–একটু আগেইতো রেগেমেঘে ছিলি,হঠাৎ আবার কি হলো?
–আগুনের মাঝে বৃষ্টির স্পর্শ।
–মানে?
–মেঘা।
–তাহলে কর্নফার্ম?
–হুমম।কিন্তু একটু প্রবলেম আছে।
–এখন আর কোনো প্রবলেমের কথা শুনতে চাই না।
–ঠিক আছে।আমি না হয় আমার সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজি।
–কয়টা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজবি তুই?
–ওয়েট,ওয়েট, মুন্নির হাজবেন্ট কি করে রে?
–সে ঢাকাতে চাকরি করে।ছুটি পেলে এই বাড়িতে চলে আসে নিজের বাড়িতে যায় না।
–ওর বাবা মা নেই?
–আছে তো। ঐ যে মুন্নী।
–মুন্নী কি সারাবছর এই বাড়িতে থাকে?
–হুম।
–আচ্ছা তাহলে একটা কথা বলতো, মেঘ চরিত্রটাকে মুন্নী হত্যা করতে চাইছে কেন?
–বলবো?
–তোর ইচ্ছে।
–আচ্ছা একটু বলি,বেশি বলতে পারবো না।
–বল শুনি,
–এই বাড়ি পুরোটা ফুপির। আর আশেপাশে সব সয় সম্পত্তিও ফুপির। ধরতে গেলে আমরা সবাই তার উপর নির্ভশীল হয়েই বেঁচে আছি।অবশ্য আব্বু, জেঠু, আমি, চাচ্চু, আমরা এখন কাজ করি।তবে দিন শেষে ফুপির উপরই নির্ভশীল।ফুপি এই বিশাল সম্পত্তি তোর নামে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলেছে।
–এই জন্যইতো বলি ঘটনা কোথায়।মেঘ চরিত্রটা সরাতে পারলেই এই সম্পত্তির ওয়ারিস থাকবে না। আর তরীকে সবাই মিলে এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে যেন ওর হাজবেন্টও এসবের কিছু না বুঝে।
–ঠিক ধরেছিস।
–কিন্তু আম্মুও তাদের দলে সামিল হলো কেন?
–আমার কি মনে হয় জানিস?
–কি?
–তরী তোর আপন বোন না।
–হতেও পারে, কিন্তু বোন হওয়ার সম্ভবনা বেশি।আমিতো ছোট বেলা দেখেছি।নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করা যায় না।
–হয়তো এমন কোনো ঘটনা আছে যা তুই জানিস না তোর আব্বু আম্মু জানে।
–হতে পারে। তবে তরী যদি আমার আপন বোনও না হয়, সে আমার আপন বোনের থেকেও হাজার গুন বেশিকিছু। ওর প্রতি অন্যায় আমি কখনো মেনে নিবো না।
–আর কিছু করতেও পারবি না। কালকেই তো বিয়ে।
–সেটাই ভাবছি।আচ্ছা ঘুমাতো রাত অনেক হয়েছে।
–গুড নাইট।
বারান্দায় দাড়িয়ে উঠুনের সব কার্যকলাপ লক্ষ করছি৷ সবার মুখে আনন্দ উচ্ছাস। হয়তো তরীকে বিদায় করে পথের কাটা একটু দূর করতে পারবে সেটা ভাবছে।কি একটা সমস্যায় আছি।তরীর বিয়েটা যে আটকাবো তেমন কোনো উপায় হাতে নেই। মুটকোটা যদি আবার মাঝে থেকে বা হাত না ঢুকাতো তাহলে চলতো।এতোদিনে তরীর বিয়েটা আটকাতে পারতাম। আমার সব প্লেন বেস্তে দিলো সে। আনাসের মোবাইলও বন্ধ। কে জানে আবার কি গবেষণার কাজে বসেছে।আনাস থাকলে আমাকে বুদ্ধি দিতে পারতো।
কোথা থেকে মেঘা এসে বললো,
–এই, আমাকে কোন শাড়িতে মানাবে বলোতো?
–প্লিজ মেঘা এমনি মানুষিক প্রেসারে আছি।এসব ভালো লাগছে না।
–কি হয়েছে আবার?
–তুমি জানো না?
–নাতো?
–জনতে হবে না।অযথা দুশ্চিন্তা করবে।
–আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি বেশি দুশ্চিন্তা করো না।।
–দুশ্চিন্তা করতে কে চায়? দুশ্চিন্তা যদি কাঁধের উপর এসে ভর করে আমি কি করবো?
–ঝেড়ে ফেলে দাও?
–এগুলো ফেলনা দুশ্চিন্তা নয়। যাওতো এখান থেকে।
মেঘা চলে গেলো। মেঘমিলন
আজকে আমি উপস্থিত থেকেও তরীর এতো বড় সর্বনাস হবে সেটাও আমাকে চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে,এর থেকে বর ব্যর্থতা কি আছে আর আমার জীবনে?
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো, বিয়ের অনুষ্ঠান ক্রমশ নিকট বর্তি হতে লাগলো। আমার মনের মাঝে ক্রমশ অস্থিরতা বাড়ছে।
হঠাৎ খবর আসলো পাত্রকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাত্রের বাড়ি থেকেই নাকি মিসিং হয়েছে। মনে মনে অনেক খুশি হলাম।এরকম একটা অলৈকিক কিছু চেয়েছিলাম বিধাতার কাছে। তবে চিন্তার বিষয়, যে ছেলে বাড়ি থেকেই বের হয় না সে আজকের এমন একটা দিনে মিসিং হলো কি করে? কে করলো? এটাতো পরিকল্পিত আমি সিউর।
গালিব আমাকে টেনে নিয়ে আসলো একটু আড়ালে,
–তুই একদম ছেলেটাকে ঘোম করে দিলি?
–কি আশ্চর্য আমি..
–হয়েছে হয়েছে আর সাধু সাজতে হবে না। আমি জানতাম তুই এমন কিছু একটা করবি।।
–আরে,,,
–হয়েছে চল, এখন দেখা যাক কি হয়।
সন্ধ্যা পর্যন্ত পাত্রের জন্য অপেক্ষা করলো সবাই। কিন্তু পাত্রের আর কোনো হদিস নেই। কয়েক দফা পুলিশ এসেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু কোনো সন্ধান মিললো না। আমাদের সমাজে আবার একটি জিনিস ভালো,বিয়ের মাঝে এমন কোনো বিষয় ঘটলে সবাই পাত্রীকে দোষারোপ করে। সেটাও তরীর ক্ষেত্রে হলো। সবার মুখে একটাই কথা তরী অলুক্ষনে। সবাই কে শান্ত করে মুটকো বলে উঠলো,
–সবাই চুপ করো,কি হচ্ছে কি এখানে?
নিমিষেই মজলিসের সবাই চুপ হয়ে গেলো।
–যেহেতু এখানে একটা ঘটনা ঘটে গেছে এটা নিয়ে এতো কথা কিসের? তরীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে বিয়েটাও হবে।
আম্মু বললো,
–কিভাবে?
–আমি বলছি কিভাবে হবে। সবাই চুপ থাকো দয়া করে।। এই গালিব এদিকে আস?
আমার চোখতো কপালে উঠে গেলো। মটু কি করছে? উপস্থিত সবাই অবাক।
মটু আবার বললো,
–মেঝো মামা আর মামানি এদিকে আসেন।
তিনজন এগিয়ে গেলে স্টেজে।। আমি একটু দূর থেকে দাড়িয়ে দেখছি কি হয়।
–মামা আমি একটা কথা বললে রাখবেন তো?
–কি কথা বল,
–তরী আমার বোন,আমি ভাই হয়ে তার এতোবড় সর্বনাশ হতে দিতে পারি না। আমি চাই আপনরা তরীকে নিজের পুত্র বধু করে ঘরে নিবেন।
আমি অনবরত চোখের পাতা ফেলছি, কি বলছে সে। ভেবেছিলাম মামা মামি মেনে নিবে না।কিন্তু আমার ভাবনার বিপরীত হলো।তারা দুজনেই সম্মতি জানালো। এবার চিন্তায় পরে গেলাম গালিব মানবে কি না? তরী একটা বোবা মেয়ে,আর গালিব একটা ইঞ্জিনিয়ার ছেলে। মেনে নিবে তো?
মটু এবার গালিব কে বললো,
–কিরে গালিব,তুই কি বলিস?
–আব্বু আম্মু যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই আমার সিদ্ধান্ত।
–আলহামদুলিল্লাহ।
রাত দশটার সময় ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যার ঘটনায় আমি বেশ অবাক।এটা একদম মীরাক্কেলের উপর মীরাক্কেল। মটু সম্ভবত নিজের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য এমনটা করেছে।না হয় দূর দুরান্তের মেহমানদের মাঝে একটু হলেও অন্য রকম সন্দেহের কারন হয়ে যেতো।
–এ্যাহেম, এহ্যামে।
–তুই এখানে?
–মেঘ তোর থেকে আমি অনেক কথা লুকিয়েছি তার জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি।
–তার কোনো দরকার নেই,এখন বল তরীকে তুই সত্যি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবি? নাকি আমি আমার সাথে ইউএস নিয়ে যাবো?
–তুই কে? কত সাধানার পরে আমি তরীকে পেয়েছি জানিস?
–মানে?
–সেই কথা গুলো বলতেই এসেছি।
–বল কি বলবি?
— তরীকে আমি অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতাম।
আমি ছোট্ট একটা কাঁশি দিয়ে বললাম,
–আমি তরীর বড় ভাই।
–এটা ভুলে গেলে চলবে না তুমি আমার বেষ্টফ্রেন্ডও।
–তবুও।
–আগে কথা শুন।
–বল।
–তরীও আমাকে পছন্দ করে।কিন্তু কোনো ভাবেই পরিবারকে বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। কেননা পরিবারের সঙ্গে তরীর অবস্থানটা দেখতেই পাচ্ছিস।
–আমার থেকে লুকিয়েছিলি কেন?
–বোনটা তোর, যদি তুই না করিস তখন বন্ধুত্ত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হবে।আর আমার সম্পর্কটা মুন্নী আপু জেনে গিয়েছিলি। আমিও তার অনেক কু-কর্মের কথা জানতাম। কিন্তু প্রমান ছিলো না। আর মন্নী আপু আমার আর তরীর এক সাথের অনেক গুলো ছবি তুলেছিলো সেগুলো দিয়ে ব্লাক মেইল করতো।বলেছিলো তার এসব কথা যদি প্রকাশ করি তাহলে আমাদের সম্পর্কের কথা বলে দিবে তাই তোকে কিছু বলিনি আগে।
–এই জন্যই মাঝে মাঝে কান্না করতি?
–আমি তো মনে করেছিলাম হাড়িয়ে ফেলবো।
–আর কিছু না পেরে অটিস্টিক ছেলেটাকে ঘোম করে দিলি?
–গড প্রমিস মেঘ,আমি কিছু করিনি।
–এই যে দুলাভাই? ননদ তো অপেক্ষা করছে আপনার জন্য?
পেছনে তাকিয়ে দেখি মেঘা।
–আপনার ননদের কি আর সহ্য হচ্ছে না?
–গাধা বউয়ের বড় ভাই এখানে।
–তো কি হইছে?সে যেমন তরীর বড় ভাই তেমনি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।একের ভিতরে অনেক।
–যানতো এখন।
গালিব চলে গেলে। মেঘা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও মেঘার দিকে তাকিয়ে আছি।
–কি?
–কোথায় কি?
–এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
–মনে হয় শেষ বারের মতো দেখছি।কাল সকালে চলে যাবো।
–শেষ বার মানে কি?
–কিছু করতে না পারলে শেষ বারই তো।
–কে বলেছে কিছু করবো না? যেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম সেই চিন্তাটাতো কেঁটেছে।
— অপেক্ষায় রইলাম কি করতে পারো সেটা দেখার।
পরের দিন আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে। আমাকে চিলেকোঠার রুমটায় থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিলো। অবশ্য আমিই বলেছিলাম। আমি রুমে শুয়ে ছিলাম।হঠাৎ গালিব দৌড়ে আসলো আমার রুমে।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
–তুই এটা কি করলি?
–আমি আবার কি করলাম?
–ছোট মামির,ছোট মামির,
–কি ছোট মামির?
–ডান হাতটা একেবারে কেঁটেই দিলি?
–হোয়াট!
–কিভাবে পারলি এটা?
–বলছিস কি এসব?
–আমি কিছু ভাবতে পারছি না।
–গালিব বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি। আমার মৃত বাবার কছম।
–তাহলে কে করলো?
–মামি এখন কোথায়? জেলা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
–দুপুরে তরীর বর মিসিং হওয়া আর এখনের এই ঘটনাটা বেশ চিন্তায় ফেলে দিলো?
–আমার মনে হয় আমাদের অগোচরে কোনো তৃতীয় পক্ষ তরীর হয়ে কাজ করছে।
–আমার মাথায় কিছু আসছে না।একটা চিন্তা শেষ হতে না হতেই আরেক চিন্তা এসে মাথায় ঢুকলো।চল হসপিটালে চল, মামিকে দেখতে যেতে হবে।
–ওয়েট, আমার ইতিমধ্যে একজনকে সন্দেহ হচ্ছে।
–কাকে?
–চল আমার সাথে।
·
·
চলবে……
লিখেছেনঃ নিহান আহমেদ আনিছ
Previous Articleতুমি আছো তাই | পর্বঃ ৮
Next Article হ্যাকার দ্যা রকস্টার | পর্বঃ ৮
Related Posts
Add A Comment