রাইফেল রোটি আওরাত বইয়ের ভূমিকা:
“রাইফেল রোটি আওরাত” বইটি শহীদ আনোয়ার পাশার রচিত এক অমর কাহিনী। বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এক উজ্জ্বল অধ্যায়, যেখানে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ অসাধারণ লড়াই করেছে। এই লড়াই বাঙালির ঐতিহ্য, বর্তমানের গৌরব এবং ভবিষ্যতের প্রেরণা হয়ে আছে।
আজ আমরা যেন সেই সংগ্রামের মহত্ত্ব ভুলতে বসেছি। এই বিস্মৃতির পেছনে রয়েছে লড়াইয়ের লক্ষ্য পূরণে আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু, ব্যর্থতা কোন জাতির চিরকালের সত্য ইতিহাস হতে পারে না। “রাইফেল রোটি আওরাত” উপন্যাসের মাধ্যমে আনোয়ার পাশা সেই সংগ্রামের মহান ত্যাগ এবং নিষ্ঠাকে স্মরণ করিয়ে দেন। উপন্যাসটি পাঠকদের চেতনাকে উজ্জীবিত করে, আমাদের চিত্তের পবিত্রতা রক্ষায় অবদান রাখে।
এই উপন্যাসটি ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসে লেখা হয়। লেখক শহীদ আনোয়ার পাশা ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক এই রচনা তাঁর জীবনের প্রতিফলন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্যনিষ্ঠা হয়ে থাকবে।
আনোয়ার পাশা: শহীদ ও লেখক
আনোয়ার পাশা, “রাইফেল রোটি আওরাত” উপন্যাসের লেখক, ১৯৩২ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার ডাবকাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন এবং ১৯৫৮ সালে পাবনা জেলার এডওয়ার্ড কলেজে বাংলার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সালে শহীদ হন। আনোয়ার পাশার সাহিত্যকর্মে দেশাত্মবোধ, মননশীলতা, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনা ফুটে ওঠে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে “নীড় সন্ধানী”, “নিশুতি রাতের গাথা”, “নদী নিঃশেষিত হলে”, এবং “উজ্জয়িনী ও অন্যান্য কবিতা”।
শহীদ আনোয়ার পাশা ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার্স থেকে পাক-হানাদার বাহিনীর এদেশীয় সহযোদ্ধা আলবদরের সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৯ বছর। তিনি স্ত্রী এবং দুই ছেলে রেখে গেছেন।
উপসংহার
“রাইফেল রোটি আওরাত” উপন্যাসটি আমাদের জাতির মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি। এটি শুধুমাত্র একটি গল্প নয়, এটি আমাদের সংগ্রামের এক মহাকাব্য। আনোয়ার পাশার এই অমর রচনা আমাদের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে, আমাদের ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শন করে। তাঁর এই উপন্যাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং আমাদের স্মৃতিতে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।