কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯ সালের ২৪ মে – ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার এবং প্রবন্ধকার। তার বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়, যার কারণে তার ডাকনাম ছিল “দুখু মিয়া”। নজরুলের বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর, তিনি পড়ালেখা ছেড়ে লেটোর দলে যোগ দেন, যেখানে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরে, এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ার পর, পুনরায় চুরুলিয়ার রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য।
যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা স্থানে অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। নজরুলের সাহিত্য কর্মে সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান পেয়েছে। তার সাহিত্যকর্ম রাবীন্দ্রিক যুগে উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বৈচিত্র্যময়। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, এবং ‘প্রলয়শিখা’। তিনি ‘সাপ্তাহিক লাঙল’ এবং দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। নজরুলের সাহিত্য কর্মে বিদ্রোহের চেতনা, মানবিকতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়বস্তু প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার সাহিত্য কর্ম এবং সংগীত আজও বাংলার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।