মাঝ রাত্রে একজন স্টাফের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সবার।২০৯ এর মেয়েরা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।কথা, লিরা এবং শেফা বারান্দায় এসে দাড়ালো।স্টাফের নাম আব্দুর রহমান, উনি এসে বারান্দার ফ্লোরে পড়ে গেলো।মেয়েরা তাড়াতাড়ি করে মেট্রন কে খবর দিলো।মেট্রন এসে আব্দুর রহমান কে নিয়ে গেলো।
পরে সবাই জানতে পারলো আব্দুর রহমান নাকি কি একটা দেখেছে তিন তলায় উঠার সিড়িতে।তাই ভয় পেয়ে বেচারার এই অবস্থা।
লিরা রুমে এসে বসল, ওর মুখে রাগী রাগী ভাব ফোটে উঠল।
শেফা লিরাকে লক্ষ করলো।কাছে এসে বসল, লিরার হাতের উপর হাত রেখে কোমল কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে তোর? তোর মুখটা এমন লাগছে কেনো?
লিরা বলল,
“সবাই মিলে কি শুরু করেছে দেখ!
শেফা বলল,
“কেনো কার আবার কি হলো?
লিরা বলল,
“কি আবার হবে?সবাই মিলে ওক সাথে ভূত দেখা শুরু করেছে।এটা কি কোন ভাবে সম্ভব?
শেফা লিরার হাতটি ছেড়ে দিয়ে বলল,
“কেনো সম্ভব নয় লিরা? আমি নিজের চোখে দেখেছি।প্রতিনিয়ত ঘটছে আমার সাথে এসব, আমি ভয়ে ভয়ে এই হোস্টেলে রাত্রিযাপন করছি।”
লিরা মৌনতা অবলম্বন করলো।শেফা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তোকে এসব বলে কি লাভ? তুই তো বিশ্বাস ই করিস না এসব।”
লিরা এবার মুখ খোলল, বলল,
“শেফা তোর জানালাটি খোল একটা জিনিস দেখাবো।”
শেফা বলল,
“না ভাই আমি জানালা খোলতে পারব না।জানালা খোললেই অভিশপ্ত শশানটা চোখে পড়ে।”
লিরা বলল,
“অভিশপ্ত কেনো বলছিস? দেখ আমি তো তোর সাথেই আছি, এখানে কিসের ভয়?”
শেফা তবুও একটু ইতস্তত করলো।লিরা একপ্রকার জোর করেই জানালাটি খোলে দিলো।
লিরা জানালার সামনে এসে বলল,
“দেখ শশান টা কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাই না?
শেফা ভাঙ্গা গলায় বলল,
“পাগল হয়ে গেছিস তুই? শশান কখনো সুন্দর হয়?
লিরা রহস্যময়ভাবে একটু হাসলো।হেসে বলল,
“শশান সুন্দর হয় তো, সব মৃতদের কাছেই শশান সুন্দর হয়।”
“তুই কি গাজা খেয়েছিস দোস্ত?
শেফা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্নটি করলো লিরাকে।
লিরা জানালাটি বন্ধ করে বলল,
“কিছু না।তুই ঘুমিয়ে পড়।”
শেফা আবার প্রশ্ন করল কিন্তু লিরার থেকে কোন উত্তর পেলো না।
শেফার মনের মধ্যে কেমন যেনো খচখচ করতে লাগল।লিরা কেনো এমন কথা বলল।
কথা হাত মুখ ধুয়ে এসে শেফা কে চিন্তিত দেখে চিন্তিত থাকার কারণ টি জিজ্ঞেস করলো।শেফা বলল কোন কারনেই সে চিন্তিত না।
কথা শেফা কে বলল,
“শোন তুই ঘুমিয়ে পড়, আমি একটু ফোনে কথা বলব।”
শেফা আচ্ছা বলে শোয়ে পড়লো।
শেফা ঘুমিয়ে পড়েছে।
গরমে সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার, মাথার উপরের ফ্যানের ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দটি থেমে গেছে।তার মানে বিদ্যুৎ চলে গেছে।
শেফা উঠে গেলো বিছানা থেকে।কথা এখনো আসেনি রুমে।শেফা গরম সহ্য করতে না পেরে বাহিরে চলে গেলো।লিরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাই আর লিরাকে ডাকেনি শেফা।
শেফা বাহিরে চলে গেলো, বারান্দার লাইট গুলোতে চারপাশ আলোতে ভরে গেছে।শেফা কানে ইয়ারফোন গুজে চেয়ারে বসে রইলো।বাহিরে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস আসছে।
শেফা গান শোনছে, হঠাৎ শেফার চোখ গেলো তিন তলার বারান্দায়, কেউ একজন বারান্দার রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছে।শেফা ডাক দিলো মেয়েটি, মেয়েটি পড়ে যাবে তো।
শেফা মেয়েটিকে বার বার ডেকেও যখন কোন সাড়া পেলো না তখন তিন তলায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।শেফা যাবার জন্য পা বাড়ালো, তখন ওর মনে পড়লো এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।যদি আবার কোন আত্মা হয়।
আবার ভাবলো যদি মানুষ হয় তাহলে তো যেকোন বিপদ ঘটে যাবে।
শেফা তিন তলায় চলে গেলো আর কিছু না ভেবেই।যেই বারান্দায় মেয়েটিকে দেখেছিলো সেখানে এসে দেখলো কথা বসে আছে ওভাবে।
শেফা কথাকে দেখে বলল,
“কথা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?এভাবে বসে আছিস যদি কোন অঘটন ঘটে যায়?
কথা কোন জবাব দিলো না।কথার চোখের দিকে তাকালো, কথার চোখ রক্ত বর্ণ ধারন করে আছে।শেফা কথার হাত ধরে বলল,
“কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেনো?
কথা শেফার দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে পড়লো তিন তলার বারান্দার রেলিং থেকে।শেফা চিৎকার দিয়ে কথাকে ডাকতে লাগল।নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না।
শেফা রেলিং ধরে কান্না করছে, শেফার কাধে কেউ হাত দিলো।শেফা চমকে উঠে পেছনে ঘুরে তাকালো।
দেখলো কথা দাঁড়িয়ে আছে।শেফা তাকিয়েই আছে কোন কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।
কথা শেফার চোখের সামনে চুটকি বাজিয়ে ডাক দিলো।শেফার ঘোর কেটে গেলো।শেফা তুতলিয়ে বলল,
“ত তুই!
কথা বলল,
“হ্যা আমি কেনো?
শেফা বিস্ময়ে অপলক তাকিয়েই আছে।কথা বলল,
“এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস যেনো ভূত দেখছিস।”
শেফা হেসে বলল,
“সেরকম কোন ব্যাপার না।”
কথা শেফা কে টেনে নিয়ে গেলো বারান্দায়।বলল,
“চল রুমে যাই, অনেক রাত হয়েছে আর তুই এখনো ঘুমাসনি?”
শেফার কানে কথার কথা গুলো পৌছায়নি।শেফা শুধু ভাবছে কি দেখলো ও এটা।কথা শেফা কে ঝাকি দিয়ে বলল,
“কি হলো কথা বলছিস না কেনো?
শেফার ঘোর কেটে গেলো, চমকে উঠে তাকালো কথার দিকে।
কথা শেফা কে আবার বলল,
“কিরে কথা বলছিস না কেনো?
শেফা তাড়াতাড়ি করে জবাব দিলো,
“আমার গরম লাগছিলো তাই তোর কাছে…
ক’থা শেফাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল,
“তাই তুই আমাকে খোজতে এসেছিলি!
শেফা মাথা নাড়ল।ক’থা শেফার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
” চল এবার রুমে।”
কথা শেফাকে টেনে নিয়ে গেলো রুমে।দুজনে শোয়ে পড়লো।
কথা ঘুমিয়ে পড়েছে।শেফা এখনো ঘুমায়নি,
আবার সেই নুপুরের শব্দ।শেফা নুপুরের শব্দ শোনে ভয়ে গুটিয়ে গেলো, চুপচাপ শোয়ে আছে, নিজের নিঃশ্বাসের শব্দটাকেও গোপন রাখতে চাইছে যেন।একটু পরেই নুপুরের শব্দ টা মিলিয়ে গেলো।
শেফা ভয়ে ঘেমে নেয়ে গেছে, নুপুরের শব্দ চলে যাওয়াতে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে শোয়ে পড়ল।
বিছানার নীচ থেকে গুঙ্গানীর শব্দ ভেসে এলো।শেফার চোখ সবে মাত্র লেগে এসেছিলো।গোঙ্গানীর শব্দে চোখ মেলে তাকালো।
একটা লাশ শেফার বিছানার পাশে ফ্লোরে সটান হয়ে শোয়ে আছে।শেফা যখন লাশটির দিকে তাকালো অমনি লাশটি শেফার দিকে বাকা চোখের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।শেফার প্রানটি কেপেঁ উঠলো যেনো।
লাশটি ধীরে ধীরে উঠে আসছে, লাশের শরীরের পচাঁ রক্ত ফ্লোরময় ছড়িয়ে আছে।শেফা বিছানা ছেড়ে উঠে পালাতে চাইছে কিন্তু কে যেনো শেফাকে বিছানার সাথে বেধে রেখেছে।গলা দিয়ে চিৎকার ও বের হচ্ছে না।যতো উচ্চ গলাতে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু তবুও পারছে না।
লাশটি কুৎসিত একটা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে এলো।হাত বাড়িয়ে শেফার গলা চেপে ধরতে চাইছে।ভয়ে শেফার চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যাচ্ছে।উঠার জন্য প্রানপন চেষ্টা করেও উঠতে পারছেনা।লাশটি শেফার গলা চেপে ধরলো।শেফা বাচার জন্য ছটফট করেই যাচ্ছে।
লাশটি শেফার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“তোকে তো মরতেই হবে।শুধু তোর কারণে আমি শান্তি পাচ্ছি না।এবার তোর খেলা শেষ।”
খুব জোরে গলা চেপে ধরেছে এবার, শেফার জিব বেরিয়ে গেছে।জীবন টা শুরু না হতেই শেষ হয়ে গেলো…!
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম…
মোয়াজ্জিনের কন্ঠের সমুধুর কন্ঠ ভেসে এলো শেফার কানে।আজানের পবিত্র ধ্বনি “আল্লাহু আকবর” কানে যেতেই লাশটি ভয় পেয়ে গেলো।উধাও হয়ে গেলো মুহুর্তেই।
শেফা উঠে বসে হাপাতে লাগল, হাপাতে হাপাতে এক সময় ভয়ে কান্না করে দিলো।
।
শেফা মন মরা হয়ে বসে আছে, হোস্টেলে থাকাটা যেনো অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য।কবে মুক্তি পাবে কে জানে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের অদৃষ্টের কথা ভাবছে।
একটি হাত পেছন থেকে শেফার কাঁধে হাত রাখল।শেফা ভয় পেয়ে গেলো।চমকে উঠে পেছনে তাকালো।
লিরা হেসে লুটিয়ে পড়ছে যেনো।
শেফা রেগে গেলো, লিরার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“কি করছিলি তুই? আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
লিরা হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে।শেফা জ্বলে উঠলো
“তুই হাসছিস?
লিরা হাসি থামিয়ে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা স্যরি।তুই ভয় পাবি জানলে কখনোই এভাবে ধরতাম না।”
আবার হাসতে শুরু করলো লিরা।
শেফা রেগে গিয়েও কিছু বলতে পারল না।কিছু কিছু মানুষ আছে তারা যখন অতিরিক্ত রেগে যায় বা তাদের রাগের সময়ের কথাকে কেউ পাত্তা না দিয়ে একই কাজ করতে থাকে তখন চুপ করেই থাকে।
শেফাও সেইসব মানুষের দলে।
লিরা এবং শেফার কথোপকথন হোস্টেলের একজন স্টাফ খেয়াল করছিলো।স্টাফের চোখে মুখে কৌতুহল।
শেফা গোসল করতে যাচ্ছে, রান্না ঘরের সামনে আসতেই উক্ত স্টাফটি শেফা কে ডেকে দাড় করালো।
শেফা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আমাকে ডাকছেন খালা?
স্টাফটি বলল,
“আমার নাম মর্জিনা, তুমি ২০৯ নাম্বার রুমে থাকো না?
“হ্যা থাকি কিন্তু কেনো?
শেফার কথার জবাবে মর্জিনা খালা বলল,
“তুমি তখন একা একা কার সাথে কথা বলছিলে?
শেফা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
“একা একা কোথায়? আমিতো আমার বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং তার সাথেই কথা বলছিলাম।”
মর্জিনা খালা বলল,
“কই আমিতো কাউরেই দেখলাম না!
“কি বলছেন? আমিতো আমার বন্ধু লিরার সাথেই কথা বলছিলাম।”
মর্জিনা আর্তনাদ করে উঠলো একপ্রকার।
শেফা খালাকে আতংকিত দেখে বলল,
“আপনি লিরার নাম শোনতেই চমকে উঠলেন কেনো?
মর্জিনা খালা বলল,
“লিরা নামের কেউ নেই ২০৯ নাম্বার রুমে।”
শেফা অতি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি সব বলছেন আপনি?লিরা নামের কেউ নেই পাগল নাকী!
মর্জিনা খালা বলল,
“হ্যা কেউ নেই।তবে লিরা নামের একজন ছিলো যে ১৯৯৭ সালে মারা গেছে।”
এই কথাটি শোনা মাত্রই শেফার শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।মর্জিনা খালা আবার বলল,
“১৯৯৭ সালে লিরা নামের একটি মেয়ে ২০৯ নাম্বার রুমে থাকত।খুবই ভালো ছিলো মেয়েটি, হঠাৎ একদিন বাথরুমে তার লাশ পাওয়া যায়।”
শেফার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
মর্জিনা খালা বলল,
“মেয়েটি হিন্দু ছিলো, দেখতে ফর্সা আর বেশ লম্বা।ওকে যেই দেখতে তার কাছেই ও দেখতে যেনো সৌন্দর্যের দেবি হয়ে যেতো।”
শেফা সাথে সাথেই জবাব দিলো,
“হ্যা হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন।লিরা হিন্দু আর আপনি যেরকম বর্ণনা দিলেন ঠিক তেমনি।”
মর্জিনা খালা বলল,
“কিন্তু তুমি লিরাকে কি করে চেনো?আর কিভাবে সম্ভব এটা?”
শেফার শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে গেলো, ঘাড়ের পশম গুলোও।
এতোদিন একটা মৃত মানুষ এর সাথে ছিলো।ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।শেফা মর্জিনার কথার আর কোন জবাব না দিয়ে চলে এলো।মর্জিনা খালার কৌতুহল যেনো কমছেই না।
শেফা গোসল খানায় গেলো।শেফার মন চিন্তার অতল গহবরে তলিয়ে আছে।একজন সিনিয়র বড় আপুর সাথে ধাক্কা লেগে গেছে টের ই পায়নি।সিনিয়র আপুটি খেকিয়ে উঠলেন, অভদ্র বলে গালিও দিলো।
শেফার এসব কিছুই কর্ণগোচর হল না।বড় গোসল খানায় অনেকেই গোসল করছে।শেফা বালতি পানিতে ভরতে দিয়ে পাশে তাকালো।
লিরা গোসল করছে।শেফা কে দেখে লিরা হাসলো।
অন্যসময় হলে শেফা লিরা কে ডাক দিতো।কিন্তু এখন লিরাকে দেখেই ভয় লাগছে ওর।
শেফার আজ লিরা কে দেখে ভয়-ই লাগছে।এই মানুষ টা মৃত (!) ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।লিরা কে আজ শেফা ইগনোর করছে খুব।
লিরা একটু আগে শেফা কে বলেছিলো পুকুর পাড়ে যেতে কিন্তু শেফা যায়নি এটা ক’থা বেশ ভালো ভাবেই খেয়াল করছে।
“আচ্ছা তুই আজ লিরা’কে এইভাবে ইগনোর করছিস কেনো? আগে তো এমন করতিস না।”
কথাটি বলল ক’থা।
শেফা কথাকে টেনে নিয়ে বাহিরে গেলো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকালো।তারপর নীচু গলায় বলল,
“শোন কথা আমি তোকে একটি কথা বলতে চাই।”
কথা শেফার এমন ব্যাবহারে বেশ অবাক হয়ে গেলো, বলল,
“হ্যা বল, কিন্তু এভাবে চোরের মত করে বলার কি আছে।’
শেফা কথা’কে হুশিয়ার করে দিলো যেনো আস্তে কথা বলে।
ক’থা মেনে নিলো।শেফা বলল,
“জানিস আমরা যেই লিরা’কে দেখছি সে আসলে মানুষ নয়।”
কথা হাসি থামিয়ে রাখতে পারল না।শেফা বলল,
“হাসিস না, সিরিয়াসলি বলছি।ঐ যে মর্জিনা খালা আছে না?হোস্টেল স্টাফ! উনি আমাকে বলেছেন।”
শেফা ক’থাকে বিস্তারিত খোলে বলল।ক’থা কিছুক্ষন ভেবে বলল,
“তাহলে আমরা লিরা কে কেনো দেখতে পাচ্ছি?
“জানি না রে কেনো দেখতে পাচ্ছি।
আচ্ছা এসব লিরার কারনে হচ্ছে না তো?”
এমন সময় জেনি আসলো ওদের কাছে।জেনি অন্য রুমে থাকে।
জেনি এসে বলল,
“কি ব্যাপার তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো?
ক’থা বলল,
“এমনি তেমন কিছু না।”
জেনি হেসে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে।আজ আমার বার্থ ডে, আমাদের রুমে আমার ফ্রেন্ডরা মিলে সেলব্রেট করব।তোমরা আসছো তো?
শেফা বলল,
“কিন্তু জেনি আমরা তো যেতে পারব না।”
জেনি ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,
“কেনো আসতে পারবে না?
ক’থা বলল,
“ঐ আমাদের একটু কাজ আছে।”
জেনি বলল,
“কোন বাহানা বা অজুহাত আমি শোনছি না
তোমরা আসছো এটাই শেষ কথা।”
লিরা ক’থার পাশে এসে দাড়ালো।হঠাৎ লিরা কে দেখে চমকে উঠলো ক’থা।লিরা বলল,
“কি ব্যাপার চমকে উঠলি যে?
ক’থা তাড়াহুড়া করে বলল,
“কই চমকালাম?
“হুম রুমে আয় কথা আছে।”
লিরা চলে গেলো।
শেফা ভয় পেয়ে গেলো এই ভেবে যে লিরা আবার কিছু জানতে পারল কিনা।
এরই মাঝে জেনি বলে উঠলো,
“ক’থা তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?
কথা বলল,
“কেনো তুমি দেখোনি?এখানে তো আমার বন্ধু লিরা দাঁড়িয়ে ছিলো।
শেফা কে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“তাই না শেফা?
শেফা ক’থার কথায় তাল মিলয়ে বলল,
“হ্যা হ্যা এখানেই তো দাঁড়ানো ছিলো।”
জেনি বলল,
“কই আমি তো কাউকে দেখতে পেলাম না।আর তোমাদের রুমে লিরা নামের।কেউ আছে তাতো জানতাম না।কই আমাকে দেখাও, আমি দেখি পরিচিত হই এবং তাকেও ইনভাইট করি।”
শেফা অবস্থা শোচনীয় দেখে বলল,
“তুমি যাও জেনি আমরা তোমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসব।”
জেনি এই কথাকে আনন্দিত হলো এবং লিরার সাথে পরিচয় হওয়ার কথা ভুলে গেলো।
জেনি চলে গেলো।সেই সাথে দরজার আড়াল থেকে একটি ছায়া মূর্তি মিলিয়ে গেলো।
.
.
চলবে….
লিখেছেনঃ রাহিমা নিশাত নিঝুম