গৃহত্যাগী জোছনা বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ
প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই
গৃহত্যাগী হবার মত জ্যোৎস্না কি উঠেছে ?
বালিকা ভুলানো জ্যোৎস্না নয়।
যে জ্যোৎস্নায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে-
ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ !
নবদম্পতির জ্যোৎস্নাও নয়।
যে জ্যোৎস্না দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন-
দেখ দেখ নীতু চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর !
কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জ্যোৎস্না নয়।
যে জ্যোৎস্না বাসি স্মৃতিপূর্ন ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে।
কবির জ্যোৎস্না নয়। যে জ্যোৎস্না দেখে কবি বলবেন-
কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ !
আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য বসে আছি।
যে জ্যোৎস্না দেখামাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে-
ঘরের ভেতরে ঢুকে পরবে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব-
পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে।
চারদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ ডাকবে- আয় আয় আয়।
নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করুন
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী লেখক, যিনি বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ এবং নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। গীতিকার ও চিত্রশিল্পী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল, এবং তিনি সর্বোচ্চ সফলতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অসামান্য বই, নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, এবং ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রগুলোও সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। তাঁর নাটকগুলো যেমন ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘আজ রবিবার’, ‘কোথাও কেউ নেই’, এবং ‘অয়োময়’ আজও দর্শকদের মনে অমলিন।
হুমায়ূন আহমেদ হিমু, মিসির আলি এবং শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক। তাঁর মাস্টারপিসগুলোর মধ্যে ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, এবং ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, এবং জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা অর্জন করেছেন। তাঁর কাজগুলো দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।