বড় করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সিঁড়িতে বসে পড়লাম।যায়ই একটা সুযোগ ছিলো,সব শেষ। এখন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিভাবে বের করবো বাবার খুনের রহস্য? কিভাবে নিজে পাওয়া প্রতিটা কষ্ট মারজানা বেগমকে ফিরিয়ে দিবো?এতোদূর ছুটে আসার স্বার্থকতা কি?শুধু এই টুকু স্বার্থকতা তরীর বিয়েটা দেখতে পাবো।মনে হচ্ছে বাবার খুনের রহস্য, রহস্যই থেকে যাবে। গালিবও এসে আমার পাশে বসলো।ওর মনেও হতাশার ছাঁপ।
–এখন কিভাবে কি করবি?
–চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
–আচ্ছা এটা কার কাজ হতে পারে?
–যার প্লেনই হোক,সে আমাদের প্লেন সম্পর্কে জানে।
–কিভাবে বুঝলি?
–এতো নিখুঁত প্লেন কার মাথায় বা আসতে পারে?
–আরে মুন্নী আপুকে তুই চিনিস না।ওনার হাজবেন্ট আর ওনি যেই বদ।
–তোর মুখে এসব তো মানায় না। আরো বেশি করে কথা পেটে রাখ।
–তুই শুধু শুধু আমাকে দুষছিস।
–তুই তো নিষ্পাপ মুন্না।
–আবার মুন্না কে?
–সিনেমার ডায়ালগ। আচ্ছা চল মার্কেটে যেতে হবে।
–কেন?
–নাস্তা করবো।।
–আরে ভাই, মার্কেটে যেতে হবে না। সবার সাথে নাস্তা করবি।
–এখন কিন্তু মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।
–আচ্ছা চল।।
গালিবের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। গালিবটা আবার কোথায় যেন হাড়িয়ে গেলো।আমি তার বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপছি। আবার উদয় হলো সেই প্রমা চৌধুরী। এবার এসেই তো সরাসরি বললো,
–মেঘ বাবুকে বেশ চিন্তিত লাগছে?
আমি আঁতকে উঠলাম তার কথা শুনে।
আমি বিস্মিত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। চেষ্টা করছি চেনা যায় কি না। কিন্তু না সে অপরিচিত ।
–কে আপনি?
–খুঁজ নিয়ে দেখেন কে আমি।
–আপনি জানলেন কি করে আমি মেঘ?
–সত্য কখনো গোপন থাকে না।
–কি চান আপনি?
–ভালোবাসা।
–কার?
–সময় হলে বলবো।
–আগে আগে বলে দেই।আমি কিন্তু পারবো না।
–সময় হলে দেখা যাবে। আমাকে আপনি আপনি করবেন না। বয়সে ছোট।
— ঠিক আছে। কিন্তু তুমি জানলে কি করে আমি মেঘ?
মেয়েটা মোবাইল হাতে নিয়ে একটা ছবি আমাকে দেখালো।
আমি রীতিমতো স্তব্ধ। বুকের ভিতর অদ্ভুত শিহরিন বয়ে গেলো।এটা তো সেই মায়াবতী মেঘা! এতোক্ষণে প্রমা নামটা ক্লিয়ার বুঝতে পারলাম। মেঘা বলেছিলো তার বান্ধবীর প্রমার কথা।হ্যা মেঘাই বলেছিলো। কিন্তু সে তো বলেছিলো তার বান্ধবী এক্সামের কারনে তার সাথে আসতে পারেনি।আবার প্রমা এখানেই বা কি করে? সে কি হয় এই বাড়ির?
–কি হলো চিনতে পারছেন?
–হুমম। তোমার বেপারে সব কিছু রহস্যই রয়ে গেলো।
–ক্লিয়ার হবে কিছুদিনের ভিতরে।তার আগেও হতে পারে।
–একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
–কি?
–যদি কিছু মনে না করেন।
–মেঘা সম্পর্কে জানতে চাইছেন?
ও মাই গড! এই মেয়েতো দেখছি অনেক ফাস্ট।
–মেঘার আসা ছেড়ে দেন।
–কেন?
–ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
–আমি ওর আসায় বসে আছি সেটা কে বললো তোমাকে?
–অনুমান করলাম।
–ভুল, আমি তার কাছ থেকে টাকা পাই। তুমি যেভাবে পারো মেঘাকে আমার সাথে একটি বার দেখা করার সুযোগ করে দাও।
–ছোট বেলায় খেয়েছি সুজি,
একটু হলেও বুঝি।
সমস্যা নেই আমি দেখা করাবো নে। তবে আমার বেপারটা মাথায় রাখতে হবে।
–দেখা যাক।
–ঠিক আছে। ভয় পাবেন না মেঘ চৌধুরী। আমি আছি আপনার সাথে। বন্ধু ভাবতে পারেন।
–যখন উপকারে আসবে তখন না হয় বন্ধত্বের হাতটা বাড়াবো।
–অপেক্ষায় রইলা।
মেয়েটাকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই।সে এতোকিছু জানে কি করে? যত সময় যাচ্ছে ততো রহস্যের সম্মুখীন হচ্ছি। এই রহস্যের শেষ কবে? না জানি এখান থেকে শেষমেশ পাবনার বাস ধরতে হয়। গালিব টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রুমে প্রবেস করলো। আমাকে দেখে আরো তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেললো।
–কাঁদছিলি কেন?
–কোথায়?
–দেখ গালিব,আমার থেকে কিছু লুকানো হবে তোর সব থেকে বড় বোকামি।
–আরে না। তোর থেকে কি লুকাবো?
–তোকে নিয়ে আর পারলাম না।আচ্ছা প্রমা মেয়েটা কে?
–প্রমা আবার কি করেছে?
–না কিছু করেনি। এমনি জিজ্ঞেস করলাম আরকি।
–সে তো আমার ছোট বোন।
–আপন?
–কি সব পাগলের মতো বলছিস? পর হতে যাবে কেন?
–ভালো। এখন চল,পেটে আগুন লেগে আছে।
–ওয়েট, একটা টি-শার্ট পরে নেই।
সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখলাম সবাই বসে নাস্তা করছে।আমি আর গালিব পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম,কিন্তু বড় মামার ডাকে থেমে যেতে হলো।
–এই গালিব?
–জি জেঠু?
–সকালে নাস্তা না করে কোথায় যাচ্ছিস?
–জেঠু একটু মার্কেটে যাচ্ছি।
–কেন? সকাল সকাল এতো কিসের জরুরি?
–না মানে জেঠু, মে মি মিরাজ রেস্টুরেন্টে যাবে।
ছোট মামা বললো,
–রেস্টুরেন্টে আবার যাবি কেন?
–কাকু মিরাজ ব্রেকফাস্ট করবে।
মেজাজ খুব খারাপ হতে লাগলো। এতো পেচানোর কি দরকার একটা কিছু বলে চলে আসলেই তো হয়।
মেজো মামি বললো,
–এখানে ব্রেকফাস্ট করলে কি সমস্যা?
–না মানে আম্মু মিরাজ দীর্ঘ অনেক বছর আমেরিকায় ছিলোতো আমাদের সাধারণ বাঙ্গালী খাবার সে খেতে ইতস্তত বোধ করে।
চট করে মুন্নী বলে উঠলো,
–কালতো বলেছিলি ডেকোরেশনের লোক।
–আরে ডেকোরেশন ওর মামার। আর তাছাড়া আমি ইউএসে ওর ফ্লাটেই ছিলাম। আবার একই ভার্সিটিতে পড়তাম।
গালিবকে হাতে টানছি যাওয়ার জন্য। কিন্তু গালিবের মতলব যে অন্যটা ছিলো তা কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারি।
মেজো মামি এসে আমার হাত ধরে এক প্রকার জোর করেই টেবিলে নিয়ে বসালো। সাথে গালিবও বসলো। বড় মামা গালিবকে শ্বাসাচ্ছে।
–তুই দিনের দিন গর্দ্যব হচ্ছিস নাকি? একটা ফরেনার ছেলে আসলো তুই কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দিলি না।ছেলেটা কিভাবে আছে কি খায়, না খায়।
মেজো মামা আমাকে বললো,
–তুমি কিছু মনে করো না।আমার ঘরে এটা বলদ হয়েছে। আরে খেতে পারে না, তো খেয়ে অভ্যাশ করতে হবে না?
–থাক, হয়েছে আঙ্কেল। আমিই গালিবকে নিষেধ করেছিলাম।
এর ফাঁকে গালিব চট করে সুযোগ বুঝে বলে ফেললো,
–জেঠু,মিরাজকে কিছুদিন রাখতে চাই।ওর বাবা মা নেই তো শুধু ওর মামা আছে বাংলাদেশে। বলছিলাম কি আমার সাথে যদি ওর ছুটি পর্যন্ত সময়টা রেখে দিতাম?
–আরে এখানে বলাবলির কি আছে গালিব? সে থাকবে এখানে আমাদের সবার সাথে সময় কাটাবে। ওর নাম যেন কি বললি?
–মিরাজ।
–ওহ্ মিরাজ,তুমি যতদিন আছো একদম বাহিরের খাবার খাবে না। আমাদের বাড়িতে খাবে।আরে তুমিতো জাতে বাঙ্গালি। দেশের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত হও।
–দেখা যাক।
আমাদের কথার মধ্যে দিয়েই নকল মেঘ বলে উঠলো,
–মামা খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছো। আমারো এখানে একা একা খুব বুরিং লাগছিলো। যাক ফরেনার একটা সঙ্গী পাওয়া গেলো।
–সমস্যা নেই। গালিব আছে মিরাজ আছে।সব তো সমবয়সী।
গালিবকে এতোক্ষন যাই বলি না কেন এখন বেশ বুদ্ধিমান মনে হচ্ছে। সুযোগ বুঝে এমন একটা কাজ করলো বলার বাহিরে। আমার অবশ্য এই পরিবারে এই পজিশনটা বেশ প্রয়োজন ছিলো।ডেকোরেশনের লোক সাজার একটাই উদ্দেশ্য বাড়ির চারোপাশ খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা।কেউ কিছু মনে করবে না। তিনদিন যেকোনো সময় যেকোনো যায়গায় যেতে পারবো।কেননা পুরো বাড়িটার আনাচে কানাচে সাজানোর কন্ট্রাক কিন্তু ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার সব প্লেনে পানি ঢাললো এই মুটকো মেঘ।আচমকা এমন একটা সিচুয়েশনে পড়বো কখনো ভাবিনি। আমাকে ভেঙ্গে পড়লে হবে না।সব কিছু আবার ঢেলে সাজাতে হবে। তার জন্য আনাসের শরণাপন্ন হতে হবে।
খাবার টেবিলে সবাইকে দেখছি,কিন্তু তরীকে দেখছি না। তরী আর এই পরিবারের মাঝে কিছুতো একটা আছে।সবাই আমার বোন কে অবহেলা করছে না তো? মারাজানা বেগমের তো নিজের পেটের মেয়ে, তাহলে সে কিছু বলছে না কেন?আবার গতকাল মামি বলেছিলো মেঘ আসলে তরীর বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।এই কথাটা তখন ততো গুরুত্ব দেইনি। এখন দেখছি সব থেকে এই কথাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। নাহ্ আর হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।কিছু একটা করতে হবে।
আমি আর গালিব তার রুমেই বসে ছিলাম।হুট করে মারজানা বেগম আসলো সেখানে। আমি আর গালিব অনেকটা থমকে গেলাম। কি বলবে কে জানে।
–গালিব?
–জি ফুফু?
–তোরা একটু মেঘের সাথে যা তো।
–কোথায়?
–মেঘ নাকি তরীর বর দেখতে যাবে।তোরা গেলে ভালো হয়।
আমি গালিবকে ইশারায় বললাম রাজি হওয়ার জন্য।
–আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা যাবো।
–ঠিক আছে।রেডি হয়ে নিচে আসো।
মারজানা বেগম চলে গেলো।
–আচ্ছা গালিব, তরীর হবু বর দেখতে কেমন রে?
–এটা আর আমাকে বলিস না।
–কেন?
— সেখানে গেলেই দেখতে পারবি।
–আমার কেমন যেন লাগছে রে।মনে হচ্ছে তরী ভালো নেই।
–দুইদিন থাক,তাহলেই বুঝতে পারবি।
–শুন গালিব, এমপি মন্ত্রী গুনার টাইম আমার নাই। আমি কেমন ছেলে তুই ভালো করেই জানিস।আমি যদি দেখি আমার বোনের একটু কষ্ট, পুরো বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিবো। কে বাঁচলো, কে মরলো সেটাও দেখবো না। মৃত্যুর পরোয়া আমার নেই।
–মাথা ঠান্ডা রাখ।উত্তেজিত হয়ে কিছু করা যায় না।
–মাঝে মাঝে মন চায় তোকেও ইচ্ছে মতো পিটাই৷ তুই সব কথা আমার থেকে গোপন রেখেছিস।
–আমি তো আর সাদে গোপন রাখিনি।কোনো অদৃশ্য শিকলে আমার হাত পা বাঁধা।
–আমার কাছে বললে সমস্যাটা কি?
–আচ্ছা বাদ দাও এসব। চল নিচে চল।
–ওয়েট। আচ্ছা নকল মেঘটাকে কে নিয়ে আসতে পারে বলতো?
–সেটাতো আমি ভাবছি।সম্ভবত মুন্নির কাজ।
–কিন্তু সে কেন নকল মেঘকে নিয়ে আসবে?
–যাস্ট অল্প কিছুদিন এখানে থাকলে সব নিজে থেকেই জানতে পারবি।
–অপেক্ষায় রইলাম।
নিচে নামতেই প্রমা এসে বললো,মেঘা নাকি আমার সাথে দেখা করার জন্য রাজি হয়েছে। প্রমার থেকে মেঘার ফোন নাম্বার নিলাম। এখন অবশ্য নিজের ভিতরেই কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে। {এই অনুভূতির কথা শুধু ছেলেরা বলতে পারবে। আমার অবশ্য এমন অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ হয়েছিলো।যাই হোক সেটা অন্যদিন সবার সাথে শেয়ার করবো। এখন গল্পে যাওয়া যাক}
প্রেমে পড়লে পৃথিবীর সব মানুষের মাঝে কিছু পরিবর্তন আসে। আমার মাঝেও কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করলাম। তবে কি আমিও সেই শ্যামবর্ণ বহুরূপী মায়াবিনীর মায়ার জালে ফেঁসে গেলাম? মূহুর্তেই মনে হতাশা সৃষ্টি হলো । প্রমা বলেছিলো মেঘার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কি অদ্ভুত আমি,সেটা জেনেও মেঘার প্রতি মায়ার অনুভূতি সৃষ্টি করছি। আর আমি একদিক দিয়ে একতর্ফা ভাবছি কেন? মেঘাও যে আমাকে নিয়ে ভাবে? মেঘার মনেও তো আমার প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া চাই। কত বোকা হচ্ছি দিনের দিন?
মেঘার ফোন নাম্বারটার দিকে অনেক্ক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছি। ফোন দিতে সাহস পাচ্ছি না।কি না কি ভাবে। তাই এসএমএস দিলাম। হাই লিখে বসে আছি অনেক্ক্ষণ যাবৎ। কোনো রিপ্লাই নেই।
গালিব আর মুটকো রেডি হচ্ছে।আমি সোফায় বসে মেসেজের রিপ্লাই এর অপেক্ষা করছি। একটা সময় মনে হলো রিপ্লাই বুঝি আর পাবো না। তবুও আসা ছাড়িনি। টুটু টুটু করে নোটিফিকেশন বেজে উঠলো। মেঘা রিপ্লাই দিয়েছে।
~কে আপনি?
রিপ্লাই দিলাম
~পাওনাদার
~ওহ্ আপনি সেই কিপ্টে লোকটা?
~নিজের টাকা নিজে চাচ্ছি, এখানে কিপ্টেমির কি দেখলেন?
~বা রে ৫০০ টাকারই না হয় একটা মামলা,এর জন্য আপনার ঘুম আসছে না?
~৫০০ টাকা নয়,৫ হাজার হয়েছে এখন।
~কিহ!
~হুমম।আপনি যেখানেই থাকুন না কেন?অতি তাড়াতাড়ি আমার টাকা নিয়ে আমার সামনে হাজির হওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
~বুঝেছি টাকার জন্য আপনার খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে আছে। কোথায় দেখা করবেন?
~আপনি বলেন কোথায় আসতে হবে?
~*
~কখন আসবো?
~আঁধা ঘন্টার ভিতরে।
~ওকে।
মনে মনে লাড্ডু ফুটছে। মেয়েটাকে আবার দেখতে পাবো।হোকনা সে পরের।প্রিয় মানুষকে দেখার মাঝেই অধিক আনন্দ।
গালিব ড্রাইভ করছে আমি তার পাশে আর মুটকো পিছনে। ইচ্ছে করছে স্টাডিংটা খুলে ওর মাথায় বারি দেই। এমন ভাবে অভিনয় করছে আমার কাছেই এখন আমাকেই সন্দেহ লাগছে আমি মেঘ না সে মেঘ।এখন উলট পালট কিছু জিজ্ঞেস করাও যাবে না।তাহলে মারজানা বেগম আবার আমার অবস্থা বেহাল করে ছাড়বে।
গালিব কে মেঘার দেওয়ার ঠিকানা দেখালাম।
–এই ঠিকানায় ইমার্জেন্সি ভাবে নিয়ে চল।
–কেন?
–একজন আসছে। দেখা করবে।
পিছন থেকে মুটকো বললো,
–ব্রু ডেইটে যাবে গার্লফ্রেন্ডের সাথে?
–হুমম।
–ওকে নো প্রবলেম। আমরাও আছি তোমার সাথে ।
মুটকো কে কিছু বলার মতো ইচ্ছে এখন নেই।অযথা মোড নষ্ট করতে চাই না। মুটকোর কথার রিপ্লাই না দিয়ে তাকে থামানো গেলেও গালিব কে কে থামাবে?বেষ্ট ফ্রেন্ড থাকলে যা হয় আরকি।
কি সব উদ্ভট কথা বলছে।একদম হানিমুন পর্যন্ত চলে গেছে সে ।
নদীর পারে বেস মুগ্ধকর একটা পরিবেশ। এদিক দিয়ে বয়ে গছে নদীর ছোট্ট একটি শাখা।এপার ওপার পাড়াপাড়ের জন্য রয়েছে অসংখ্য নৌকা। বিকেল বেলা আসতে পারলে বেশ ভালো হতো।
সময় অতিক্রম করে আধা ঘণ্টা অতিবাহিত হতে লাগলো,কিন্তু কারো আসার নাম নিশানা নেই।গালিব তো কখন থেকে বলতে শুরু করেছে আজকে আর আসবে না।কিন্তু মটু কিছু বলেনি।
সময় আস্তে আস্তে অতিবাহিত হতে লাগলো। অনেক গুলো মেসেজ দিলাম কোনো রিপ্লাই নেই। এখান থেকে নাকি বেশি দূর নয় পাত্রের বাড়ি। তাই গালিব আর মটুকে পাঠিয়ে দিলাম। আমি গালিবের সাথে আবার বিকেলে এসে দেখবো বরকে। কি ভেবে যেন দুই ঘন্টা বসে ছিলাম জানিনা।কিন্তু মেঘার না আসার কারনটা বুঝতে পারছি না। ফোন দিলে আবার কে না কে ধরে বসে সেটা ভেবে আর ফোন দিলাম না।
মেঘার প্রতি ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হওয়ার আগেই উঠে দাঁড়ালাম। কেননা প্রিয় মানুষের প্রতি কখনো ভ্রান্ত ধারনা তৈরি করতে নেই। যত সম্ভব তার ভুল ত্রুটি কোনো কারন ভেবে সেটা ভুলে যাওয়া ভালো। হয়তো মেঘা কোনো কাজে আটকে গেছে এই জন্য আসতে পারেনি।তবে প্রশ্ন একটা মনের কোনে রয়ে যায়, অন্তত মেসেজ দিয়ে বলতে পারতো ব্যস্ত আছি।
গালিবকে ফোন দিলাম আমাকে এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তরীর হবু বর দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো। এটা ছেলে পক্ষের বাড়ি দেখে কোনো রকম দাঁতে দাঁত চেপে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি। রাগে শরীরর কাঁপছে। গালিব চুপ হয়ে আছে।
ছেলেটা হলো অটিস্টিক। মানে তার এখনো মানুষিক বিকাশ হয়নি। ছোট বাচ্চাদের মতো আচরন করে। বুঝেছি ছেলের বাবার টাকা পয়সা দেখে মারজানা বেগম বিয়েটা ঠিক করেছে।তরী এমনি সে বাকপ্রতিন্ধী,আবার একটা মানুষীক রুগীর সাথে বিয়ে হচ্ছে। এই সংসার তো ১ মিনিটও সুখী হবে না।আমি আর গালিব হতাশ হলেও মটু সে দিব্যি বলে যাচ্ছে,
–গালিব পাত্র কিন্তু ফাস্ট ক্লাস। আমার হেব্বি ভালো লেগেছে।
ইচ্ছে করছিলো ওর মুখ বরাবর শরবতের গ্লাসটা ছুড়ে মারি।
গালিব বুঝতে পারে আমার অবস্থা।গালিব ততোক্ষণে আমার হাতটা ধরে ফেলে।
সালা গালের জন্য চোখে দেখে না,এটা নাকি ফাস্টক্লাস পাত্র। রাখ,আগে বিয়েটা ভাঙ্গি। তোর মুখোশ যদি আমি প্লাস দিয়ে টেনে টেনে না খোলছি তাহলে আমি আসাদুজ্জামানের ছেলে না। পকেটে মোবাইল বেজে উঠলো। রাগটা সংযত করে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করলাম। দেখলাম মেঘার নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।সাথে সাথে সুইচ অফ করে দিলাম।এই মেঘ এতো ভেসে আসেনি যে একটা মেয়ে তাকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচাবে,আর সে নাচবে।এমনি মন মেজাজ ভালো না ।
·
·
·
চলবে………………………
লিখেছেনঃ নিহান আহমেদ আনিছ