উইটনেস টু সারেন্ডার – সিদ্দিক সালিকের প্রামাণ্য বিবরণ
উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপটে রচিত। সিদ্দিক সালিক, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে, উইটনেস টু সারেন্ডার বইটিতে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী তুলে ধরেছেন।
সিদ্দিক সালিক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের আগে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক ছিলেন এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে কিছুদিন যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে উন্নীত হওয়ার পর, তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের জনসংযোগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তিনি নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং উইটনেস টু সারেন্ডার বইটিতে সেসব ঘটনার নিরপেক্ষ বিবরণ তুলে ধরেছেন। বইটিতে সিদ্দিক সালিক অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের শোষণের সত্যতা এবং তার একজন অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন। বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধানী পাঠকদের জন্য অমূল্য দলিল।
সিদ্দিক সালিক – একজন সাক্ষী হিসেবে
১৯৩৫ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মানজিলা নামের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সিদ্দিক সালিক। ইংরেজি সাহিত্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়াশোনা করে, প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তবে পরবর্তীতে সাংবাদিকতা ও সম্প্রচার মাধ্যমে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৯ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানে গণসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার পতনের পর, যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে দুই বছর ভারতে বন্দি জীবন কাটান। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানে ফিরে সেনাবাহিনীর চাকরিতে পুনরায় যোগদান করেন এবং ১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হকের প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৫ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেয়ে ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (ISPR) এর মহাপরিচালক হন। ১৯৮৮ সালে এক রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হক এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্নল্ড লুইস রাফেলের সঙ্গে একই সাথে নিহত হন। তাঁকে তাঁর নিজ গ্রামে সামরিক সম্মানে দাফন করা হয়।
সিদ্দিক সালিক উর্দুতে ছয়টি এবং ইংরেজিতে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’, যেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-অনুসন্ধানী পাঠকদের জন্য অপরিহার্য এক সম্পদ।
উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থের গুরুত্ব
উইটনেস টু সারেন্ডার শুধুমাত্র একটি বই নয়, এটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অমূল্য প্রামাণ্য দলিল। বইটিতে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধের ঘটনা এবং পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের বিষয়গুলো অত্যন্ত বাস্তবভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উইটনেস টু সারেন্ডার বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহী পাঠকদের জন্য অপরিহার্য, কারণ এতে মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কারণ, যুদ্ধের সময়কার পরিস্থিতি, এবং পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ ও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।