রাত বেড়েছে, ঘড়ির কাটায় ২টা বেজে গেলো ডং করে।আজ গরমটা একটু বেশীই তার উপর বিদ্যুৎ নেই।বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা বলে কথা।একবার গেলে দুইদিন আসার নাম নেয় না।আজও তেমন হয়েছে।শেফা এবং কথা দুজনে মিলে বাহিরে এলো।বাহিরে যা একটু ঠান্ডা লাগে কিন্তু রুমের ভেতরে ঢুকলেই একটা গরম বাতাস শরীরে এসে লাগে।হল রুম বলে হয়তো এরকম টা লাগে।অনেক মেয়ে এক সাথে থাকে।যেখানে মানুষ বেশী সেখানেই গরম বেশী।
শেফা এবং কথা দুজনে বারান্দায় এসে দাড়ালো।দুজন মিলে গল্প করছে।একে অপরের শৈশবের কথা গুলো বলছে।দুজন খুব উপভোগ করছে এই সময়টা।কিছুক্ষনের জন্য ভুলে গেলো হোস্টেলের ভয়ংকর সেই ঘটনাগুলো। রুম নম্বর ২০৯
কথা বলল,
“জানিস আমি যখন ছোট ছিলাম তখন খুব দুষ্টুমি করতাম।সারাদিন ছোটাছুটি আর খেলাধুলা।”
শেফা এক গাল হেসে বলল,
“আমিও এমন ছিলাম।খুব দুষ্টুমি করতাম।”
“আর এখন তুই কত শান্ত!”
কথাটি বলল ক’থা।
শেফা এই কথাতে একটু উদাসিন হয়ে গেলো।উদাস চোখের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল দূর দিগন্তে।তারপর বলল,
“জানি না এখন কেমন হয়েছি।কিন্তু এই টুকু বলতে পারি আমি সত্যি পাল্টে গেছি।”
কথা বলল,
“পাল্টেছিস তো বটেই কিন্তু শেফা…
এতোটুকু বলেই থেমে গেলো ক’থা।শেফা বলল,
“কিন্তু কি বল?
ক’থা বলল,
“মনে হলো আমার ঘাড়ে কেউ নিঃশ্বাস ফেলল।”
শেফা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল,
“কে নিঃশ্বাস ফেলবে?
তারপর পেছনে ঘুরে দেখে নিয়ে বলল,
“কই পেছনে তো কেউ নেই।”
কথা বলল,
“আমার তখন মনে হয়েছিলো কেউ একজন আমার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না।”
শেফা গলাটা নামিয়ে বলল,
“আমাদের কেউ ফলো করছে না তো?
কথা বলল,
“কে ফলো করবে? লিরা তো নেই এখানে।আর তাছাড়া…
আবার থেমে গেলো ক’থা।শেফাকে বলল,
“শেফা এখন আবার নিঃশ্বাস ফেলছে কেউ।”
কথা শেষ হতে হতেই শেফা কথা’র হাত ধরে হেচকা একটা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলল দূরে।তখনি ঝনঝনিয়ে একটা কিছু পড়ার শব্দ হলো ফ্লোরে।কথা’র চোখে মুখে বিস্ময়।কথা আরো বেশী বিস্মিত হলো যখন ফ্লোরের দিকে তাকালো।একটি রক্ত মাখা ছুড়ি পড়ে আছে ফ্লোরে।কেউ একজন কথা’র ঘাড়ে বিদ্ধ করতে চেয়েছিলো এটা কিন্তু শেফার কৌশল এবং চতুরতার কারণে তা পুরোপুরি ভেস্তে গেলো।
কথা’র মুখে ভাষা নেই।কি ঘটে গেলো এত দ্রুত তাই ভাবছে।এমন সময় একটি ছায়া মূর্তি ভেসে উঠলো দুজনের চোখের সামনে।মানুষটির মুখ অন্ধকারে ঢাকা।এমন জায়গায় দাড়িয়েছে মুখ দেখা যাচ্ছে না শুধু শরীরটাই দেখা যাচ্ছে।একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধার মত।
শেফা ভাবছে ইনি আবার কে? এরকম কোন আত্তা তো দেখি নাই আগে।যা।দেখেছি সব আমাদের মতোই তরুন বয়সের।আত্তাটি অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে এলো।আত্তাটির মুখ দেখে শেফা এবং কথা দুজনের মুখেই বিস্ময়ের রেখা ফোটে উঠল।এ যে হোস্টেলের সেই স্টাফ মর্জিনা খালা।
শেফা মর্জিনা খালার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
“খালা আপনি!
শেফার কথাতে চোখ মেলে তাকালো মর্জিনা খালা।
মর্জিনা খালার চোখের মনি যেনো কেমন নিষ্প্রাণ।এ যেনো মর্জিনা খালা নয় একটি মৃত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
মর্জিনা খালা কোন কথা না বলে এগিয়ে গেলো শেফার দিকে।কথা হুশিয়ার জানিয়ে বলল,
“খবরদার আর এক পা সামনে এগুবে না।”
কথা’র কথায় কর্ণপাত করলো না মর্জিনা খালা।
এগিয়ে যেতে লাগলো ওদের দিকে।কথা’র ভেতরটা কেপে উঠছে বার বার।একজন মৃত মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
(প্রিয় পাঠক আপনারা যে যেখানে যেই অবস্থাতেই আছেন, একবার কল্পনা করুন একটি মৃত মানুষ যে মারা গেছে সে আপনার সামনে মুখে একটা কলিজা কাপানো হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কেমন লাগবে আপনার?
অনুভূতিটা কমেন্ত বক্সে জানিয়ে দেবেন।)
শেফা মর্জিনা খালা কে বলল,
“আপনি আর এক পা ও এগোবেন না।”
মর্জিনা খালা শেফার কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না।হাটু ভেঙ্গে নিচু হয়ে ছুড়িটা হাতে নিলো।ছুড়িটা হাতে নিয়ে নিজের শরীরে ছুড়িকাঘাত করল।মর্জিনার খালার শরীর থেকে কালো রক্তের সাথে কালো কালো কীট বেরোতে লাগল।সেই রক্ত স্পর্শ করে শেফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজ থেকে দুদিন আগে লিরা আমাকে এই ছুড়ি দিয়ে হত্যা করেছে।আমার পেট বরাবর চালান করে দিয়েছিলো ছুড়িটা।যখন লিরা আমার পেটের ভেতর ছুড়িটা ঢুকায় রখন আমি ব্যাথায় কাতরাতে থাকি তবুও আমাকে ছাড়েনি।আমার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আমার গলাটাও কেটে দু’টুকরো করে ফেলেছে।”
এই কথাটি বলা মাত্রই মর্জিনা খালার ঘাড় থেকে মাথাটি পড়ে গেলো ফ্লোরে।শেফা এবং কথা এই দৃশ্য দেখে ভউএ কুল কুল করে ঘামছে।ক’থা বলল,
“তারমানে আমরা যখন আপনার কাছে গিয়েছিলাম তখন আপনি মারা গিয়েছিলেন!”
মর্জিনা খালা মাথা দুলিয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো।
ক’থা এবং শেফা খুব ভালো করেই বোঝতে পারল সব লিরার কাজ।লিরা চায় না কারো মধ্যমে ওরা লিরার কাছে পৌছাক বা লিরার পরিচয় জানুক।তাই হয়তো হোস্টেলের স্টাফ কে মেরে দিয়েছে।
ওদের কথার মাঝে ষাটোর্ধ বৃদ্ধা স্টাফ মর্জিনা খালা হেসে উঠলো অদ্ভুত ভাবে।তার গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে লিরার কন্ঠ হয়ে গেছে।বৃদ্ধা স্টাফের ভেতরে থাকা লিরা বলে উঠলো,
“তোরা দুজন ঠিকই ভেবেছিস, আমিই খুন করেছি একে।আমার রহস্য তোরা কোনদিন জানবি না।যার মধ্যমে তোরা আমার রহস্য জানার চেষ্টা করবি তাদের সবাইকে আমি মেরে দেবো।”
ক’থা কাতর স্বরে বলল,
“কিন্তু লিরা এটা অন্যায়।তুমি যাদের মারছো তারা সবাই নিরপরাধ।”
লিরা হিংস্র গলায় বলল,
“আমি অপরাধী নিরপরাধী বোঝি না।আমার মনে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।যাকে আমি এতোদিন যাবৎ খোজছি তাকে না পেলে আমি কিছুতেই শান্ত হবো না।”
শেফা বলল,
“তুমি কাকে খোজছো? সেটা আমাদের বলো, আমরা তাকে খোজে বের করব।”
লিরা গর্জন দিয়ে উঠল,
“তোরা আমায় কি সাহায্য করবি? তোরা মানুষরা সব স্বার্থপরের দল।তোদের মত মানুষদের জন্যই আজো আমার আত্মা শান্তি পাচ্ছে না।”
ক’থা কোমল কন্ঠে বলল,
“জানি না তোমার সাথে কি এমন অবিচার হয়েছে।কিন্তু তোমার সাথে যে অবিচার করেছে তার পাপের সাজা তুমি অন্যসব মেয়েদের দিতে পারো না।তুমি যদি তোমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের শাস্তি এদের কে দাও তাহলেই কি তোমার মনে জ্বলতে থাকা প্রতিশোধের আগুন নিভবে?”
লিরা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কি যেনো ভাবলো।শেফা লিরার নিরবতা থেকে বলল,
“তুমি আমাকে কেনো তোমার এই প্রতিহিংসার আগুনে ফেললে? আর এই কথাকেই কেনো এভাবে ভয় দেখাচ্ছো? আমরা তো তোমার কোন ক্ষতি করিনি।”
লিরা শেফার এই প্রশ্নের জবাবে বলল,
“আমি তোকে বেছে নিয়েছিলাম এই কারনে যে তুই খুব শান্ত এবং ভালো একটা মেয়ে, আমি চেয়েছিলাম তোর মধ্যমে আমি আমার প্রতিশোধ নিয়ে নেবো।কিন্তু ঝামেলা করলি ঐদিন যেদিন শিখার মৃত দেহ টা দেখে ফেলেছিলি।”
শেফা বলল,
“আমি তো ইচ্ছে করে দেখিনি।আমি যা দেখেছি তার সব কিছু দুর্ভাগ্যবশত।”
লিরা দাতেঁ দাতঁ চেপে বলল,
“সেই দুর্ভাগ্যবশত দেখাটাই তোর জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনে।শিখার আত্মা তোকে তাড়া করে বেড়ায়।আর আমার সব প্ল্যান ভেস্তে যায়।”
শেফা আরো কৌতুহলি হয়ে গেলো।জিজ্ঞেস করলো,
“কেনো? কি এমন হয়েছিলো তাতে যে কারণে তোমার সব প্ল্যান ভেস্তে যায়!”
লিরা বলল,
“আমি চেয়েছিলাম তোকে না জানিয়ে আমার কাজ হাসিল করতে কিন্তু মাঝ খানে শিখার আত্মা আসাতে আমি অন্যভাবে খেলতে শুরু করি।শিখা কে মেরেছিলাম আমি কিন্তু শিখা সেটা জানে না।ও যখন মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে তখন বাচাঁর জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কেউ ওর চিৎকার চেচামেচি শোনতে পায় না।হঠাৎ কারো পদধ্বনি শোনতে পায় আর প্রানপনে ডাকতে থাকে কিন্তু সেই মানুষ টি তার ডাক শোনে না।আর সেই মানুষটি ছিলি তুই।
তুই শিখার ডাক না শোনে বাথরুমে চলে যাস আর তোর কাজ শেষ করে তবেই ওয়াশরুমে যাস।ততোক্ষনে শিখার প্রানপাখি বেরিয়ে গেছে প্রায়।মরার আগে শুধু তোর মুখটা দেখেছে মাত্র।”
শেফা সব শোনে বিস্ফোরিত চোখে লিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।মুখে রা শব্দটি টি পর্যন্ত নেই।লিরা উচ্চস্বরে হেসে বলল,
“সেই শিখার বদৌলতে আজ তুই মানুষ খেকো ডাইনী।এখন যারা মরছে সবাই তোর দ্বারাই মরছে।
কিন্তু এই বৃদ্ধা স্টাফ বড্ড বাড় বেড়েছিলো, তাই ফল কাটার ছুড়ি দিয়ে শরীরটাকে কুচি কুচি করে কেটে তোদের কেই খেতে দিয়েছি।”
কথাটি শোনে ক’থা যেনো বমিই করে দিলো প্রায়।ওরা সবাই বৃদ্ধা স্টাফ মর্জিনা খালার শরীরটাকে খেয়েছে মাংস হিসেবে।ভাবতেই পেটের ভেতর থেকে সব বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা।ক’থা বলল,
“ছিঃ কি নোংরা তুমি, আমার গা গুলিয়ে আসছে।”
লিরা হাসতে লাগল কুৎসিত ভঙ্গিতে।হাসি থামিয়ে বলল,
“আর ক’থা তুই।তোকে কি শেফার পাশেই সীট নিতে হলো? শেফার পাশে সীট নেয়াটাই তোর ভুল ছিলো।একমাত্র শেফার সাথে তোর ঘনিষ্টতা বাড়ার কারণে আমি তোর সামনে এসেছি।”
ক’থা বলল,
“সীট পড়াটা কি আমার ভুল ছিলো?
লিরা খেঁকিয়ে উঠে বলল,
“হ্যা হ্যা ভুল ছিলো।তুই বড্ড গোয়েন্দাগিরি করতে চেয়েছিলি।শেফার গলায় কাচ বিধলো নাকি কি হয়েছিলো তা তোর এতো জানার শখ জাগছিলো কেনো? তাইতো আজ তুই আমার শিকার।”
শেফা আঙ্গুল তুলে বলল,
“সাবধান তুমি কাথা’র কোন ক্ষতি করবে না।শুধু কথা কেনো কারো-ই কোন ক্ষতি করবে না।”
লিরা এগিয়ে এসে বলল,
“আমি তোর সামনেই কথা’কে মারব তারপর তোকে দিয়ে আমার প্রতিশোধ পূরন করে তোকেও মেরে ফেলব।”
শেফা বলল,
“সেই ইচ্ছে তোমার কোনদিন পূরণ হবে না।”
লিরা শেফার কথাতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল, হুংকার ছুড়ে এগিয়ে আসলো ছুড়িটা হাতে নিয়ে।শেফা এবং কথা এক পা এক পা করে পেছনে সরছে আর লিরা ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। শেফা এবং কথা পিছাতে পিছাতে দেয়ালে ঠেকে গেলো।আর পালানোর জায়গা নেই।লিরা ছুড়িটা হাতে নিয়ে বিদ্ধ করে দিলো কথার বুকে।শেফা মুখে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো।কথা’র বুক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে।লিরা প্রচন্ড আক্রোশে আরো কয়েকবার ছুড়িকাঘাত করলো কথা’র বুকে।হৃদপিন্ড ভেদ করে গেলো ছুড়িটি।কথা’র মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুড়িটি বুক থেকে টেনে বের করে গলায় চালান করে দিলো।ছুড়ির আঘাতে কথা’র কন্ঠনালীটি দু’টুকরো হয়ে গেলো।
শেফার বুকের ভেতর কোথায় যেনো কি হয়ে গেলো, মনে হলো কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে গেলো।লিরা নিজের মনের ঝাল মিটিয়ে বৃদ্ধা স্টাফের শরীর থেকে বেরিয়ে গেলো।আর বৃদ্ধার শরীরটি কালো ধোয়ার মত শূন্যে মিলিয়ে গেলো।
শেফা বসে পড়লো ফ্লোরে।যেখানে কথা’র মৃতদেহটি পড়ে রয়েছে।শেফা কথা’র পাশে বসে আছে।কথা’র এখনো চোখ খোলে রয়েছে।বন্ধ করারো সুযোগ পায়নি।চোখ কোথায় যেনো স্থীর।ভয় আর বাচাঁর তীব্র ইচ্ছা শক্তির ছাপ কথা’র চোখে।শেফা কাদঁছে না।মানুষ যেমন অধিক শোকে পাথর হয়ে যায় তেমনি শেফার অবস্থাও এই মুহুর্তে ঠিক তাই।শেফা পাথর হয়ে গেছে।একটা শীতল বাতাস শেফার চুল উড়িয়ে দিয়ে ঘোর কাটিয়ে দিলো।শেফার ঘোর কাটতেই গগনবিদারী কান্নার প্রলাপে জাগিয়ে তুলল হোস্টেলের সবাইকে।
পুলিশ অফিসার মোঃ সোহেল রানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শেফা।শেফা কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবে তাই।মোঃ সোহেল রানা বলল,
“তোমার নাম মিস শেফা?
শেফা ম্লান মুখে জবাব দিলো,
“হ্যা আমিই শেফা।”
সোহেল রানা বলল,
“তুমি মিস কথা’র বান্ধবী ছিলে?
শেফা মাথা নেড়ে জবাব দিলো।
মোঃ সোহেল রানা গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল,
“যখন মিস কথা মার্ডার হয় তখন তুমি কোথায় ছিলে?”
শেফা সরল কন্ঠে একবাক্যে জবাব দিলো,
“আমি কথা’র সাথেই ছিলাম।”
সোহেল রানা বলল,
“আচ্ছা! তাহলে মিস কথা’কে কে মেরেছে তা তুমি নিশ্চই দেখেছো?
শেফার সরল স্বীকারোক্তি সে দেখেছে খুনিকে।
মোঃ সোহেল রানা বলল,
“তাহলে আমাদের বলো খুনি কে?
শেফা কিছু বলতে যাবে তখন সামনে লিরার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো।লিরা ইশারা দিয়ে বলছে শেফা আর যাই বলুক কোন ক্রমেই যেনো শেফাকে সন্দেহ করার সুযোগ না দেয় কথার খুনের জন্য।শেফা লিরার মুখটা দেখেই ভেতরে ভেতরে জ্বলে উঠলো।শেফার মনে একটা একটা বুদ্ধি এসে গেলো।
শেফা মনে মনে ভাবল, কথা’র খুনের দায়ভার সে নিজের কাধে চাপিয়ে নেবে।যার ফলে শেফা থাকবে জেলে আর লিরা তাকে হাতিয়ার করে মানব হত্যার মত জঘন্যতম পাপ কাজ করাতে পারবেনা।পুলিশ অফিসার মোঃ সোহেল রানা তাড়া দিতে লাগল খুনি কে তা বলার জন্য।
শেফা লিরার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকী হাসি দিয়ে পুলিশ অফিসার সোহেল রানা কে বলল,
“আজ্ঞে আমিই আমার বান্ধবী কথা’র খুনি।”
হোস্টেল সুপার অনন্যা খানম বসা থেকে উঠে গেলো কথাটি শোনে।পুলিশ অফিসার সরু চোখে শেফা কে দেখলো তারপর বলল,
“তুমি?
শেফা মাথা নাড়ল।সোহেল রানা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“কেনো মেরেছো?
শেফা এই মুহুর্তে বিপাকে পড়ে গেলো।বলে তো দিলো ও নিজেই কথা’র খুনি কিন্তু কি কারণে মেরেছে এটার উত্তরে কি বলবে ভেবে পেলো না।পুলিশ অফিসার শেফার মুখের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে সব খেয়াল করছে।
শেফা বলল,
“মেরেছি এমনি মেরেছি জানি না কেনো মেরেছি।মারতে ইচ্ছে হলো তাই মেরেছি।”
পুলিশ অফিসার সোহেল রানা বলল,
“এমনি কখনো কেউ কাউকে মারে না।কোন না কোন কারণ থাকে মারার জন্য
আমরা সেই কারণটাই শোনতে চাচ্ছি।”
শেফা বলল,
“কোন কারণ নেই আমি এমনিই মেরেছি।”
মোঃ সোহেল রানা বলল
“এমনি এমনি কেউ কাউকে মারে না মিস শেফা।এমন তো নয় যে আপনি প্রকৃত খুনিকে বাঁচাতে চাইছেন?”
শেফা কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল,
“প্রকৃত খুনী তো আমিই।আমি আমাকে বাঁচাতে চাইলে তো বলতামই না।”
সোহেল রানা শেফাকে আরো একনজর দেখে বলল,
“আচ্ছা আমি মেনে নিলাম তুমিই খুন করেছো কিন্তু তোমার মত এতো অল্প বয়সী একটা মেয়ে কি করে খুন করতে পারে?”
শেফা কিছু বলতে যাবে তখন কনস্টেবল মোহন দাস কিছু ফাইল এনে সোহেল রানার হাতে দিলো।
ফাইল গুলো ঘেটে বলল,
শেফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমিই মেরেছো কথাকে?
শেফা মাথা নাড়ল।সোহেল রানা ফাইল গুলো শেফার সামনে ধরে বলল,
“তাহলে এগুলো কি?
শেফা ফাইল গুলো দেখে বিস্মিত হয়ে গেলো।মিসেস খানম সোহেল রানার উদ্দেশ্যে বলল,
“কি রয়েছে ই ফাইলে অফিসার?
সোহেল রানা মিসেস খানমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কথা’কে যে ছুড়ি দিয়ে মারা হয়েছে তা পাওয়া গেছে আপনাদের হোস্টেলের স্টাফ মিসেস মর্জিনার ঘরে এবং ছুড়ির উপর তার আঙ্গুলের ছাপ ও পাওয়া গেছে।”
মিসেস অনন্যা খানম বলল,
“কিন্তু হোস্টেল স্টাফ মর্জিনা কেনো মারবে কথা’কে?
সোহেল রানা বলল,
“সেটার ব্যাপারে তদন্ত করে আপনাদের জানানো হবে।আপাতত আপনি মিস শেফার মাথার ট্রিটমেন্ট করান।বান্ধবীর মৃত্যুতে এ উন্মাদ হয়ে গেছে।”
শেফা আপত্তি জানিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন সোহেল রানা শেফা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার কোন কথাই এই মূহুর্তে গ্রহন যোগ্য নয়।আমরা এখন স্টাফ মিসেস মর্জিনা কে খোজব এবং খুনের আসল কারণ বের করব।”
মোঃ সোহেল রানা মিসেস খানমের থেকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
শেফা কে পাগল আখ্যা দিয়ে সীক রুমে ভর্তি করে রাখা হয়েছে।শেফা সবাইকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছে সে পাগল নয় কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করেনি।শেফার বাবা মা পর্যন্ত বিশ্বাস করেনি শেফার কথা।
শেফা শোয়ে আছে একা একা।এমন সময় শেফার শিয়রে কারো উপস্থিতি টের পেলো।মাথা ঘুরিয়ে দেখলো কেউ নেই।শুধু একটি চিরকুট রাখা।
শেফা চিরকুট টি হাতে নিয়ে তার ভাজ খোলল, তাতে লেখা রয়েছে,
“তুই কোন ভাবেই আমার হাত থেকে বাচতে পারবি না।আমি তো আমার প্রতিশোধ পূরণ করবই।”
এতোটুকুই লেখা আর নিচে রক্তাক্ষরে লিরার নামটি লেখা ছোট্ট করে।
.
.
চলবে…
লিখেছেনঃ রাহিমা নিশাত নিঝুম
1 Comment
Pingback: রুম নম্বর ২০৯ | সিজনঃ ১ | পর্বঃ ১০ - পাঠান্তর