পরেরদিন…..
সকালে….
তিতাস অফিসে ঢুকতেই সবাই দাড়িয়ে তাকে সম্মান জানালো।
গুড মর্নিং গাইস।
গুড মর্নিং স্যার!!!
তিতাস একবার তার নজর পুরো অফিসে ঘুরালো।কোথাও তিতিরকে দেখলোনা।
তিতাসঃকি হলো আজ তিতিরকে দেখা যাচ্ছে না কেনো? (মনে মনে)
হঠাৎ নিজের প্রশ্নে নিজেই অবাক
তিতাস তোর কি হয়েছে তুই আজ হঠাৎ ঐ মেয়ের কথা ভাবছস?তুই পাগল হয় যাচ্ছস??
তিতাস বড় একটা শ্বাস নিলো।
হটাৎ তিতাস এর নজর দরজার দিকে গেলো।
সে দেখলো তিতির আসছে তবে তার সাথে শুভ।তিতির শুভর সাথে খুব হেসে হেসে কথাও বলছে।তা দেখে তিতাস এর খুব রাগ হলো।
তিতাসঃতোমরা এতক্ষনে এসেছো? কোথায় ছিলে তোমরা?😤
তিতিরঃস্যার আসলে আফতাব স্যার আমাদের দুইজনকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলো তাই,স্যার।
শুভঃ জি স্যার। আমরা কাজের জন্য গিয়েছিলাম।
তিতাসঃওকে যাও তোমাদের ডেস্কে। আর তিতির তুমি ড্রাগ ডিল কেসের ফাইলটা নিয়ে আমার কেবিনে এসো।
তিতিরঃওকে স্যার।।।
তিতাস কেবিনে চলে গেলো।
তিতাসঃআমি এমন কেনো বিহেভ করলাম?তিতিরকে শুভর সাথে দেখে মাথা গরম হচ্ছিলো কেনো?
তিতিরঃ,আসতে পারি স্যার?
তিতাসঃইয়েস।
তিতিরঃস্যার ফাইলটা
তিতাস ফাইলটা নিয়ে বললো তিতিরকে বসতে।তিতিরও বসলো।
তিতাসঃতিতির তুমি এই ফাইলগুলো নাও আর এখানে বসে সব ফাইলগুলো চেক করো।
তিতিরঃএখানে????
তিতাসঃহুমম এখানে। কোনো প্রবলেম?
তিতিরঃনো স্যার। আমি এখানেই করছি।
তিতাসঃহুমমম।আমি জানি না কেনো তোমাকে এখানে বসতে বললাম কিন্তু আজ প্রথম তোমার সাথে বসতে মন চাইলো।
তিতির ফাইল নিয়ে কাজ করছে।তিতাসও করছে।হটাৎ তিতাস এর নজর তিতির এর উপর গেলো, সাদা শার্ট, লাল লিপস্টিক, টানা টানা চোখে হালকা কাজল, চুল উপর করে ঝুটি করে বাঁধা। কিছু ছোট ছোট চুল কপালে পড়ছে।তিতির তার,মুখে কলমটা নিয়ে কামড়ে ধরে আছে।আর ভাবছে কাজ নিয়ে। তিতাস এর কাছে এই কলম মুখে দেওয়া আজিব লাগে কিন্তু তিতির এর কলম মুখে দেওয়ায় কেনো যেনো খুব ভালো লাগছে।
আজ প্রথম তিতিরকে এতো কাছ থেকে আর ভালো করে দেখছে তিতাস।
তিতিরঃস্যার!!!
তিতির এর ডাকে তিতাস এর ধ্যান ভাঙে।
তিতাসঃহুমম বলো।
তিতিরঃস্যার ফাইল দেখা শেষ আমি কি যেতে পারি?। তিতাসঃহুমমম যেতে পারো।
তিতির চলে গেলো।
তিতাসঃউফফ তুই কি করছিলি এটা।তিতাস তুই এতো ছ্যাচড়া কখন থেকে হলি?তিতাস কনট্রল ইউর সেলফ।বড় একটা শ্বাস নিয়ে তিতাস কাজ করা শুরু করলো।
বিকালে………..
তিতাস অফিস থেকে বের হচ্ছিলো। এমন সময় প্র্যাকটিস রুম থেকে আওয়াজ আসলো তাই তিতাস ঐ দিকে গেলো আর গিয়ে যা দেখলো তাতে তিতাস অবাক…
তিতির বক্সিং প্রেক্টিস করছে।
তিতাস এক পলকে তিতির এর দিকে তাকিয়ে আছে।তিতির এর মুখে জমে থাকা ঘামের ফোটা মুক্তর মতো দেখাচ্ছে। ছোট ছোট চুল গুলো কপালে ঘামের সাথে লেগে আছে।চোখের কাজল লেপ্টে আছে।কি অপূর্ব লাগছে।
তিতির প্রেকটিস শেষ করে দরজার দিকে তাকাতেই তিতাস লুকিয়ে গেলো।
তিতির নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
তিতাসঃকেনো জানি না তবে আজ তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে কেমন এক আনন্দ লাগছে।নিজেই মনে মনে খুশি হলো।
তিতাস বের হয়ে গেলো।
৪দিন পর……………………….
এই চারদিনে টিম6 ডেভিল এর ড্রাগ ডিলিং এর একটা ট্রাককে জব্দ করেছে যদিও ডেভিলকে ধরতে পারেনি।
আর তিতাস! তিতাসও তিতির এর ভাবনায় মগ্ন।এর কারন তিতাস নিজেও জানে না তবে তিতির এর কথা ভাবতে তিতাস এর মনে এক অন্য রকম সুখের দোলা দেয়।
রাতে রুমে বসে তিতাস খাটে শুয়ে শুয়ে ভাবছে
তিতাসঃউফফ তিতাস তুই খালি তিতির এর কথা কেনো ভাবছস? পাগল হয়ে যাচ্ছিস!!!😣😣😣
এমন সময় তিতাস এর ফোন বেজে উঠলো।
তিতাস হাতে ফোন নিয়ে দেখলো আকাশ ফোন করেছে।
তিতাসঃহ্যালো তিতির বলো?
আকাশঃস্যার আমি আকাশ।।
তিতাসঃউপপস সরি। বলো আকাশ
আকাশঃআসলে স্যার কাল আমরা মিনিস্টার স্যার এর পার্টিতে যাওয়ার,কথা। আর কাল আমাদের অফিসে একটা ফাইলও সাইন করতে হবে তাই ভাবছিলাম কাল আমরা সবাই রেডি হয়ে অফিসে গিয়ে কাজ শেষ করে দেন সবাই একসাথে পার্টিতে যাবো। আপনি কি বলেন স্যার?
তিতাসঃ হুম ঠিক বলেছো।এটাই করবো তাহলে কাল দেখা হচ্ছে।। আকাশঃজি স্যার।গুড নাইট।
তিতাসঃগুড নাইট।
তিতাস ফোন রেখে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন বিকালে……………….………….
আকাশ,নীল,শুভ আর তিতাস অফিসে চলে এসেছে। আজ ওরা সবাই ইনফরমাল ড্রেস পড়েছে। তিতাস ব্লাক কোর্ট,হোয়াইট শার্ট, হাতে কালো ঘড়ি,চুলে জেল দেওয়া।হিরোর থেকে কম লাগছেনা। আকাশ রেড কোর্ট পড়েছে, হাতে সিলভার ঘড়ি, নীল হোয়াইট শার্ট পড়েছে।স্লিভস গুলো একটু উঠিয়ে, হাতে কালো ঘড়ি,চুল সবাইকে করে,আর শুভ পড়েছে নীল রং এর শার্ট।
নীলঃউফফ এই প্রিয়া আর তিতির কোথায় এখনো আসছেনা?😩😩এতো টাইম লাগে?.
আকাশঃআরে মেয়েদের রেডি হতে অনেক সময় লাগে। তুমি বুঝবেনা।
তিতাসঃআপনার মনে হয় অনেক এক্সপেরিএন্স আছে মনে হচ্ছে।
শুভঃআরে থাকবেনা কেনো?আকাশ ভাই তো বিবাহিত উনার ওয়াইফ এমন করে তাই জানে।
আকাশঃহুমমম ভাই। ম্যাডাম এখন বাপের বাড়িতে তাই আজ আসতে পারলাম।নইলে রেডি হতে হতে পার্টি শেষ।
সবাই হেসে দিলো😂😂😂😂😂
প্রিয়াঃকি হলো আপনারা হাসছেন কেনো?
সবাই দরজার দিকে তাকালো প্রিয়া চলে এসেছে।
প্রিয়া সাদা রং এর একটা শাড়ি পড়েছে। ঠোটে গোলাপি লিপস্টিক, চোখে কাজল, কানে সাদা পাথরের দুল, চুল খোলা। অনেক সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে।
নীল তো প্রিয়াকে দেখেই ফিদা।ওহহহ আপনাদের বলাই হয়নি নীল প্রিয়ার উপর বিগ সাইজ ক্রাশ।যদিও ওকে বলতে পারেনি কারন একটা ভয়। ও ভাবে যদি প্রিয়া ওকে ভুল বুঝে তাই বলতে পারে না।
নীল এখনো প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
😍😍😍😍😍
প্রিয়াঃআপনারা সবাই কি নিয়ে কথা বলছিলেন?
শুভঃ তেমন কিছুনা।তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে প্রিয়া।।
প্রিয়াঃধন্যবাদ স্যার।,😊😊
নীলঃহুমমম,😍😍😍😍😍
আকাশঃপ্রিয়া, তুমি তো আছো তিতির কোথায়?
প্রিয়াঃও তো….
ঐ যে চলে এসেছে।
সবাই দরজার দিকে তাকালো
তিতাস দরজার দিকে তাকাতেই শেষ!😮😮😮😮
তিতির আজ হালকা গোলাপি রং এর একটা শাড়ি পড়েছে। ঠোটে গেলাপি লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাজল, কানে ছোট ছোট দুল, চুল খোপা করা,তাতে বেলি ফুলের মালা।
তিতিরকে এই রূপে দেখে তিতাস মুগ্ধ। কারন এতোদিন তিতিরকে ফর্মাল লুকে দেখেছে। আজ প্রথম শাড়িতে দেখে তিতাস অবাক!
তিতাসঃউফফ এই মেয়েকে আজ এতো সাজতে কে বলেছে? সবাই তো ওকেই দেখবে। পুরো গোলাপ ফুলের মতো লাগছে।
তিতির ওদের কাছে এগিয়ে এলো।
তিতিরঃকেমন আছেন সবাই?
আকাশঃআমরা ভালো।
শুভঃতিতির তোমাকে তো আজ পরীর মতো লাগছে।কাকে ঘায়েল করবা?
তিতিরঃশুভ!!!!
শুভঃ😂😂😂
তিতাস এর কেমন যেনো লাগছে।আসলে জলছে।আপনারা তো বুঝতেই পারছেন😁😁😁
আকাশঃওকে চলো কাজ শেষ করে যায় লেট হয়ে যাচ্ছে।
নীলঃহুমমমমম।
সবাই ফাইলে সাইন করে গাড়িতে বসে পড়লো।
তিতাস এর পাশে বসেছে আকাশ।
পিছনে তিতির আর প্রিয়া আর আর তার পিছনে নীল আর শুভ।
কিছু সময় পর ওরা পার্টিতে পৌছে গেলো।
ওরা পার্টিতে ঢুকতেই মিনিস্টার ওদের স্বাগতম জানালো।
মিনিস্টার ঃওয়েলকাম ওয়েলকাম। আপনাদের জন্য ওয়েট করছিলাম।
তিতাসঃহ্যালো স্যার।
সবাই কুশল বিনিময় করলো।।
মিনিস্টার ঃইনি হলো আমার ওয়াইফ।
মি.ওয়াইফঃআসসালামু আলাইকুম।ভালো আছেন?
তিতাসঃজি
…আপনারা ভিতরে আসুন।
ওরা ভিতরে ঢুকলো।
মিনিস্টার ঃ আশা করি আপনারা পার্টি ইনজয় করছেন?
তিতিরঃজি স্যার আমরা ঠিক আছি।
শুভঃ তিতির চলো একটু নাচি।
তিতিরঃনা আমি নাচবো না।
শুভঃ আরে চলো তো।
তিতিরকে টেনে নিয়ে গেলো।
তিতাস এর তা মোটেও ভালো লাগলো না।খুব রাগ লাগছিলো।
নীলঃপ্রিয়া কিছু মনে না করলে চলো আমরা একটু ডান্স করতে পারি?
প্রিয়াঃসিউর স্যার।
নীল আর প্রিয়া ওদিকে নাচছে আর শুভ এবং তিতিরও নাচছে।
তিতাস দেখছে আর ফুলছে।
নাচতে নাচতে শুভর একটা কল আসে তাই শুভ চলে যায়। তিতির ডান্স ফ্লোরে একা একা নাচছিল। তিতাস তিতির এর কাছে এলো।
তিতাসঃমেই আই?(হাত তিতির এর দিকে বাড়িয়ে)
তিতির হেসে হাত বাড়ালো।
ডান্স ফ্লোরে গান বাজতে লাগলো।
” kese kahoo ishq meh tere kitna hoo betaab meh.
Akho se akho meh leke churao tere waste…..
…………..
.……………
Vaja tum hoo
Oooooooo
Vaja tum hooooo”
হটাৎ তিতাস দেখলো তিতির খুব আনকমফারটেবল ফিল করছে।
তিতাসঃআর ইউ অলরাইট তিতির?
তিতিরঃআসলে স্যার আমার. …আমার শা..শাড়ির পিন খুলে গেছে।
তিতাসঃওয়াট!!!!
তিতিরঃস্যার প্লিজ কিছু করেন।
তিতাসঃ আচ্ছা দাড়াও।।
তিতাস মিনিস্টার এর ওয়াইফ এর কাছে গেলো তিতাসঃম্যাম
…জি??
…আসলে…তিতাস সব কথা ওনাকে বললো।
….আরে সমস্যা নাই তিতির তুমি আসো আমার সাথে আমার রুমে চলো।
তিতিরঃওকে ম্যাম।
তিতির চলে গেলো ওনার সাথে।
মি.ওয়াইফ ঃএটা আমার রুম তুমি এখানে ঠিক করে নাও কেউ আসবেনা।
তিতিরঃওকে ম্যাম।
কিছুটা সময় পর তিতির শাড়ি ঠিক করে পার্টিতে চলে এলো।
মিনিস্টার ঃআসুন আপনারা চলুন আজ আপনাদের সাথে ডিনার করবো আর কথা বলবো।
সবাই ডাইনিং টেবিলে গেলো।
মিনিস্টার ঃতো অফিসার্স আপনাদের কথা আজ শুনি। আপনাদের কার কি ইচ্ছা আছে?
অফিসার তিতির আপনি শুরু করুন।
তিতিরঃআমার ইচ্ছা আমার দেশের সেবা করা।দেশের দুশমনদের দমন করা আর এই লক্ষে আমি সিবিআই এ এসেছি।
এরপর সবাই সবার ইচ্ছা প্রকাশ করলো।
সবার শেষে তিতিরকে প্রশ্ন করা হলো।
তিতিরঃআমার ইচ্ছা? আসলে ঢাকার উত্তরায় একটা জায়গা নিয়েছি সেখানে একটা আলিশান ঘর বানাবো আর বাবা মাকে উপহার দিবো। টাকা জমাচ্ছি তার জন্য😊
মিনিস্টার ঃখুবই ভালো।
অনেক সময় থাকার পর ওরা সবাই চলে আসলো গাড়ির পাশে এসে
নীল ঃতোমরা যাও আমি একটু পরে আসবো।একটা কাজ আছে।
তিতিরঃওকে।
প্রিয়াঃতিতির তুই যা আমি আজ আপুর বাসায় যাবো।
তিতিরঃহটাৎ?.
প্রিয়াঃএমনি যেতে মন চাইলো।
তিতিরঃওহহহহ।
আকাশঃআমিও যেতে পারবোনা ম্যাডাম তার বাসায় যেতে বলেছে।
তিতাসঃতুমিও??
আকাশঃহুমমৃ
ওরা সবাই চলে গেলো।
তিতিরঃশুভ এবার তুইও কি যাবি?
শুভঃ আসলে আমাকেও যেতে হবে হটাৎ আমার এক বন্ধু ফোন করেছে।একটা জরুরী কাজ আছে। তাই আমিও যাচ্ছি। বাই।
শুভ চলে গেলো।
কি আর করা তিতির আর তিতাস গাড়িতে উঠে পড়লো।
তিতাস গাড়ি চালাচ্ছে।
তিতিরঃধন্যবাদ স্যার।
তিতাসঃকেনো?
তিতিরঃআজ পার্টিতে আপনি যদি…
তিতাসঃআরে কি বলো আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি।তেমন কিছু না।
তিতির হালকা হাসলো।
তিতির প্রকৃতি দেখতে ব্যসত হয়ে গেলো।আর তিতাস তিতিরকে দেখতে লাগলো।
তিতাসঃ আচ্ছা তিতির তুমি কখনো কারোর প্রেমে পড়েছো?বা কাউকে ভালেবেসেছো?
তিতির অবাক হয়ে তিতাস এর দিকে তাকালো?
তিতাসঃনা এমনিই বললাম। বলো
তিতির ঃ(হালকা হেসে) জি স্যার আমি প্রেমে করেছি ভালোও বেসেছি।
তিতির এর কথা শুনে তিতাস এর মনে ব্যাথা লাগলো।
.
.
চলবে………………………..
লিখেছেনঃ নিলাঞ্জনা রহমান