রাতে…..
তিতাস এর বাসায়……….
আফতাব সাহেব তার স্টাডি রুমে বসে কাজ করছে ফাইল নিয়ে।
তিতাসঃআসতে পারি?
আফতাবঃচলে আয়।এটা তোর বাসা অফিস না তাই পারমিশন নেওয়ার কিছু নাই।বুঝলি?
তিতাস চেয়ারে বসতে বসতে বললো তা তো বুঝলাম। বাবা আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
আফতাবঃবল।
তিতাসঃবাবা তুমি যে টিম 6 তৈরী করছো তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তিতির?ঐ মেয়ে কেনো? একটা বাচাল মেয়ে।
আফতাবঃকেনো তিতির কি করেছে?
তিতাসঃকি করেনি বলো?এরপর তিতাস সব বললো। সব শোনার পর আফতাব হাসতে লাগলো 😂😂😂😂
তিতাসঃবাবা তুমি হাসছো?.😒😒
আফতাবঃ ওকে হাসলাম না।আসলে তিতির এমনই।মেয়েটার বাচ্চামি আছে।দুষ্টামি করে।কথায় কথায় মজা করে তবে ও কাজের প্রতি অনেক সিরিয়াস,প্রত্যেকটা কেস খুবই বিচক্ষনতার সাথে সলভ করেছে।কখনো কাজে হ্যালাফ্যালা করেনি। শুন আমরা ওকে CBI তে এমনে এমনে রাখিনি।ওর যোগ্যতা অনুযায়ী রেখেছি।আমরা যে প্রফেশনে আছি তা একটা কঠোর পেশা আর তিতির সে পেশাকে আপন করেছে আর আনন্দের সাথে তা করছে। আর এজন্যই আমি ওকে টিমে রেখেছি।আর একজন সিবিআাই হেড হিসেবে আমি ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিয়েছি।আর তুমি যেহেতু ওর সিনিয়র তোমার দায়িত্ব সব মানিয়ে গুছিয়ে চলা।আশা করি তুমি বুঝতে পারছো।
তিতাসঃজি বাবা।
তিতাস চলে গেলো……
পরেরদিন…….সবাই অফিসে এসেছে আর এখান থেকেই মিনিস্টার এর র্যালির ভেনু তে যাবে।
সবাই তাদের রিভলভার, বুলেট সব রেডি করছে,সবাই লকার রুমে তাদের নিজেদের সব জিনিস নিচ্ছে।
এমন সময় তিতাস রুমে আসলো………
ওকে গাইস তোমরা সবাই রেডি?
সবাই বলে উঠলো ইয়েস স্যার।
তিতাসঃতাহলে চলো।
সবাই নিচে নেমে গেলো। গাড়িতে উঠলো….
তিতাস গাড়ি চালাচ্ছে। পাশে তিতির বসলো আর মাঝের সিটে নীল আর প্রিয়া আর শেষ সিটে আকাশ আর শুভ।
কতক্ষন পর তারা ভেনু তে পৌছালো।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে সামনে গেলো।
তিতাসঃহ্যালো স্যার!!
মিনিস্টার ঃহ্যালো আপনারা?
তিতাসঃআমরা সিবিআই থেকে এসেছি। স্যার আপনাকে বলেছে হয়তো?
মিনিস্টার ঃওহহহজ হ্যা। অফিসার আফতাব বলেছে আমাকে তো আপনাদের পরিচয়?
তিতাসঃআমি সিনিয়র অফিসার তিতাস,ইনি অফিসার নীল,অফিসার আকাশ,অফিসার শুভ,অফিসার প্রিয়া আর অফিসার তিতির।
তিতিরঃআমার নামটা সবার লাস্টে বললো তাও পেঁচার মতো মুখ করে শেওড়া গাছের ১৫ নম্বর পেতনির ২০ নম্বর বফ।😤😤😤😤
তিতাসঃমিস তিতির কিছু বললেন??
তিতিরঃনা না স্যার আমি কি বলবো হিহিহি😅😅😅😅😅
তিতাসঃ😕😕😕😕
মিনিস্টার ঃতো আমি আসি আপনারা থাকেন আমি আসলে একটু কাজ করছি।
তিতাসঃওকে স্যার।
মিনিস্টার চলে গেলো।
তিতাসঃওকে গাইস তোমরা আ্যলার্ট হয়ে যাও। চারপাশে নজর রাখো।কোনো সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জানানো হোক। তোমাদের সবার ইয়ার ফোন কাজ করছে তো?
ইয়েস স্যার!!!
আচ্ছা তিতির, নীল আর আমি স্টেজ এর চারদিকে থাকবো। শুভ আর আকাশ এনট্রি গেট এ থাকো আর প্রিয়া তুমি সবার দিকে খেয়াল রাখো।
ওকে স্যার।
সবাই যার যার কাজে চলে গেলো।
অনুষ্ঠান শুরু হলো।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মিনিস্টারকে ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর জন্য লোক উঠলো। এদিকে তিতাস আর বাকি সবাই সব কিছু দেখছে আর নজর রাখছে।হঠাৎ তিতাস এর নজর মিনিস্টার এর কোর্ট এর উপর পড়া লাল ডট এর উপর পড়লো।সঙে সঙে তিতাস লাল ডটের উৎস খুজলো আর তার চোখ ভেনুর ঠিক পাশের বিল্ডিংয়ে গেলো। আর দেখলো একজন লোক রাইফেল হাতে মিনিস্টারকে শুট করার ট্রাই করছে।
তিতাস একবার মিনিস্টার এর দিকে তাকালো একবার শ্যুটার এর দিকে।
তিতাস দৌড় দিলো স্টেজ এর দিকে। ঐ দিকে লোকটিও শ্যুট করে দিলো তিতাস দৌড়ে গিয়ে মিনিস্টার কে ধাক্কা মারলো। আর দুজনে পড়ে গেলো।
সবাই গুলির শব্দে ভয় পেয়ে গেলো আর অনুষ্ঠানে হইচই শুরু হয়ে গেলো।সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে।
তিতাসঃস্যার আপনি ঠিক আছেন তো?
মিনিস্টার ঃ হুমম আমি ঠিক আছি।তিতাস উঠে দাড়ালো আর বিল্ডিংয়ের দিকে তাকালো শ্যুটারটা তখনো দাড়িয়ে ছিলো।তিতাস এর দিকে নজর পড়তেই দৌড় দিলো।
তিতাসও দৌড় দিলো।তিতাস এর পিছনে তিতির আর নীলও দৌড় দিলো।
আর বাকিরা জনতাদের হইচই সামলাতে লাগলো।
তিতাস দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে লোকটিকে দেখতে পেলো।তিতাস আরো জোড়ে দৌড়াতে লাগলো।এদিকে তিতির আর নীলও দৌড়াচ্ছে।
দৌড়াতে দৌড়াতে লোকটি একটা গলিতে ঢুকে গেলো। তিতাসও ঢুকে পড়লো।নীলও তাই করলো।তিতির কি মনে করে গলিতে না ঢুকে সাইড দিয়ে চলে গেলো অন্য গলিতে।।
লোকটি দৌড়াচ্ছে আর বার বার পিছনে তাকাচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে তাকানোর কারনে হটাৎ করে কেউ তাকে লাথি মারলো আর ও খেয়াল করতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলো।
লোকটি সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে।
তিতির সামনে দাড়িয়ে আছে।তিতির শর্টকাট দিয়ে জলদি চলে এসেছে।
লোকটি উঠে তিতির কে মারতে লাগলে তিতিরও মারতে লাগলো হটাৎ মারতে মারতে লোকটা তিতিরকে রাস্তার পাশে থাকা কাঁচের ভাঙা টুকরা দিয়ে মারতে লাগলে তিতির হাত দিয়ে তা ধরে ফেলে।
তিতির এর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।তবুও তিতির প্রাণপন চেষ্টা করছে নিজেকে ঠিক বাঁচানোর। হুট করে কে এসে লোকটিকে লাথি মারে।। লোকটি ছিটকে পড়ে যায়।তিতির সামনে তাকাতেই দেখে তিতাস দাড়িয়ে আছে।
তার পিছনে নীল। তিতাস এসে লোকটিকে মারতে শুরু করলো আর নীল তিতির এর কাছে এসে তার হাতে রুমাল বেধে দিলো।
তিতাস লোকটিকে মারতে মারতে লোকটির কলার ধরে বসালো।
তিতাসঃবল!!!কে বলেছে তোকে এসব করতে বল!!!আমি জানি ডেভিল বলেছে৷ বল ডেভিলকে?বল!
লোকটি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।
তিতাস আবার বললো-বল কে ডেভিল।
লোকঃআমি জানি না।
তিতাসঃশুন ভালোই ভালোই বলছি বল। নাহলে আমরা এতো নির্দয় হতে পারি তুই বুঝতেও পারবিনা।থার্ড ডিগ্রি টর্চার করবো।
লোকটি খুব জোড়ে হাসতে লাগলো
তোমরা কখনো ডেভিল এর খোজ পাবেনা। কেউ বলবেনা ডেভিল কে?
আমিও না হাহাহা!!বলে হুট করে নিজের গলার লকেটে খুলে মুখে পুড়ে নিলো।
তিতাসঃএই!!!!তিতাস চেষ্টা করেও লকেটটা মুখ থেকে সরাতে পারেনি। আর লোকটার নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
তিতাসঃসিট!!!!ড্যাম ইট।ডেভিল এর সম্পর্কে আজ ও জানতে পারলাম না ড্যাম ইট।মাটিতে জোড়ে পাঞ্চ দিলো।
তিতাসরা এম্বুল্যান্স কল করে লোকটিকে পোস্ট মর্টাম এর জন্য পাঠালো আর ওরা ভেনুতে গেলো।
মিনিস্টার ঃধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে আজ আপনারা না থাকলে আমি তো……
তিতাসঃনো স্যার এটা আমাদের ডিউটি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
মিনিস্টার ঃনো নো তোমরা যা করেছো তা প্রশংসার উপযোগী।আমি তোমাদের এই কাজের জন্য একটা পুরুষ্কার দিতে চাই।
তিতিরঃনা স্যার আমাদের কোনো পুরুষ্কার লাগবেনা।
মিনিস্টার আচ্ছা কোনো পুরুষ্কার দিলাম না তবে সামনের শুক্রবার আমার বাড়িতে একটা গেট টুগিদার রাখা হয়েছে আমি চাই তোমরা ওখানে আসবে আমি না শুনবোনা।
তিতাসঃওকে স্যার আমরা আসবো।
মিনিস্টার ঃ😊😊😊😊😊😊
ওরা সবাই হেড কোয়াটারে আসলো।
তিতির তার ডেস্কে বসে তার হাতে ব্যান্ড্যাজ করছিলো।
তিতাস পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় দেখলো তিতির এক হাত দিয়ে ব্যান্ডেজ করার ট্রাই করছে কিন্ত পারছেনা।
তিতাসঃআমি কি সাহায্য করতে পারি?
তিতিরঃওহহহ স্যার আপনি। না আসলে ব্যান্ডেজ করার ট্রাই করছিলাম।লাগবে না স্যার আমি পারবো।
তিতাসঃমিস তিতির আপনি বেশি কথা বলেন।বলে তিতাস তিতির এর সামনের চেয়ারে বসে পড়লো আর তিতির এর হাত নিজের হাতে নিয়ে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।
তিতাসঃআপনি তখন কাঁচটা ছেড়ে দিতেন তাহলে এতো ব্যাথা পেতেন না।
তিতিরঃস্যার আর যদি ছেড়ে দিতাম তাহলে লোকটা পালিয়ে যেতো আর আমি তা কিভাবে হতে দি।
তিতাসঃতাই বলে নিজের ক্ষতি করে? এই নাও ব্যান্ডেজ শেষ।
তিতিরঃস্যার যেদিন প্রথম এই জবে জয়েন্ট করেছি সেদিন ই নিজের জীবনকে বলে দিয়েছি আমি তোর কেউ না।যদি কখনো এমন কোনো সময় আসে নিজের দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি দিতে হয় তাহলে আমি পিছ পা হবো না।দেশের সামনে কেউ না নিজের জীবনও না।
স্যার আমি আসি!
তিতির চলে গেলো।
তিতাস তখনো বসে আছে।আজ তিতির এর নতুন রূপ দেখলো।
তিতাসঃবাবা ঠিকই বলেছিলো। তিতির আসলেই এই কাজের যোগ্য।
তিতাস একটা টেডি স্মাইল দিলো।কারন আজ তিতিরকে দেখে তিতাস এর ভালো লাগলো।
কেনো জানি অন্য রকম ফিল হলো।
চলবে…………………..
লিখেছেনঃ নিলাঞ্জনা রহমান