এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক (১৯৭১-১৯৮১)
স্বাধীনতার প্রথম দশকে আমাদের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সংঘাত, অভ্যুত্থান, এবং পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের মধ্যে মে. জে. মইনুল হোসেন চৌধুরীর “এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক (১৯৭১-১৯৮১)” বইটি উল্লেখযোগ্য। এই গ্রন্থে লেখক সেনা কর্মকর্তাদের সেইসব অভিজ্ঞতার নিরপেক্ষ ও দায়বদ্ধ মূল্যায়ন করেছেন, যা তাকে করেছে সময়ের প্রকৃত সাক্ষী।
অন্যান্য গ্রন্থের লেখকদের মতো লেখক নিজে ঘটনাপ্রবাহের সরাসরি ভিকটিম বা বেনিফিসিয়ারি ছিলেন না। ফলে তিনি তাঁর দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা নির্মোহভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। একজন আইনানুগ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে, তাঁর এই দায়িত্বশীল অভিজ্ঞতা বইটিকে অন্য গ্রন্থ থেকে আলাদা করে তুলেছে।
বইটির বিষয়বস্তু
“এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক (১৯৭১-১৯৮১)” বইটি লেখকের সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতা, স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক চালচিত্রের বাস্তব ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার তুলে ধরেছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লেখক “এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক (১৯৭১-১৯৮১)” বইটিতে ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখেছেন।
যখন রচনাটি ধারাবাহিকভাবে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, তখন এটি সবার আগ্রহ ও মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ, এটি শুধু স্বাধীনতার প্রথম দশকের সামরিক ইতিহাস নয়, পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চালচিত্রও ফুটিয়ে তোলে। বইটি পাঠকদের স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাস বুঝতে সহায়তা করবে।
লেখকের সংক্ষিপ্ত জীবনী
মে. জে. মইনুল হোসেন চৌধুরী ১৯৪৩ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য তিনি বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুল হোসেন চৌধুরী স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রাখেন। ১৯৮২ সালে তিনি ফিলিপাইনে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর কর্মজীবনের এই বহুমুখী অভিজ্ঞতা বইটির মূল্যায়নে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।