নাহ আমি হার মানবো না৷ আমাকে এই জাহান্নাম থেকে পালাতে হবে ৷ কিন্ত পূর্ণ কোথায়? ওকে আগে খুজে বের করতে হবে ৷ ” কথা গুলো বির বির করে বলতে বলতে হঠাৎ দরজার লক খোলার শব্দ পায় ঝিনুক মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে পূর্ণতা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ৷ ঝিনুক ছোট বোনকে দেখে খুশিতে হাতে পায়ের ব্যাথা ভুলে বিছানা থেকে নামতে যাবে তখনি পূণর্তা দৌড়ে এসে ঝিনুককে আটকে দিয়ে বলে” আপু কাটা পা নিয়ে তোকে বিছানা থেকে নামতে হবে৷”
ঝিনুক পূর্ণতাকে জরিয়ে ধরে কাদঁতে কাদঁতে বলতে লাগলো” পূর্ণ তোর কোন ক্ষতি হয়নি তো? তুই ঠিক আছিস তো? ওই সাইকো জানোয়ারটা তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?”
পূর্ণতা তার বোনের কান্না দেখে নিজের কান্নাটাকে দমিয়ে রেখে বলল” আমি ঠিক আছি সুস্থ আছি কিন্তু তুই ঠিক নেই আপু ৷ তোকে সুস্থ হতে হবে তারপর এই পাগলটার থেকে আমরা দু’বোন পালিয়ে যাবো৷ থাকবো না আর এই শহরে”
” হ্যা তুই ঠিক বলেছিস আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে কিন্তু কি করে পূর্ণ ? ওই লোকটা আমাকে এই রুম থেকে বের হতে দিবে না ৷ এই চার দেয়ালের মাঝে বন্দি করে রাখবে আমাকে …”
“” আপু এখুনি এতোটা নিরাশ হলে আমাদের চলবে না ৷ তুই তো জানিস আমার থেকে বুদ্ধি তোর মাথায় বেশি তাই এতো কান্না না করে ঝটপট ঠান্ডা মাথায় ভাব আমাদের পরের স্টেপ কি হবে৷ “
ঝিনুক চোখ বন্ধ করে দু’বার জোড়ে শ্বাস নিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলে ” একটা প্লান আছে পূর্ণ ৷ “
” বললাম না ঠান্ডা মাথায় ভাবলে তোর মাথায় বুদ্ধি আসবে দেখ এসেও গেছে ৷ এখন বল কি করতে হবে?”
” তোকে নয় আমাকে করতে হবে যা করার “
” মানে কি বলতে চাইছিস তুই?”
” আমাকে ওই পাগলটার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে প্রথমে তারপর সুযোগ বুঝে তুই আমি ভাইয়ার কাছে কানাডা চলে যাবো”
“” আপু ভিসা টিকিট এগুলা কি করে … বাকি টা বলার আগে ঝিনুক বলে উঠলো ” ওটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না ৷ আমার বন্ধু মিসাম ওকে বললে ও সবটা ম্যানেজ করে দিতে পারবে৷”
পূর্ণতা তার বোন কে আরো কিছু বলতে যাবে তখনি কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়৷ দরজার পাশে সাফাদ পাহাড়া দিচ্ছিলো হঠাৎ সমুদ্রকে আসতে দেখে সাফাদ রুমে ঢুকে পূর্ণতা কে বলতে লাগলো” পূর্নতা ভাই আসছে দ্রুত বের হও ৷ “
ঝিনুক পূর্ণতাকে জরিয়ে ধরে বিদায় জানায় ৷ সাফাদ সতর্কতার সাথে দরজা বন্ধ করে পাশের গেস্ট রুমে ঢুকে যায়৷ তার একমিনিট পর সমুদ্র দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ঝিনুকের চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখে সমুদ্রের সন্ধেহ হয় ৷ খাবার ট্রে টা ঝিনুকের সামনে রেখে বলে” কি বেপার প্রিন্সেস তোমাকে দেখে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন? “
হঠাৎ সমুদ্রের কথা শুনে ঝিনুক ভয় পেয়ে যায় তখনকার কথা ভেবে ৷ সমুদ্র এবার ঝিনুকের চোখে মুখে ভয় দেখে বেশ খুশি হলো ৷
” প্রিন্সেস খাবার গুলো খেয়ে নেও তারপর মেডেসিন গুলো খেতে হবে ৷”
ঝিনুক কোন কথা বললো না ৷ সমুদ্র নিজের হাতে ঝিনুককে খাইয়ে দিলো ৷ সমুদ্র ঝিনুককে খাওয়াতে খাওয়াতে বলতে লাগলো” হাত কেটে তুমি নিজের বিপদ ডেকে আনলে প্রিন্সেস ৷ এই কাজ টা না করলেও পারতে ৷ এখন শুধু অপেক্ষা তোমার সুস্থ হওয়ার তারপর তুমি তোমার পানিশমেন্ট পাবে৷”
” আপনি একটা পাগল৷ নাহলে এই সময়ে আমাকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলতেন না ৷ আপনার কি মনে হয় আমি মানুষিক ভাবে ঠিক আছি ? নাহ আমি প্রচন্ড ডিসট্রাব কারন শুধু আপনি ৷ আপনি আমার জীবনের হাসি খুশি কেড়ে নিয়ে দুঃখের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছেন৷ “
সমুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে ৷ ঝিনুকের কথা গুলো এক একটা সমুদ্রের বুকে যেয়ে বিদছে যেটা ঝিনুক নিজেও জানে না৷ সমুদ্র ঝিনুককে খাবার টা খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিয়ে বলে” হ্যা আমি পাগল তোমার জন্য পাগল তাই তোমার ভালোর জন্য বলছি ৷ ভাষা সংযত করে কথা বলবে আমার সাথে নাহলে পাগলের পাগলামি কত প্রকারও কি কি তা তোমাকে প্রাকটিক্যালি দেখিয়ে দিবো ৷ এখন রেস্ট করো ৷ আর ওয়াশরুমে যেতে হলে আমাকে বলবে আমি নিয়ে যাবো ৷ নিজে একা একা পাকামি করে যেতে নিলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না””
“” আপনার থেকে খারাপ দুনিয়াতে আর কেউ নেই “” বির বির করে বললো ঝিনুক ..
“” কিছু বললে?”
” নাহ আপনাকে কিছু বলবো ঘাড়ে কটা মাথা আছে বলুন” দাঁত কটমট করে বললো ঝিনুক …
“” ঘুমিয়ে পড়ো আমি রুমে আছি ৷ কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে”
ঝিনুক বিছানায় শুয়ে পরার কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পড়ে কারন মেডিসিনের মধ্যে হাই পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ ছিলো ৷ ঝিনুককে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে সমুদ্র ঝিনুকের পাশে বসে ঝিনুকের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ঝিনুকের চোখের কোন বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়তে সমুদ্র তার হাতে নিয়ে নেয় ৷
” প্রিন্সেস আমি কখনোই তোমার চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে দিবো না ৷ এতো সুখ দিবো যে তোমার চোখে কখনো পানি আসবে না ৷ আমার ভালোবাসার চাদরে মুরিয়ে নিবো তোমায়…”
সে রাতে ঝিনুকের আর ঘুম ভাঙেনি ৷ পুরো রাতটা সমুদ্র ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে ৷ পরের দিন সকালে ঝিনুক চোখ মেলে তাকিয়ে পাশে সমুদ্রকে দেখতে পায় ৷ শুকনো মুখ লাল টকটকে চোখ এলোমেলো চুল ৷ ভিষন ভয়ঙ্কর লাগছে সমুদ্রকে ৷ ঝিনুক সমুদ্রকে দেখে চোখ বন্ধ করে আবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সত্যি সমুদ্র ওভাবে বসা ৷ আর ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সমুদ্র মুচকি হেসে ঝিনুকের কপালে ঠোটের স্পর্শ দিয়ে বলে” গুড মরনিং প্রিন্সেস “
“” গুড ম,, মরনিং “
সমুদ্র বিছানা থেকে নেমে ঝিনুককে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে টুলের উপর বসিয়ে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে সমুদ্র নিজে ঝিনুকের দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে থাকে৷ ঝিনুক অবাক হয়ে সমুদ্রকে দেখছে আর ভাবছে এই মানুষটা পুরো গিরগিটির মতো রং বদলায় ৷ কখনো হিংস্র কখনো কেয়ারিং ৷ মুহূর্তের মধ্যে কি করে নিজের মুড চেন্জ করতে পারে তা এক মাত্র সৃষ্টিকর্তা জানে৷
সমুদ্র ঝিনুককে সাহায্য করে ফ্রেস হতে ৷ ঝিনুক বাধা দেয় না কারন এখান থেকে বের হওয়ার জন্য তাকে আগে এই সাইকোর কাছে বিশ্বাসী হতে হবে ৷
“” আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি তুমি দু’মিনিট অপেক্ষা করো”
” এক মিনিট আপনারা কি এভাবে সবাই যে যার রুমে আলাদা খান?”
” না তবে আমি খাই আর আজ থেকে তুমিও খাবে শুধু মাত্র আমার সাথে …””
” শুনুন আমার খুব ইচ্ছে করছে সবার সাথে নাস্তা করার..”” নরম কন্ঠে কথা টা বললো ঝিনুক …
” ইম্পসিবল তুমি এই রুম থেকে কোথাও বের হতে পারবে না ৷ আর না কারো সাথে দেখা বা কথা বলতে পারবে৷””
” অসভ্য সাইকো পাগল নিচে না যেতে দিলে বাকিদের সাথে কি করে কথা বলবো? পালানোর রাস্তা বা খুজবো কি করে?নাহ আরো ধৈর্য ধরতে হবে আমাকে “(মনে মনে)
” এখানে রেস্ট করো আমি আসছি”
কথাটা বলে গট গট করে হেটে চলে গেল সমুদ্র এদিকে ঝিনুক পড়ে গেল মহা চিন্তায় ৷ কি করে সাইকোটাকে বিশ্বাস করাবে যে সে আর পালাবে না৷ গালে হাত দিয়ে গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লো ঝিনুক….
” ড্যাড তোমার প্লান মতো ঝিনুকের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি কিন্তু ওই আগুনে ঝিনুকের মা বাবা পুড়ে মারা গেছে ৷”
” লিসেন রাফসান যুদ্ধ করতে নামলে অনেক নিরিহ মানুষকে মরতে হয় ৷ ধরে নেও এরাও তাই”
” বাট ড্যাড তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে ঝিনুক আমার হবে কিন্তু গতকাল ওই সাইকোটা আমার ঝিনুককে বিয়ে করে ফেলেছে৷”
” আমি তো এটাই চাই রাফসান ৷৷সমুদ্র ঝিনুককে বিয়ে করুক আর ঝিনুক সমুদ্র মির্জাকে নিজের মা বাবার খুনি জেনে ওকে শেষ করে দেয় ৷ সমুদ্রকে তো আমি মারতে পারবো না কারন ওর দু’কিলোমিটারের আশে পাশে থাকলে ও আমাকে জিন্দা কবর দিয়ে দিবে আর তাইতো তোকে ইউজ করে ঝিনুককে কাজে লাগিয়ে ওই মির্জা পরিবারকে ধ্বংস করে দিবো ৷ যে ভাবে আমার বড় ছেলেকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে ঠিক তেমনি সমুদ্রকেও আমি ছাড়বো না ৷ ওর সাথে সাথে ওর পুরো পরিবার কে আমি খতম করে দিবো সেটা তোকে জানানো যাবে না রাফসান”” মনে মনে কথা গুলো বলে ড্রিংক’স করতে লাগলো রায়হান চৌধুরী….
” ড্যাড কিছু বলছো না কেন?”
” রাফসান তুমি এখন ওই বাড়ির দিকে নজর রাখো আমার মনে হয় ঝিনুক মেয়েটি পালানোর চেষ্টা অবশ্যই করবে তুমি ওকে ফলো করবে আর সময় সুযোগ বুঝে ওকে বলবে সমুদ্র মির্জা হলো আসল খুনি সমুদ্র ওর মা বাবাকে খুন করেছে৷ “
” ওকে ড্যাড ৷ কিন্তু ঝিনুককে যেন আমি পাই ড্যাড ৷ ওকে আমি ভালোবাসি ৷ আমার দু’বছরের জুনিয়র ঝিনুক তবুও ওকে ভালোবাসি বলে ওর সাথে বন্ধুত্ব করেছি৷ সব সময় পাশে থেকেছি ওর আশে পাশে কোন ছেলেকে ঘেসতে দিই নি৷ আর আজ ওকে ছেড়ে দিবো কখনো না ৷ তুমি কথা দেও ঝিনুক শুধু আমার হবে?”
” কথা দিলাম রাফসান ঝিনুক এই চৌধুরী বাড়ির বউ হবে “”
দেখতে দেখতে চারদিন কেটে গেলো ৷ এই চারদিনে সমুদ্র কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করেনি ঝিনুকের সাথে কারন ঝিনুক এখন এমন ভাবে চলে যেন সমুদ্রের কথার বাইরে সে এক পা রাখে না ৷ ঝিনুককে এভাবে থাকতে দেখে সমুদ্র ভিষন খুশি৷ ঝিনুক এখন হাটতে পারে ৷ পায়ের ঘা গুলো শুকিয়ে গেছে৷ হাতের ব্যাথাটাও অনেকটা নেই বললেই চলে ৷ ঝিনুক শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে মনে পড়ে সাথে ড্রেস নেয়নি ৷ ঝিনুক আবার ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাবার্ড খুলে নীল রঙের একটা ত্রিপিচ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ সমুদ্র অফিসের কাজে ভোর বেলায় বের হয় ৷ যাতে কাজ গুলো দ্রুত সেরে বাড়িতে ফিরতে পারে ৷ ফিরে এসে রুমে কোথাও ঝিনুককে না পেয়ে পাগলের মতো বিহেব করতে থাকে ৷ পুরো বাড়ি খুজেও ঝিনুককে না পেয়ে সমুদ্রের চোখ মুখের রঙ বদলে গেল ৷ গাড়ির চাবি নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি ঝিনুক ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে রুমে ঢুকে রুমের হাল দেখে চোখ কপালে উঠে যায়৷ এদিকে সমুদ্র ঝিনুককে দেখে অবাক হয়ে যায়৷ সব যায়গায় খুজলেও ওয়াশরুম যে সমুদ্র খুজে নি সেটা এখন মনে পড়লো৷ ঝিনুক রুমের অবস্তা দেখে বুজতে পারলো সমুদ্র তার এই নিরিহ আসবাবপত্রের উপর ঝেড়েছে ৷ ঝিনুক তোয়ালেটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে ভাঙা কাচঁ পরিষ্কার করতে যাবে তখনি সমুদ্র ঝিনুকের হাত চেপে ধরে কাছে টেনে জরিয়ে ধরে শক্ত করে৷ ঝিনুকের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তবুও সহ্য করে যাচ্ছে সমুদ্রের পাগলামি৷ কিছুক্ষন পর সমুদ্র ঝিনুককে ছেড়ে দিয়ে সারা মুখে চুমুতে ভরে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে ঝিনুকের ভেজা চুল গুলো হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে শুকিয়ে ব্রাশ করে দিয়ে বললো৷ চুপ করে এখনে বসে থাকবে একদম নরবে না ৷ “
“কিন্তু পুরো রুমে তো কাচঁ ভাঙা ছড়িয়ে আছে ৷”
” চুপ থাকতে বলেছি তোমায় ” চোখ পাকিয়ে বললো সমুদ্র..
ঝিনুক আর কিছু বললো না চুপ চাপ দেখতে লাগলো সমুদ্রের কান্ড ৷ সমুদ্র ঝটপট পুরো রুমটা ক্লিন করে ফেললো ৷ কয়েক মিনিটের ভিতর সব কিছু গুছিয়ে ফেললো৷ ঝিনুক হা করে তাকিয়ে আছে ৷ এতো নিখুত ভাবে কোন ছেলে ক্লিন করতে পারে জানা ছিলো না ঝিনুকের ৷ সমুদ্র সব কিছু গুছিয়ে ওয়াশরুমে গেল শাওয়ার নিতে ৷ ঝিনুক টেবিলের উপর সমুদ্রের ফোনটার দিকে চোখ পড়তে ঝিনুক দ্রুত ফোনটা হাতে তুলে নেয় ৷ অন করতে দেখে লক করা ফোন ৷ ঝিনুক আগেও অনেক সিনেমা দেখেছে সেখানে যে যাকে ভালোবাসে সে তার নাম দিয়ে পাসওয়ার্ড দেয় ফোন ল্যাপটপে ৷ ঝিনুক সেই বুদ্ধি এ্যাপলাই করলো৷ প্রথমে ঝিনুক লিখে ট্রাই করলো কিন্তু লক খুললো না এরপর ঝিনুকের মনে হলো সমুদ্র তো তাকে লিটিল প্রিন্সেস ডাকে আর এতো বড় পাসওয়ার্ড তো হবে না সর্ট করে প্রিন্সেস লিখে ট্রাই করতে লক খুলে যায়৷ ঝিনুক ডায়াল কলে গিয়ে দ্রুত মিসামকে কল করতে গিয়ে করলো না বরং একটা মেসেজ করে দেয় ৷ তারপর সাথে সাথে মেসেজ গুলো ডিলিট করে সেই স্থানে ফোন টা রেখে দেয় ঝিনুক ৷
অন্যদিকে মিসাম মেসেজটি দেখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো” ডোন্ট ওয়ারি মাই লাভ আমি সবটা মেনেজ করে ফেলবো ৷ তবে কানাডা তোমার যাওয়া হচ্ছে না ৷ কারন তুমি থাকবে আমার সাথে …”
দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ঝিনুক সামনে তাকাতে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে ৷ সমুদ্র শাওয়ার নিয়ে যাস্ট তোয়ালে পেচিয়ে বেরিয়ে এসেছে দেখে ৷ ঝিনুক কখনো কোন ছেলেকে এভাবে দেখেনি বিধায় প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে৷ সমুদ্র ঝিনুককে এভাবে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে কপাল কুচকে ঝিনুকের কাছে এসে ঝিনুকের গাল দুটো ধরে বলে ” প্রিন্সেস চোখ বন্ধ করে আছো কেন? অপেন ইউর আইস ৷”
ঝিনুক গালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে বুজতে পারে সমুদ্রের ছোয়া ৷ লজ্জায় সে এবার চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে কিন্তু সমুদ্রের কথা শুনে না চেয়েও চোখ মেলে তাকায় সমুদ্রের দিকে ৷এই প্রথমবার ঝিনুক সমুদ্রকে এতো কাছ থেকে দেখছে ৷ মাথায় ভিজে এলোমেলো চুল , মুখে এখনো বিন্দু বিন্দু পানি যেগুলো চকলেট রাঙা ঠোট তারপর চিবুক গড়িয়ে পড়ছে ঝিনুকের মুখের উপর ৷ সমুদ্রের চোখের মনি কালো নয় আবার নীল ও নয় গাঢ় সবুজ রঙের৷ এই চোখের দিকে বেশিক্ষন তাকালে যে কেউ সবুজ চোখের গভীরতায় ডুবে যেতে বাধ্য৷ দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয় ঝিনুক৷ ঝিনুকের হঠাৎ চোখ পড়ে সমুদ্রের বুকে লোমশে থাকা পানি গুলোর দিকে যেগুলো চিক চিক করছে ৷ সমুদ্রকে দেখলে বুঝা যায় যে সে জীম করে নাহলে এরকম আকর্ষণীয় সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়৷
সমুদ্র ঝিনুকের অবস্তা দেখে মিটি মিটি হাসছে ৷ এক সময় সমুদ্র জোড়ে হেসে ফেলে ৷ ঝিনুক প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে সমুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বেলকনির দিকে চলে যায়৷ সে সময় সমুদ্র চেন্জ করে নিয়ে বেলকনিতে এসে ঝিনুককে পিছুন থেকে জরিয়ে ধরে ৷ গত চারদিনে ঝিনুক সমুদ্রের ছোয়া বুঝে গেছে আর এটাও বুঝে গেছে এই আরফান সমুদ্র মির্জা ছাড়া তাকে স্পর্শ করার মতো ক্ষমতা আর কারোর নেই৷ ঝিনুক ভয়টাকে দুরে ছুড়ে ফেলে আসতে করে সমুদ্রকে বললো “আমি আজ বাড়ির সকলের সাথে লান্চ করতে চাই প্লিজ না বলবেন না”
সমুদ্র কিছু বললো না হুট করে ঝিনুক কে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল……
.
.
চলবে……..
লিখেছেনঃ ফারহানা ছবি