমাকে ফ্রেস হতে সাহায্য করি””
” আমি এখন পুরো সুস্থ আমার সাহায্য করার কোন প্রয়োজন নেই৷ আপনি বরং শুয়ে পরুন আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি দেখবেন আপনার ঘুম চলে আসবে””
সমুদ্র তার প্রিন্সেসের হাতের ছোয়া পাওয়ার লোভ সামলাতে পারলো না ৷ চুপ করে শুয়ে পড়লো ৷ ঝিনুক সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো এদিকে সমুদ্র বাচ্চাদের মতো ঝিনুকের এক হাত বুকের সাথে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো৷
দুপুর একটার দিকে সমুদ্রের ঘুম ভেঙে যায় ৷ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে ৷ ঘুম ভেঙে এই দৃশ্য দেখে সমুদ্রের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ৷ খুব সাবধানে ঝিনুকের কপালে চুমু দিয়ে ঝিনুককে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায় সমুদ্র৷ সমুদ্র ওয়াশরুমে থাকা সময়ে দরজায় কেউ নক করে ৷ ঝিনুকের ঘুম ভেঙে যায়৷ ঢুলো ঢুলো পায়ে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সাফাদ দারিয়ে ৷ ঝিনুক সাফাদ কে দেখে চিনতে পারলো এটাই সাইকো সমুদ্রের ছোট ভাই ৷ সাফাদ মাথা নিচু করে ঝিনুককে বলল” ভাবি ভাইয়ার সাথে আমার একটু দরকার ছিলো” সন্ধ্যে বেলার তুমি ৷
ঝিনুক ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ দেখে বুজতে পারলো সমুদ্র ওয়াশরুমে ..
“” ভাইয়া আপনার ভাইয়া ওয়াশরুমে বের হলে বলবো ৷ আপনি ভিতরে আসুন৷””
” না ভাবি , ভাইয়া কে বলবেন আমি এসেছিলাম “
ঝিনুক আর জোর করলো না মাথা নাড়ালো.. সাফাদ চলে যেতে ঝিনুক দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো৷ ত্রিশ মিনিট পর সমুদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঝিনুকের দিকে না তাকিয়ে জ্বিগাসা করে ” কে এসেছিলো?”
” সাফাদ ভাইয়া এসেছিলো৷ “
সমুদ্র একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে বিধায় চুল গুলো এখনো ভিজে ৷ সমুদ্র তোয়ালে নিয়ে এসে ঝিনুককে বলে ” ভালো করে আমার ভিজে চুল গুলো মুছে দেও প্রিন্সেস”
” কিহ! “বড় বড় চোখ করে বললো ঝিনুক ..
“” জ্বি” …
অন্যদিকে দূর থেকে ঝিনুক আর সমুদ্র কে কাছাকাছি দেখতে পেয়ে রাগে হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসটা ফেলে দিয়ে বলতে লাগলো” আর মাত্র কয়েকদিন সমুদ্র তারপর তোর ভালোবাসা ঝিনুক তোর পরিবার আমার হবে যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ “
.
.
চলবে……..
লিখেছেনঃ ফারহানা ছবি