–এই থানার এস আই আছে না?
–হুম।।
–ওনি আমার একজন বেষ্ট ফ্রেন্ডের বড় ভাই। ওনি গত ৪ বছর ধরেই এই থানায় আছে।সাপ্তাহে কম পক্ষে ৫বার এই বাড়িতে আসে। অবশ্য ফুপির কাজের জন্যই আসে।ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ফুপির পুরোনো পি এ, আর পি এস এর কথা। তারপর ওনি বলে তাদের মৃত্যুর কথা।
–আচ্ছা খুঁনিকে ধরতে পেরেছিলো কিনা বলেনি?
–পারেনি। তাদের পরিবার থেকেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি আর উপযুক্ত প্রামানও পায়নি।
–আমার কাছে সব হিসেব এখন পানির মতো ক্লিয়ার।
–কিসের হিসাব?
–দুই বছর আগে যখন আম্মু আব্বুর কাছে যায়, তখন নিশ্চয়ই তার পিএস আর পিএ সাথে ছিলো। না হয় জানতো যে আম্মু ঢাকায় আব্বুর কাছে যাবে।আর সেদিন আম্মু আব্বুকে কোনো কারন বসত হত্যা করে। আই এম সিউর সেই পিএস আর পিএ রা ঘটনাটি জানতো।তখন আম্মু বুদ্ধি করে দুজনকে এক দিনে চাকরি থেকে থেকে বহিস্কার করে। তারপর দুজনকেই নিখুঁত কোনো প্লেন করে মেরে ফেলে।
–একটা মার্ডার চাপা দিতে আরো দুইটি মার্ডার?!
–হুমম।
–তবুও অনুমানের উপর কিছু বলা ঠিক না।
–হুমম, এই জন্যই ওদের দুজনের বাড়িতে যাওয়া লাগবে।
–ঠিক আছে,আগে বিয়ের ঝামেলা শেষ হউক?
–বিয়ে হলে তো?
–বিয়ে কিভাবে আটকিয়ে রাখবি?
–দেখি না কি করা যায়।
–ওই যে দেখ পুলিশের ড্রেসের লোকটা?
–ওনিই?
–হুমম।
–ওনাকেও হাতে রাখলাম। এখন আমি এক যায়গায় যাবো।
–কোথায় যাবি?
–বলবো না।
–বুঝেছি। আচ্ছা যা, তবে সাবধানে।
–ওকে।
–আর শুন?
–কি?
–মটুর বিয়ের কথা চলছে।
–বলিস কি? সালা বংশ বিস্তারও করবে নাকি?
–কি জানি।
–ওর এমন অবস্থা করবো বংশ বিস্তার করার ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলবে।
–বলাটা সহজ।
–করেও দেখাবো।আচ্ছা পরে কি হয় আমাকে বলিস।
–ওকে।
–এই শাড়ি পড়লে কখন?
–বাড়ি থেকে পড়ে এসেছিলাম।
–তোমার হাজবেন্টের কপাল খারাপ।
–কেন?
–অধিকাংশ ছেলেরা অপেক্ষায় থাকে তার বউকে সে নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিবে।তুমিতো দেখছি শাড়ি পড়ায় এক্সপার্ট।
–সমস্যা কি? বিয়ের পর না হয় শাড়ি পড়তে না পারার ভান ধরবো।
–তাও ঠিক।ভালোবাসা আদায় করার ইচ্ছে থাকলে যেকোনো পন্থাই অবলম্বন করা যায়।
–আপনি দেখছি এসবে অভিজ্ঞ।
–না,দুইদিন হলো নিজের মাঝে কবি কবি ভাব লক্ষ করছি।
–আপনি যেই টাইপের মানুষ এটাতো কোনো ভাবে সম্ভব না।
–আমি কি বেশিই খারাপ?
–সেটা জানিনা। তবে কবি হতে হলে কোমল হৃদয়ের একটা মন লাগে।
–ভুল।
–কিভাবে?
–লেখকদের জীনটা একটা অদ্ভুত জীবন। আমরা সাধারণতো যেই পেশায় বা যেভাবে দিন পার করি,সেভাবেই জীবনটা পার করি। কিন্তু রাইটার রা তার ভিন্ন। সে যে সময় যেই উপন্যাস কিংবা গল্প লিখে সে সময় ঐ রকম চরিত্রের ভিতরে প্রবেশ করে। গিরগিটির মতো আরকি। তাই রাইটারদের লেখা পড়ে তার বাস্তবটা কিংবা তার চরিত্র সে রকম ভাবা বোকামি ছাড়া কিছুই না। {বিঃদ্রঃ যারা প্রশ্নটি করেছিলেন উত্তরটা পেয়েছেন নিশ্চয়ই }
–বুঝেছি,আপনি রাইটার না দেখে রাইটারদের নামে দূর্নাম ছড়াচ্ছেন।
–বুঝের মানুষকে বুঝানো বেশ কষ্টের। আচ্ছা শাপলা বিল কোথায়?
–আর এক মিনিট হাঁটলেই হবে।
পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পরেছে সেই কখন।এখন ক্রমশ সে লাল বর্ণ ধারন করছে।একটা ছোট্ট ডিঙি নৌকা সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাড়া নিলাম। আমি একপাশে বৈঠা হাতে নৌকা বাইছি। মেঘা বিপরীতে পাশে বসে বিলের পানি স্পর্শ করছে আর মুচকি হাঁসছে। সূর্যের রক্তিম আলো সরাসরি মায়াবতীর মুখে পড়ছে।তাতে যেন মেঘার মুখের মায়া হাজারগুন বৃদ্ধি পেয়ে তার রূপে এনেছে এক অন্য রকম সুন্দর্য।খোলা কেঁশে এমন মায়াবতীকে দেখলে পাগল হবে না এমন যুবক এই দেশে পাওয়া দূষ্কর। তাজমহলের রং যেমন সূর্যের আলোর সাথে পরিবর্তন হয়, তেমনি এই মেয়ের চেহারায় ভিবিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি ধারণ হয়। খুব ইচ্ছে করছে একটা শাপলা ফুল ওর কানে গুঁজে দিয়ে বলি শাপলা ফুলটা চেয়ে আছে তোমার পানে,তাই তাকে তার উপযুক্ত স্থানে বসিয়ে দিয়ে ধন্য করলাম। কিন্তু বিকেল বেলা তাই একটা শাপলাও ফুটন্ত পেলাম না।
–একটু দূরে পদ্মবিল আছে যাবেন?
–কতক্ষণ লাগবে?
–১০ মিনিটের মতো লাগবে।
এই প্রথম সামনে থেকে পদ্মবিল দেখলাম।এ যেন এক অন্য রকম দৃশ্য। প্রকৃতির অপরুপ নিদর্শন। মেঘা হতাশ মনে বলে উঠলো,
–ইচ্ছে করছে কি জানেন?
–কি ইচ্ছে করছে?
–এই বিল ধরেই অজনা কোথাও হাড়িয়ে যাই।যেখানে থাকবে না কড়া শাসন।কেউ আমার ইচ্ছে গুলোতে বাঁধা হয়ে দাড়াবে না।যেখানে আমার অনুভূতি গুলো নিজের ইচ্ছে মতো চলবে।সামনে থেকে পথ আগলে কেউ দাঁড়াবে না।
–ইচ্ছে থাকলে সংসারে থেকেও নিজের স্বপ্ন গুলো পূরন করা যায়।
–কিভাবে?
–কল্পনায়।
–বড়ই হাস্যকর।আমার বাস্তব চাই।
–তোমার হবু বর কি করে?
–ঐ বেটা বুইড়া কি করে কে জানে?
–কিহ্! ওনি বৃদ্ধ?
–বয়স চল্লিশ + তো হবেই।
–বয়স্ক লোকেরা কিন্তু বউ আদর করে বেশি। মধ্য প্রচ্যের দেশ গুলোতে কিন্তু বৃদ্ধরাই বেশি বিয়ে করে। তাও আবার কুমারী মেয়ে।
— এই যে মিস্টার আমি এখন মধ্যে প্রাচ্যে নেই।বাংলাদেশে আছি। কি জানি আমার ভবিষ্যৎ কি?।
–আচ্ছা তোমার পছন্দের মানুষটার কথাতো বললে না?
–বলেছি তো, সে আমার কাছে আকাশের চাঁদ। দেখেই যাই,শুধু স্পর্শ করার ক্ষমতা পাই নেই।
–আচ্ছা তোমার আকাশের চাঁদকে না হয় তুমি স্পর্শ করতে পারছো না। আমার আকাশের চাঁদকে কি আমি স্পর্শ করতে পারি?
— আপনি ভালো জানেন।সেটা আপনার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।
–ওহ্ তাই। তুমি কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।
–আপনার আকাশের চাঁদ, আমি কিছু বলবো কোন দুঃখে?
–সিউর?
–হুমম।
আমি পাশ থেকে একটা পদ্মফুল নিয়ে উঠে দাড়ালাম। এই সুযোগ কোনোভাবেই মিস করা যাবে না। আমাকে উঠতে দেখে মেঘা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। মুখের মাঝে বিস্ময়কর ছাঁপ।
এক হতে বৈঠা আর অন্য হাতে একটা পদ্মফুল। ধীরে দীরে বিপরীত পাশে গেলাম।
–আপনি এখানে কেন?
–চুপ।
–পড়ে যাবো তো?
–একটু সামনে বসো।
–আমি অন্য প্রান্তে গিয়ে বসি?
–ওয়েট।
–আমি মেঘার পিছনে গিয়ে বসলাম। মেঘা একটু অন্য দিকে গুরে তাকাতেই আমি তার কানের কাছের চুল গুলো সরিয়ে পদ্মফুলটা গেঁথে দিলাম। আমার স্পর্শে মেঘা কেঁপে উঠলো। থমকে গিয়ে পিছনে তাকালো।
–একি করছেন আপনি?
–অনুমতি নিয়েই করছি
–আমি আপনাকে কখন অনুমতি দিলাম?
–একটু আগেই তো?
–তাই বলে আমি!
–হুমম। তুমিই সেই মায়াবতী যে আমার কঠিন হৃদয়কে কোমল করেছো।জীবনে বহু নারীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, কিন্তু কাউকে মনে ধরেনি। কেন যেন মন চাইছে আমার নিঃসঙ্গ জীবনে তোমাকে সঙ্গী করে অদূর ভবিষ্যতে তোমাকে নিয়ে পথ চলতে।
মেঘার চোখের পানি কেন বুঝতে পারলাম না। এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,
–তীরে নিয়ে চলুন।
–আমার কথার জবাব?
–এটা কখনো হবার নয়।
–কেন?
–আপনাকে বলেও কোনো লাভ নেই।তীরে নিয়ে চলুন।
বাকি পথটা আর কথা হয়নি।এক সময় তীরে এসে পৌছলাম। মেঘা নৌকা থেকে নেমে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেলো। মেঘাকে কথাটা বলা ঠিক হলো কিনা ভাবছি।
ব্যর্থ প্রমিকের মতো হতাশ মনে শুয়ে আছি বিছানায়। কিছুই ভালো লাগছে না। এই দিকে প্রতি নিয়তো তরীর বিয়ে ঘনিয়ে আসছে।কিছু করার মতো উপায় হাতে নেই। সব গুলো বিষয় এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে।কোনটা রেখে কোনটা ভাববো সেটাও ভাবার বিষয়। আচ্ছা আমি কি একটা খুঁনীর পেটে জন্ম নিয়েছি? আম্মুতো একটা খুঁনি। একটা খুন নয়, তিনটে খুন করেছে। সবার অগোচরে আরো কত খুন করেছে কে জানে?
গালিব মেসেজ দিলো নিচে যেতে।
আমি প্রথমে ইতস্তত বোদ করলেও পরে রাজী হতে হলো।বিশেষ কথা আছে মনে হয়।
প্রমা আর গালিব বসে আছে। আমি গিয়ে বসলাম সেখানে।।
প্রমা বললো,
–ভাইয়া একটু এদিকে আসেন।
–কেন?
–যাস্ট দুই মিনিট।
প্রমার সাথে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি।
–মেঘাকে কি বলেছেন?
–কি বলেছি?
–সেটাই তো জিজ্ঞেস করেছি কি বলেছেন?
–বলেছিলাম অভাগার মনের কথা গুলো।
–আপনাকে সেদিন বলিনি প্রমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে?
–হুম। সেটা মেঘার ইচ্ছের বিরুদ্ধে।
–হুমম।তাতে কি?
–আচ্ছা বিয়েটা মেঘার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হচ্ছে কেন?
–আপনাকে বলেনি?
–না।
–অবশ্য আপনাকে বলেও লাভ নেই।
–বলে দেখতে পারো।
–ওর বিয়ে একটা বুড়োর সাথে ঠিক হয়েছে।
–কেন?
–ওর দুই ভাই, চার বোন। বোনদের মাঝে সে সব থেকে বড়। ওর বাবা নেই।ওর ভাইয়েরা এক সময় একটু উন্নত ছিলো।ব্যাংক থেকে বিরাট অংকের টাকা লোন নিয়ে একটা গার্মেন্ট দেয়। বেশি বড় না। মাঝরি আকারের। এক সময় কাঁচা মালের অভাবে ব্যবসায় ধ্বস নামে।বড় অংকের লোকসান গুনতে হয়। এমন অবস্থায় পড়েছিলো তাদের দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে দাড়িয়েছিলো। একটা সময় ওর বড় ভাইয়ের বন্ধু রফিক সাহেব তাদের সাহায্য করে।তাদের আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে আবার গার্মেন্টসটি চালু করে।
–তারপর?
–তারপর আর কি, রফিক সাহেবের স্ত্রী মারা গিয়েছিল অনেক আগে।পরে আর বিয়ে করেনি।এক সময় সে মেঘাকে বিয়ে করার জন্য বলে, অবশ্য সে নিজে বলেনি,লোকজন দিয়ে বলিয়েছে।ওর ভাইয়ারাও আর না করতে পারেনি।
–ভেবেছিলাম টাকার মামলা,কিন্তু এখানে অন্য কিছুও জরিয়ে আছে। আচ্ছা মেঘাতো আমাকে বললে পারতো।এভাবে কান্না করলো কেন?
–সেটা আমি জানিনা। মেঘাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।
–সে কি আর আমার সাথে কথা বলবে?
–তাও তো কথা। আচ্ছা আপনার ফোন নাম্বারটা আমাকে দেন।।
–০১৭৬৪৭৭৭৮
–আমার মেসেজের অপেক্ষা করবেন ওকে?
–ওকে।
মুন্নীর সেই ভাড়াটিয়া গুন্ডা গুলোকে দেখা যাচ্ছে না মুটকো আসার পর থেকে। তাহলে আমি সিউর নকল মেঘকে উপস্থিত করানো মুন্নীর কাজ। আর এই দিকে গালিবকে নিয়ে আছি আরেক সমস্যায়। ওর হঠাৎ হঠাৎ কি যেন হয়ে যায়। এতোবড় একটা ছেলে কান্না করবে কেন? এতো সহজে কান্না করার মতো ছেলে তো সে নয়। ওর কান্না করার কারনটা আগে জানতে হবে।
খেতে বসেছি সবাই এক সাথে। মেঘাকে আর প্রমাকে দেখা যাচ্ছে না। কি হলো আবার কে জানে৷ তরীকে দেখলাম সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছে। সব গুলো রাক্ষস গপগপ করে খাচ্ছে। আমার পেটে খাবার যাচ্ছে না। নিজের চোখে নিজের বোনের এই অবস্থা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আম্মু কেন তরীর সাথে এমন করছে বুঝতে পারছি। ওনার তো আপন মেয়ে। মা বাবা বাস্তবে যত খারাপ হোক সন্তানকে কষ্ট দেয় না। মুটকোটাকে কেমন নিজের হাতে তুলে তুলে খাওয়াচ্ছে।
আমি প্লেটের উপর হাত নারছি আর আড় চোখে তরীকে দেখছি। সবার দিকে কেমন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর মনটা হয়তো চাচ্ছে সবার সাথে বসে খাবার খেতে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
ছোট মামির প্লেটে ভাত দিতে গিয়ে তরীর হাতের কনুইতে লেগে আচমকা সবজির বাটি থেকে মামির শাড়িতে কয়েক ফোটা ঝোল পড়ে গেলো। মামি রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো। বসা থেকে উঠে স্বজুরে দুই টা থাপ্পড় দিলো তরীকে। তরী চোট সামলাতে না পেরে দুই তিন হাত দূরে গিয়ে চলে গেলো। আমার শরীরের প্রতিটা পশম দাঁড়িয়ে গেলো। তরীর দিকে না তাকিয়ে আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি। ওনি এমন ভাবে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হয়নি।আমি টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা টেবিলের নিচে নিয়ে একচাপে ভেঙে ফেললাম। সবাই চমকে গিয়ে বললো,
–কি হয়েছে?
গালিব কথা ঘুরানোর ছলে বললো,
–পানির গ্লাসটা আচমকা পড়ে গিয়েছে।
–ওহ্।
হাত বেয়ে বেয়ে রক্ত পরছে সেদিকে খেয়াল নেই। আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি শুধু এক দৃষ্টিতে। সে তরীর আসল মা নয়। একজন মায়ের সামনে কখনো অন্যকেউ তার সন্তানকে মেরে হজম করতে পারবে না। মামির দিকে তাকালাম না, তরী আর মামির দিকে যদি তাকাই তাহলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। দেখা যাবে খাবারের প্লেট ছুড়ে মেরেছি মামির মুখ বরাবর।চেয়ার থেকে উঠে সুজা গালিবের রুমে চলে আসলাম।
–সুইচগিয়ার দিয়ে কি করবি?
–ঘুমের ভিতরেই তোর চাচিকে জবাই করবো।
–মাথা ঠান্ডা কর মেঘ।
–অনেক মাথা ঠান্ডা রেখেছি,আর না। আমার পুরো কেরিয়ারে এক সাথে এতোদিন কখনো মাথা ঠান্ডা রাখিনি।
–বুঝার চেষ্টা কর, বাড়ির কারোরই দূষ নেই, তোর আম্মুই তো সবাইকে লায় দিয়েছে।।
–কেন দিয়েছে?
–সেটাতো আমি জানি না।
–সর সামনে থেকে।
–আরে দূর,পাগলামি করিস না। বিয়ের আরো ১ দিন বাকি।আগে বিয়েটা আটকাতে হবে তারপর বাকি কিছু।
–ঠিক আছে,তবে আমি যদি বেঁচে থাকি ফিউচারে ছোট মামীর একটা হাত ছাড়া জীবন পার করতে হবে বলে দিলাম। কত বড় সাহস, আমার সামনে আমার বোনের গায়ে হাত তুলে।
হাতে কোনো রকম অনেক গুলো ওয়ান টাইম পেচিয়ে রক্ত বন্ধ করেছি। অনেক অংশ কেটেছে। সকালে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
রাত ১০টার দিকে প্রমার মোবাইল থেকে মেসেজ আসলো,
~শব্দহীন পায়ে ১ মিনিটের ভিতরে ছাঁদে আসুন আমিও যেন না বুঝি আপনি ছাঁদে এসেছেন।
–ওকে।
ছাঁদের উত্তর কর্ণারে একটা লাইট জ্বলছে।মেঘা আর প্রমা দক্ষিণ প্রান্তে বসে আছে অন্য দিকে মুখ করে।এখন সেখানে যেতেও পারছি না।আমি গেলে নিশ্চিত বুঝে যাবে।আমি গেইটের কাছ থেকে লাইটের সুইচটা অফ করে দিলাম।
একদম আস্তে আস্তে সেখানে গেলাম। তাদের থেকে একটু দূরে। ফুলের টপ গুলোর কাছে গিয়ে বসলাম। যেন বুঝতে না পারে।
–হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো কেন?
–আরে বিদ্যুৎ যায়নি,মনে হয় লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। জোনাকির আলো আছে তো।
–হুম।
–আচ্ছা তুই কি সত্যি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস বুড়োটাকে বিয়ে করবি?
–তাছাড়া আর উপায় নেই।
–মেঘ ভাইয়া তোকে এতো পছন্দ করে,ওনার কথা একটুও ভাববি না?
–তুই যেভাবে বলছিস আমি বোধ-হয় ওনাকে ভালোবাসি না?
–তাহলে আবার সিদ্ধান্ত অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিস কেন? যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নে।।
–আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।বিয়েটাও আটকাতে পারছি না,মেঘকেও কিছু বলতে পারছি না।
–তোর ভাইদের একটু বলে দেখলেই তো পারিস?
–দেখ প্রমা,এখানে মানবিক কারনও জরিয়ে আছে। ওনি আমাদের কঠিন সময়ে এসে পাশে দাড়িয়েছিলো।ভাইয়ারা আমার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আমার ইচ্ছে বা মতামত সেখানে তুচ্ছ।
–তো মেঘ ভাইয়া প্রপোস করার পর কান্না করেছিলি কেন?
–বললে হয়তো বিশ্বাস করবি কি না জানিনা, তবুও বলছি, সেদিন বাসেই ওনাকে আমার অনেক ভালোলাগে।ওনার হুটহাট রেগে যাওয়া আবার নিমিষেই শান্ত হয়ে যাওয়া সব কিছুই আমার ভালোলাগে। সেদিন ইচ্ছে করেই ওনার কোলে শুয়ে ছিলাম।শুধু ওনার এক্সপ্রেশনটা দেখার জন্য। ঘাটের কাছে আসতেই বুড়োটা মেসেজ দিলো সে নাকি স্টেশনে দাড়িয়ে আছে। ভেবেছিলাম আর বোধহয় ওনার সাথে দেখা হবে না।ভাগ্যিস তোকে ছবি গুলো পাঠিয়েছিলাম।আবার তোর পূর্ব পরিচিত ছিলো।না হয় আজকে বিকেলের মতো কোনো সুন্দর একটা মূর্হত আমার জীবনে আসতো না।।
–সব ঠি আছে,কেঁদেছিলি কেন?
–আমি কখনো ভাবিনি ওনিও আমাকে পছন্দ করে। হঠাৎ যখন আমাকে বলে বসলো তখন অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।যখনি আমি আমার মনের কথা গুলো বলতে যাবো তখনি বুড়োটার কথা মনে হলো।ওনাকে এতো কাছে আর এভাবে পেয়েও হাড়ালাম সেটা ভাবতেই আমার মনের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেলো।নিজেকে খুব কষ্টে সংযত রেখেছিলাম। কিন্তু চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।।
–আচ্ছা আমি বলি মেঘ ভাইয়াকে? বলবো, আপনাকে মেঘাও পছন্দ করতো কিন্তু কোনো কারনে আপনাকে গ্রহন করতে পারছে না।
–না।পড়ে দেখা যাবে কোনো তুমুল কান্ড ঘটিয়ে বসেছে।যেই পাগল বিশ্বাস নেই।আচ্ছা একটা কথা বলতো আমার মতো একটা মেয়ে ওনার স্টেটাসের সাথে যায়? আমি দেখতে সুন্দরীও না।আর ওনি একটা সুদর্শন যুবক। কি ভেবে আমাকে পছন্দ করলো?
–এই প্রশ্নের জবাবতো এখন মেঘ ভাইয়া দিবে।
–মানে?
–কোথায় রুমিও,
আড়াল থেকে বললাম,
–উপস্থিত।
আমাকে দেখে মেঘা থমকে গেলো।প্রমা খুব জোরে জোরে হাঁসছে,তবে আমার মুখে হাসি নেই,ভালোবাসি বললেই পারতো,পরে দেখতো আমি কিছু করি কি না।অকারনে সন্ধ্যা থেকে এই পর্যন্ত কষ্ট দেওয়ার ফল এখন ভোগ করতে হবে। আড়াল থেকে উঠে তাদের কাছে গেলাম
–মজনু ভাইয়া, লাইলিকে একটু বলেন কি জন্য ওনাকে এতো পছন্দ করেন। আমি গেলাম।
প্রমা চলে যাচ্ছে। মেঘাও চলে যাচ্ছিলো আমি মেঘার হাতটি পিছনে থেকে ধরে আমার দিকে ফিরিয়ে ওর হাতটি উল্টিয়ে ওর পিঠে ধরলাম।
–আউ,হাত ভেঙ্গে যাচ্ছে।
–ভাঙ্গুক।
–ব্যাথা পাচ্ছি।
–আদর করার জন্য ধরেনি।
মেঘাকে টান দিয়ে একদম আমার কাছে নিয়ে আসলাম।
মেঘার কপালের সাথে আমার কপাল রেখে বললাম,
–পছন্দ সবাইকে করা যায়,ভালো কয়জনকে বাসা যায়?
–সেটা আমি কি জানি?
–আমি তোমাকে পছন্দ করি না।ডিরেক্ট ভালোবাসি।
–দেখুন আ,আমি..
মেঘাকে কিছু বলতে না দিয়ে হাতের মাঝে আবার হালকা করে চাপ দিলাম।
–আউ,,,
–যতক্ষণ না বলবে ভালোবাসি ততোক্ষণ আর ছাড়ছি না।
–ভালোবাসি বললেই তো আর ফিউচারে মিলন হবে না।অযথা দুজনেই কষ্ট পেয়ে কি লাভ?
–সেটা বিধাতা জানে মিলন হবে কি হবে না।
–আপনি বুঝতে পারছেন না।
–দেখো মেঘা, এমনি চারদিকের চিন্তায় আমি নিজের ভিতরে নিজে শেষ হয়ে যাচ্ছি। এর মাঝেও সন্ধ্যা থেকে এই পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে ছিলাম দুশ্চিন্তায়।
–আমিও আপনাকে নিয়ে কম চিন্তা করিনি।আমি কি চাই না আপনার সাথে থাকতে?
–তাহলে পালিয়ে বেড়াচ্ছো কেন?
–ভাগ্য দুষে।
–এই পরিবারের ঝামেলাটা আগে কাটিয়ে নেই, তারপর বুড়োটাকে দেখছি।
–আপনার হাত ভেজা লাগছে কেন?
আমি মেঘার হাতটি ছেড়ে দিলাম। অনেকক্ষণ যাবৎ-ই লক্ষ করছিলাম হাতে ব্যাথা।তবুও ধরে রেখেছিলাম।
–একি আপনার হাতে রক্ত?
–চুপ! এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। এই সামান্য রক্ত গুলো না ঝাড়ালে আজকে এই বাড়িতে একটা খুঁন হতো।।
·
·
চলবে…………………………….
লিখেছেনঃ নিহান আহমেদ আনিছ