আব্বু-আম্মুর ডিভোর্সে ১৮ বছর পর নানুর বাড়িতে যাচ্ছি। ছোট বোনের বিয়ে তাই না গিয়েও পারছি না। আম্মুর উপর রাগ থাকতে পারে, কিন্তু বোনের উপর নেই। তাদের ডিভোর্সের পর আমাকে আব্বু তার কাছে রেখে দেয়, আর তরী একদম ছোট ছিলো বলে আম্মু তরীকে তার সাথে রেখে দেয়। দীর্ঘ আঠারো বছর তাদের সাথে কোনো প্রকার যোগোযোগ নেই। তরীর বিয়ের খবরটা পেলাম কেথায় সেটা পরে বলছি।
হঠাৎ বাস থামালো। যাত্রীরা সবাই একটু থমকে গেলো। এটাতো লোকাল বাস না।ডাইরেক্ট বাসের টিকেট কেটেছি। তাহলে বাস থামিয়ে যাত্রী নিবে কেন? আমি ছোট বেলা থেকে একটু ত্যাড়া টাইপের।একটু বদ মেজাজী,আর ঘাড় ত্যারা। আব্বু এটা নিয়ে সব সময় আমাকে বুঝাতেন। কিন্তু আমার পরিবর্তন হয়নি।পরে তিনি এক সময় বুঝতে পারেন এটা আমার পরিবারের অপূর্ণ ভালোবাসার ফল।দীর্ঘ দিন এমন পরিবারহীনতা আমাকে এমন রুক্ষ করে তুলে। আমার আচরণ-আচরনে আনে ভিন্ন মাত্রা। নিজেকে নিজে সব সময় কন্ট্রোলে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে সেই আগের মতো করে দেয়। এটা নিয়ে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন।
সিট থেকে উঠে সামনে দুই কদম বেড়ে হেল্পারকে ডাক দিয়ে বললাম,
–সমস্যা কি? গাড়ি থামালেন কেন?
হেল্পার একটু শান্ত মনে বললো,
–একজন যাত্রী উঠবে।
–ঐ মিয়া ফাইজলামি করেন নাকি? এটা লোকাল বাস?আর বাসে আপনি সিট খালি দেখলেন কোথায়?
হেল্পার আমার কথার উত্তর দিতে দিতেই বাসে যাত্রী উঠে গেলো,ড্রাইভারও গাড়ি সামনের দিকে অগ্রসর করলো।
হেল্পার একটু ভাব নিয়ে বললো,
–ভাই আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন আপনার পাশের সিট’টা খালি আছে।
–কি বললেন আপনি? আবার বলুন?
–আপনার পাশের সিট”টা খালি।
–একদম কিন্তু বাস থেকে ফেলে দিবো। দুইটা টিকিট কেটেছি কি সাধে?
–ওহ্ ভাই সরি মনে নেই।
আমি হেল্পারের দিকে একটু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার সিটে এসে বসলাম। একটা হাটু অপর সিটে তুলে রাখলাম। ঢাকা টু খুলনা জার্নিটা মুটেও কম না।নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসতে পারতাম।কিন্তু এতো দূরের জার্নি দুষ্কর হয়ে যাবে।নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসের টিকিট কেটেছি। তাও আবার একটা না।এক সঙ্গে দুটো। রাত হয়ে গেলে ঘুমাতে সুবিধা হবে। আমি আবার বসে ঘুমাতে পারি না।আর তার থেকেও বড় কারন হচ্ছে বাহিরের মনোরম পরিবেশ যেন উপভোগ করতে পারি জানালার পাশে বসে।যদি জানালার পাশে সিট না পাই। তাই এক সঙ্গে দুটো টিকিট কেটেছি যেন কেউ এসে ভাগ বসাতে না পারে যে জানালার সিট”টা আমার।হেল্পার ও আমার পিছনে পিছনে ভাই ভাই করতে করতে আসলো। আমি অন্য দিকে মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছি। কোনো ভাবেই আমি আমার সিট ছাড়ছি না।।
–ভাই আমরা আপনার এক সিটের ভাড়া ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।তবুও আপনি একটু কষ্ট করে একটা সিট ছেড়ে দিন।
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছি হেল্পারের দিকে। খুব রাগ হতে লাগলো হেল্পারের প্রতি।
তবে মুখে প্রকাশ করলাম না। নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।
–ভাই,ভাই,প্লিজ,প্লিজ।
–আপনি প্লিজ সামনে থেকে যান,রেগে গেলে কিন্তু খারাপ কিছু হবে।
— ভাই ভুলতো মানুষের হয়,আপনি একটু বুঝার চেষ্টা করুন।
–খুব খারাপ হবে কিন্তু। আমার সমস্যা আছে দেখেই আমি দুইটা সিট বুকিং করেছি।
–ভাই ওনি যুবতী একটা একটা মেয়ে, দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে এতো দূর যাবে, কেমন দেখায়, মা বোনতো আপনার বাড়িতেও..
–যাস্ট সেট আপ। সব কিছুতে মা বোন টেনে আনেন কেন? যান সামনে থেকে।
আমার দমক খেয়ে সে চলে গেলো।আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। আমার সিটের পাশে কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি। সিটের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি নেই অনাকাঙ্ক্ষিত যাত্রী। সে যেই হোক আমার সিট ছাড়তে আমি অসম্মত।আমি একবার মেয়েটার দিকে দৃষ্টি দিলাম। দেখে মনে হচ্ছে কোনো কলেজের স্টুডেন্ট। হোস্টেল থেকে ফিরছে। কেননা কাঁধের মাঝে বেশ বড় সর একটা স্কুল বেগ।আর বাস থামিয়ে ছিলো একটা মহিলা হোস্টেলের কাছেই।মেয়েটার শ্যামবর্ণ মুখের রং। তবে ততোটা কালোও নয় আবার অতোটা সুন্দরও না।তবে মুখের মাঝে অজস্র মায়ার আবাস।শ্যামলা মেয়েরা এমনিতেই অনেক মায়াবতি হয়।আমি অবশ্য কাউকে বাস্তবে তেমন দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখিনি। বিদেশে সাদা চামরার মানুষ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত, তাই এই শ্যামলা চেহারার মায়াবতী কখনো তেমন ভাবে দেখা হয়নি।দেখা হয়েছে হয়তো অনেক বার,কিন্তু খেয়াল করা হয়নি। শ্যামলা মেয়েরা মায়াবতী হয় সেটা হুমায়ূন আহমেদের কোন উপন্যাস না গল্পে যেন পড়েছি সঠিক মনে নেই।বাক্যটা মনে আছে কিন্তু গল্প মনে নেই।যাই হোক প্রায় পনেরো মিনিট হতে চললো মেয়েটাও কিছু বলছে না বসবে কি না, আমিও বলছি না।হেল্পার কিছুক্ষন পর পর পিছনে তাকিয়ে দেখছে আমি সিট ছেড়েছি কিনা। আমার দৃষ্টি বরাবর হলে আবার অন্য দিকে তাকিয়ে ফেলে।হেল্পার ও ইতিমধ্যে আমার আচরণে ভয়ার্ত।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেক যুবক আর মধ্যে বয়সের লোক মেয়েটাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। এই বিষয়টা নিতে পারলাম না।সমাজটা আজ উচ্ছন্নে গেছে।একটা মেয়ে একলা নিরাপদ নেই। দুষ্ট লোকদের লোভাতুর দৃষ্টি মেয়েদের উপর পরবেই। সিট থেকে পা নামিয়ে ইশারা করলাম সিটে বসার জন্য। কিন্তু সে সোজা হয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কি যেন বলবে।
–কি হলো?
–ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলতাম।
–মনে করার হলে অবশ্যই করবো।
–তাহলে দাঁড়িয়েই থাকি।
–দাড়িয়ে থাকতে ভালো লাগলে দাড়িয়ে থাকুন।আমার এতো মাথা ব্যাথা নেই।
একটু পর আবার মেয়েটা বললো,
–ভাইয়া জানালার পাশের সিটটা কি পাবো?না মানে যদি কিছু মনে না করেন,আপনি যেই পরিমাণ রাগী, ভয় পাচ্ছিলাম।আমি জানালার পাশের সিট ছাড়া বসতে পারি না।।
কি ভেবে যেন সিটটা ছেড়ে দিলাম সঠিক বুঝতে পারলাম না। মেয়েটাও সেটা আমার থেকে এক্সেপ্ট করেনি। মনে করেছিলো আমি অনেক কথা শুনিয়ে দিবো।
আমি উঠে গিয়ে মেয়েটাকে বসতে দিলাম জানালার পাশে। সে খানিকক্ষণ সময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
–বসবেন নাকি বসবো?
–না, না বসতেছি।
বিপরীত পাশে বসে আছি।এখন অবশ্য আফসোস হচ্ছে। সিটটা কেন ছাড়লাম।একদম উচিৎ হয়নি সিট”টা ছাড়ার।নিজের পাঁচ আঙুল মুষ্টি চেপে রাগটা কন্ট্রোল করলাম। একবার রাগ কন্ট্রোল না করতে করতেই আবার আরেক কারন ঘটলো রাগ করার, হেল্পার এসে মেয়েটাকে বললো ভাড়া দেন।
আমি হেল্পারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাসের হেল্পার ছিলো একটু কম বয়সি। বয়স কত আর? উনিশ-বিশ হবে হয়তো। এই পেশায় সে নতুন তার আচরনে বুঝা যাচ্ছে। আমাকে সে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে সেই ঘটনার পর থেকে। যাইহোক আমি ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললাম,
–একটা সিটের ভাড়া কতবার দেওয়া লাগে?
–না,মানে ওনার থেকে ভাড়াটা নিয়েই আপনাকে দিতাম।
–তোমাকে কিছু করতে হবে না। যাও এখান থেকে। আর হে, কতক্ষণ লাগতে পারে খুলনা পৌঁছাতে?
–তিন চার ঘন্টা তো লাগবেই।
–ঠিক আছে।
বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো। মেয়েটা এক মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে । প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা হয়নি তার সাথে। অবশ্য আমার আগ্রহ কম কথা বলার জন্য, তাই কথা হয়নি। আচমকা মেয়েটি হেঁসে হেঁসে বললো,
–পৃথিবীর মানুষ গুলো কত বৈচিত্র্য পূর্ণ।
আমি তার কথায় কোনো কর্ণপাত করলাম না। স্বাভাবিক ভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।
–আপনি দেখছি খু্ব অদ্ভুত!
–এখানে অদ্ভুতের কি আছে?
–ভেবেছিলাম আপনার মনটা খুবই ভালো।কিন্তু আপনি যে একঘুরে টাইপের কে জানতো।
–এক্সকিউজমি? কি বলছেন?
–আমি মানুষটা কালো হলেও সত্যি কথা বলতে কোনোদিন পিছুপা হই না।
–আমাকে একঘুরে বললেন কেন?
–বারে, একটা মানুষ পাশে বসে আছে,সে কি জীবিত আছে না মৃত সেটাইতো আপনি বলতে পারবেন না।আপনি এমন কেন?
–আমি এমনি।
–আপনি কথায় কথায় এতো রাগ দেখান কেন?
মেয়েটার কথায় একটু ভরকে গেলাম। অপরিচিত মানুষের সাথে মেয়েরা এতো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারে সেটা আগে জানা ছিলো না। নিজেকে একটু শান্ত করে বললাম,
–আপনি কিন্তু,,
— আমি কি?
–কিছু না।
–আমি খুব মিশুক স্বভাবের মানুষ। আমি চুপচাপ থাকতে পারি না বেশিক্ষণ। অবশ্য অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলি না। কিন্তু আপনার সাথে কথা বলতে কেন যেন ইন্টারেস্টিং লাগছে।
–আমার মাঝে সবাই বদ মেজাজ খুঁজে পায় আর আপনার ইন্টারেস্টিং লাগছে।কি অদ্ভুত।
–শুনেন একটা কথা বলি,আপনার মাঝে বদ মেজাজ আছে সেটা মানছি, তবে আপনার মাঝে সুন্দর একটা মন আছে।
মেয়েটার কথা শুনে আমি রীতিমতো স্তব্ধ। এমন কথা কারো মুখ থেকে এই প্রথম শুনলাম। মেয়েটা কথাটা বলেই বাহিরের দিকে মুখ ফিরিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। অস্বীকার করবো না,মেয়াটার গুছালো দাঁত গুলোর হাসিটা দেখার মতো। আমি একটু কড়া হয়ে বললাম,
–সুন্দর মন দেখলেন কোথায়?
–এই যে,দুষ্ট লোক গুলো যখন আমার দিকে অন্য রকম ভাবে তাকিয়েছিলো এটা আপনার কাছে ভালো লাগেনি।তাই সাধের সিটটা ছেড়ে দিলেন। এ থেকে কি বুঝা যায়?
মেয়েটা কিভাবে বুঝলো বুঝতে পারলাম না।তবে সে বিচক্ষন আর বুদ্ধিমতী ভালোই অনুমান করতে পেরেছি।তবুও আমি একটু কঠিন সুরে বললাম,
–দাড়িয়ে ছিলেন তাই সিট’টা ছেড়েছি। এর মানে এটা নয় যে আমি ছেলেটা ভালো।
–সেটাতো দেখলাম। আচ্ছা আপনার নামটা কি?
–মনে নেই।
–ছেলেদের এতো এটিটিউড ভালো না।
–কেন মেয়েরাই শুধু ভাব দেখাতে পারবে ছেলেরা পারবে না?
–এই আপনি রাগান্বিত হবেন না,আপনার এই রাগান্বিত মুখটা খুভ ভয় করে।
থেমে গিয়ে একটু শান্ত হলাম।চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।মেয়েটা সত্যিই সাদাসিধে।মানুষের সাথে মিশতে চায়।কিন্তু আমিতো তার বিপরীত। একদম কাছের মানুষ না হলে কারো সাথে মিশি না।এবং কি আব্বুর সাথেও আমি কখনো ভালো করে কথা বলিনি।বাবা-মা, দুজনের প্রতি আছে আমার অগনিত ঘৃণা। তাদের জন্য আমি আর আমার বোন নিঃসঙ্গ হয়েছি।আজকে এতোটা বছর তরীকে না দেখেই রয়েছি।অবশ্য বাবা এখন বেঁচে নেই। বাবার মৃত্যুটা আজো রহস্য জনক।প্রকৃতি নিয়মে মৃত্যু নাকি মার্ডার সেটা আজো কেউ স্পষ্ট জানে না।আমি ছিলাম নিউইয়র্কে। বাবা ছিলো একা বাড়িতে। তাই কেউ এতোটা গুরুত্ব দেয়নি।বিসার জটিলতার কারনে আমি সেদিন বাবাকে দেখতে পারিনি।
এলাকার অনেক মানুষের মুখে শুনেছি, যেদিন আব্বুর মৃত্যু হয় সেদিন সকালে নাকি আম্মুকে অনেকেই আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখেছে এতোগুলো বছর পর আম্মুকে বাড়ির আশেপাশে দেখাটা অনেকটা ভাবনায় ফেলে দেয় সবাই কে।পড়ে দুপুরের দিকে সবাই জানতে পারে আব্বুর মৃত্যু হয়েছে। আব্বুর রুমের ভিতরেই বিছানার উপরে তার লাশ উদ্ধার করে সবাই। যেহেতু আম্মুর উপস্থিত রয়েছে ঘটনার পিছনে তাই আমি এটা নিয়ে সবাইকে এতো নাড়াচাড়া করতে বলিনি। তাই সবাই আমার কথা মতো আব্বুকে দাফনের ব্যবস্তা করে। সেদিন আমি তরীর কথা চিন্তা করে কিছু বলিনি। আম্মুর কিছু হলে আবার তরী একদম নিঃসঙ্গ হয়ে যেতো। তবে এতো সহজে আমি ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই। এখন দেশে এসেছি অনেক সময় নিয়ে ঘটনার মূল রহস্য বের করবো। আম্মুর প্রতি আমার আগে থেকেই ঘৃণার পাহাড় জন্মে আছে। তার উপর আব্বুকে মার্ডার করার মতো ঘটনা, এর কঠিন জবাব দিতে হবে তাকে। শুধু তরীর বিয়েটা কোনো রকম হয়ে যাক।
মেয়েটার কথায় চমকে উঠলাম।
–আপনি যখন আপনার নাম বলবেনই না,আমার নামটা বলছি। আমি মেঘা।
আমি অনেকটা চমকে উঠলাম। মেয়াটার নামটা আমার নামের সাথে অদ্ভুত ভাবে মিলে গেছে।
আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেলো,
–আমি মেঘ।
মেয়েটা একটু মুচকি হেঁসে বললো,
— রসিকতা করছেন আমার সাথে?
–কেন জন্মনিবন্ধনের কার্ড দেখাতে হবে নাকি?
–থাক তার আর প্রয়োজন নেই। রুক্ষ স্বভাবের মানুষ রা সহজে মিথ্যা বলে না।
কথাটা বলেই সে জিবে কামর দিলো।
আমি রাগী দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটার মুখে ভেসে উঠেসে এক অদ্ভুত ছাপ। ভয় আর চাপা মুচকি হাসি। এই প্রথম এরকম কোনো দৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছি। এরকম মুখের দৃশ্য আজো কাউকে করতে দেখিনি। এই দৃশ্যটার একটা নাম দেওয়া যাক।”মেঘমিলন” নামটা মন্দ নয়।
আমার মতো করে নামটার বিশ্লেশন করলে যার উত্তর দাড়াবে মেঘার মুখে যে এক সাথে দুটো অদ্ভুত দৃশ্যের মিলন হয়েছে তাই নামটা হয়েছে “মেঘমিলন” যদিও আমি কবি বা সাহিত্যক না। তবে মায়াবতী দেখলে সাইনটিস্ট রাও কবি হয়ে যায়।
কি অদ্ভুত সব কিছু।মেয়েটাকে নিয়ে এই টুকু সময়ের ভিতরে যতটুকু ভাবলাম আমার নিজেকে নিয়ে কখনো এতোটুকু ভাবিনি। আমরা সবাই এই দিকটা দিয়ে পিছিয়ে।নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় হয়েই উঠে না।
চোখ বুঝতে পারছি না। এভাবে ঘুমিয়ে আমি অবস্থ নই। মেয়েটাকে দেখলাম কি অদ্ভুত ভাবে ঘুমিয়ে আছে। যার বর্ণনা আমি লিখে শেষ করতে পারবো না। হুমায়ুন আহমেদ তাহলে সত্যিই বলেছিলেন,যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর লাগে সে নারীই প্রকৃত সুন্দর। কি অদ্ভুত! এতোদিন সেই মহান কথা গুলোর মানেটা বুঝতাম না। মনে হতো সে মনের হুতাশে কথা গুলো লিখে। কিন্তু সেগুলো চোখের সামনেই একদিনে ধরা দিবে সেটা ভাবিনি।
চোখ দুটো লেগে আসতেই আব্বুর সেই মৃত মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। আবার আতঁকে উঠলাম। হঠাৎ কেন এমনটা হলো বুঝতে পারছি না। আজকে কেন যেন খুব মনে পড়ছে আব্বুকে। বুঝতে শিখার পর থেকেই আব্বুকে আমি মোটেও সময় দেইনি। আমার কথা ভেবে সে দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। কিন্তু আব্বুকে কতইনা অবহেলা করেছি আমি।শেষ বার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটা পাইনি। ভেবেই কূল পাই না আম্মু এতো বছর পর কিসের জন্য এসেছিলো আব্বুর কাছে?
·
·
·
চলবে……
লিখেছেনঃ নিহান আহমেদ আনিছ